More

Social Media

Light
Dark

সে এক মাতারা তাণ্ডব

৯ মার্চ, ১৯৯৬। বিশ্বকাপের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে ফয়সালাবাদে মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ড। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের এক ঐতিহাসিক দিন। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবার সেমিফাইনালে পা দেয় শ্রীলঙ্কা, অপরদিকে প্রথমবার লজ্জাজনক হারে সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি ইংলিশরা।

টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ওপেনিং জুটিতে ৩১ রান তোলে দুই ইংলিশ ওপেনার। এরপর মাইক আথারটন ফিরলে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দ্রুতই ফিরেন গ্রায়েম হিকও। ৫৮ রানে ২ উইকেট থেকে ৮ রানের ব্যবধানে আউট রবিন স্মিথ! ৬৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন বিপর্যয়ে ইংলিশরা। চতুর্থ উইকেটে ফিল ডিফ্রেইটাসের সাথে ২৮ রানের জুটির পথে গ্রাহাম থরপ ফিরলে ৯৪ রানে পতন ঘটে চতুর্থ উইকেটের। একপ্রান্তে ডিফ্রেইটাস থিতু হলেও আরেকপ্রান্তে বাকিরা ছিলেন আসা যাওয়ার মিছিলে!

অ্যালেক স্টুয়ার্ট, জ্যাক রাসেলরা দ্রুত ফিরলে ১৭১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে তখন ব্যাকফুটে ইংলিশরা। একপ্রান্তে দুর্দান্ত ব্যাট করা ফিল ডিফ্রেইটাস ব্যক্তিগত ৬৪ বলে ৬৭ রানে ফিরলে ১৭৩ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে তখন চরম বিপাকে ইংল্যান্ড।

ads

অষ্টম উইকেটে ডারমট রিভ ও ড্যারেন গফের ৬২ রানের অসাধারণ জুটিতে আবারও ঘুরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত রিভের ৩৫ ও গফের অপরাজিত ২৬ রানে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৩৫ রান সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড। শ্রীলঙ্কার পক্ষে দুই স্পিনার – মুত্তিয়া মুরালিধরন ও কুমার ধর্মসেনা ২টি করে উইকেট শিকার করেন।

জবাবে লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে শুরুতেই রমেশ কালুভিতারানাকে হারিয়ে বিপদে পড়ে শ্রীলঙ্কা। এরপর শুরু হয় তাণ্ডব, সনাথ জয়াসুরিয়ার মাতারা তাণ্ডব।

সেদিন ব্যাট হাতে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন জয়াসুরিয়া। মাতারা হারিকেনের তাণ্ডবময় ব্যাটিংয় লণ্ডভণ্ড ইংলিশদের ব্যাটিং শিবির। দ্বিতীয় উইকেটে জয়াসুরিয়ার ঝড়ো ফিফটিতে ১০১ রানের জুটি পায় লঙ্কানরা। মাত্র ৩০ বল ফিফটিতে করে বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়েন তিনি। সেদিন ইংলিশ বোলারদের উপর ধ্বংসযজ্ঞ চালান এই বিধ্বংসী ওপেনার। ১১৩ রানে ৪৪ বলে ৩ ছক্কা ও ১৩ চারে ৮২ রানের তাণ্ডবময় ইনিংস শেষে ফিরেন জয়াসুরিয়া। এই তারকার মারকাটারি ব্যাটিংয়েই যেন নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল লঙ্কানদের জয়।

ব্যক্তিগত ৮২ রানে রিভের বলে বোল্ড হলেও নো বলের কল্যাণে বেঁচে যান জয়সুরিয়া। এরপর ৮২ রানে ওই ওভারেই রিভের বলে স্টাম্পিং হন সনাথ। এরপর অরবিন্দ ডি সিলভা, আসাঙ্কা গুরুসিনহার ব্যাটে সহজেই জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে যায় লঙ্কানরা। সিলভা ৩১ ও গুরসিনহার ৪৫ রানের পরেও ১৯৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে তখন শ্রীলঙ্কা।

শেষ ৫ উইকেটে দরকার ছিলো মাত্র ৩৯ রানের। জয়সুরিয়ার তাণ্ডবে লঙ্কানদের হাতে ছিল যথেষ্ট ওভার। হাসান তিলকারত্নে ও রোশান মাহানামার ব্যাটে বাকি পথটা সহজেই পাড়ি দেয় লঙ্কানরা। ৫৬ বল বাকি থাকতে ৫ উইকেটের দুর্দান্ত জয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা।

জয়াসুরিয়া ও গুরুসিনহার ১০১ রানের জুটি ছিলো বিশ্বকাপ ইতিহাসে লঙ্কানদের দ্বিতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি। ওই জয় ছিলো দেশের বাইরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার প্রথম জয়। সনাথ জয়াসুরিয়ার ওই তাণ্ডবময় ব্যাটিংয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপের সেমিতে পা দেয় লঙ্কানরা। অপরদিকে, বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথমবার সেমিতে উঠতে ব্যর্থ হয় ইংলিশরা। বাকিটা ইতিহাস! সেবার সবাইকে চমকে দিয়ে বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে নেয় লঙ্কানরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link