More

Social Media

Light
Dark

লড়াইয়ের ‘মানে’

আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে সবুজে ঘেরা দেশ সেনেগাল, রাজধানী ডাকার থেকে প্রায় ৫০০ মাইল দূরে ছোট্ট শহর ‘সিধেউ’। দুপাশে বাদামগাছের জঙ্গল, পাশ দিয়ে বয়ে গেছে গ্যাম্বিয়া নদী।

এর মাঝেই দুচালার ছোট্ট ঘরে শুয়ে স্বপ্ন দেখত ছেলেটা। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে উঠে জাপটে ধরত দুবছর আগে জন্মদিনে উপহার পাওয়া ফুটবলটাকে। সকালে ফের হাড়ভাঙা খাটুনি, বাদাম রপ্তানির অফিসে কাজ করে অঞ্চলের সকলেই।

ওর বাবা-মা ও ব্যতিক্রম নয়।মা-কে সাহায্য করতে গিয়ে পড়াশোনা আর হয়ে ওঠেনি ছেলেটার; তবু সে স্বপ্ন দেখতো।

ads

রাতে নিজের ছেঁড়া ফুটবল বুটজোড়া পায়ে গলিয়ে নিয়ে দেয়ালে বল মেরে চলত বল রিসিভের অনুশীলন, কাজের ফাঁকে নদীর চড়ায় বল বসিয়ে চলত শ্যুট প্র্যাকটিস। ইউরোপীয় ফুটবল জৌলুস থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে অন্ধকারাচ্ছন্ন আফ্রিকার বুকে বেড়ে উঠছিল একটা স্বপ্ন- নাম ‘সাদিও মানে’।

১৫ বছর বয়সে যখন প্রবল দারিদ্রকে সঙ্গী করেই কাকা তাকে নিয়ে এলেন রাজধানী ডাকারের ফুটবল ক্যাম্পে তখন ট্রেনার তাঁর বুটজোড়া দেখে প্রশ্ন করে বসলেন, ‘এই বুট পরে তুমি খেলবে? এর ৭০ ভাগ অংশই তো ছেঁড়া।’

১৫ বছরের ছেলেটা অকপট উত্তর দিয়েছিল, ‘আমার সর্বশ্রেষ্ঠ ও একমাত্র বুট এটি, নিজেকে প্রমাণের জন্য এই বুটজোড়াই যথেষ্ট।’

দু-দলে ভাগ করে প্র‍্যাকটিস ম্যাচ খেলালেন কোচ।

না! ম্যাচ শেষে আর পিছন ফিরে তাকাতে হল না সেনেগালের সেই ছোট্ট ছেলেটাকে। প্রথমবার ফুটবল তাকে ফিরিয়ে দিল অনেককিছু। রেডবুল সালজবার্গ-সাউদ্যাম্পটন হয়ে লিভারপুল।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যখন তারকা খচিত বার্সাকে অ্যানফিল্ডে চূর্ণ করে দিল ছেলেটা, যখন দুর্ধর্ষ বায়ার্ণের জার্মান দম্ভকে মাটিয়ে মিশিয়ে দিল তখন যেন তার মুখে হাজার ওয়াটের আলো।

নিজের সেনেগালের গ্রামে গরীব শিশুদের জন্য স্কুল বানাচ্ছেন মানে, নিজের আয়ের একটা বড় অংশ অকাতরে দিয়ে দিচ্ছেন আফ্রিকার অন্ধকার দেশগুলোর শিক্ষার উন্নতির খাতে। আজও দামী গাড়ি-রিসর্টে ভ্যাকেশন যাপন ছেড়ে মানে মৌসুম শেষে মায়ের কাছে যান, নিজের গ্রামের মানুষের কাছে যান।

নিজের প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচের অর্থে পেট ভরে খাওয়ান আফ্রিকার বাচ্চাদের।মিডিয়ার ভিড় থেকে লুকিয়ে কাজ করে যান সাদিও মানে। ভাঙা মোবাইল ফোনে কাজ চালিয়ে নেন, কেবল আফ্রিকার মুখে হাসি ফোটাতে। ইউরোপীয় ফুটবলের এমন সুপারস্টার বিরল, মেনে নিয়েছেন স্বয়ং ইউর্গেন ক্লপও। সাইডলাইনের বল বয়কে ডেকে দিয়ে দেন নিজের জার্সি।

সরল দুটো চোখ, উজ্জ্বল ফুটবলদুনিয়ায় অন্ধকার আফ্রিকার বুক থেকে ঠিকরে আসছে আলোর খেলা। মেসি-রোনালদোদের ফুটবলগ্রহে হয়তো ফিঁকে হয়ে যাচ্ছে সেই রঙ, তবু স্বপ্নের রংমশালরা কবেই বা স্থায়িত্বের পরোয়া করেছে?

যতদিন ফুটবল থাকবে ততদিন সাদিও মানেরা থাকবেন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link