More

Social Media

Light
Dark

খোঁজে না আমার কি ব্যথা

টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন ইংল্যান্ডের কলিন কাউড্রি। ওডিআইতে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে রিচার্ড হ্যাডলি খেলেছিলেন ১০০ ম্যাচ এবং টি-টোয়েন্টিতে শোয়েব মালিক প্রথম ক্রিকেটার গড়েছিলেন এমন কীর্তি। এরপরে আরও অনেক ক্রিকেটার এই মাইলফলক অতিক্রম করলেও ইতিহাস বিশেষ ভাবে মনে রাখবে এদেরকেই।

ইতিহাস আরেকজনকেও মনে রাখবে, মনে রাখতে হবে কারণ ক্রিকেট ইতিহাসের ‘প্রথম’ হিসেবে তিন ফরম্যাটে আলাদাভাবে শততম ম্যাচ খেলার গৌরব অর্জন করেছেন একজন ক্রিকেটার। তার নাম ‘লুটেরু রস পৌতোয়া লোট টেলর’।

রস টেলর নামে পরিচিত এই কিউই ব্যাটসম্যান মাস কয়েক আগে গুছিয়ে রেখেছেন ব্যাট-প্যাড। আর হাতে তুলে নিয়েছেন কলম। সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে তাঁর আত্মজীবনী ‘রস টেলর ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট’। আর এই বইতে টেলর তুলে ধরেছেন অবিশ্বাস্য এক সত্য।

ads

নিউজিল্যান্ডের ড্রেসিং রুমে বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছেন রস টেলর। কিউই দলের সতীর্থ ক্রিকেটার এবং স্টাফদের কাছ থেকে বর্ণবাদী মন্তব্য পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি। এছাড়া প্রশ্ন তুলেছেন দেশের ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ববোধ নিয়ে।

রস টেলরের মতে, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের কর্তারা চাইলে আরো অনেক পলিনেশিয়ান প্রতিভা তুলে আনতে পারে। মায়ের দিক থেকে রস টেলর সামোয়ান ঐতিহ্যের অংশ। সেখান থেকে উঠে এসে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন নিউজিল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দলে। কিন্তু সেটা হয়তো সবাই ভাল ভাবে নিতে পারেনি। তাই ড্রেসিং রুমে প্রায়শই কটু কথা শুনতে হয়েছে তাকে। নিজের লেখা ‘রস টেলর ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট’ সেসব গল্প তুলে এনেছেন টেলর – যেসব গল্পে বলা হয়েছে কিভাবে শ্বেতাঙ্গ কিউইরা অন্যদের ছোট করেছে।

একদিন আমার এক সতীর্থ বলে ওঠে, ‘রস তুমি অর্ধেক ভাল মানুষ। কিন্তু কোন অংশটা ভাল? আমি নিশ্চিত তুমি জানো না আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি।’ – এভাবেই একটি বর্ণবাদী ঘটনা নিজের বইতে তুলে আনেন রস টেলর।

তিনি আরো যোগ করেন, ‘আমি নিশ্চিত ছিলাম সে কি বোঝাতে চেয়েছে (রস টেলরের মাতা এবং পিতার ভিন্ন নাগরিকত্ব)। অন্যান্য শ্বেতাঙ্গ কিউই সদস্যরাও এমন মন্তব্যে কোন প্রতিবাদ করেনি। তারা এটা সহজভাবে নিয়েছে এবং মজা হিসেবে ধরে নিয়েছে। তারা একজন শ্বেতাঙ্গ হিসেবে কথাগুলো গ্রহণ করেছে। তাদেরকে উদ্দেশ্যে করেও বলা হয়নি। তাই কেউ বিপক্ষে মন্তব্য করেননি – এমনকি তার ভুল ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টাও করেনি।’

রস টেলর মনে করেন প্রত্যেক্যের উচিত যে কারো জাতিগত পরিচয় নিয়ে ওঠা নেতিবাচক মন্তব্যগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। এই ঘটনা টেলরের মনে বেশ বিরূপ ধারণা সৃষ্টি করেছে।

রস টেলর তাঁর বইতে আরো উল্লেখ করেন যে, অনেকে এসব ঘটনা এড়িয়ে যায়। তারা মনে করে, প্রতিবাদ করলে এই ইস্যু আরো বড় হবে। নিরীহ কোন মজাকে হয়তো বর্ণবাদ ভাবার কারনে লজ্জিত হবে। তাই চামড়া মোটা করে এসব সয়ে যাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ উপায়। কিন্তু এমনটা কি উচিত?

এছাড়া কিউই স্টাফরা ভাবে যে, রস টেলরের মত ভিন্ন জাতিগত পরিচয়ের ক্রিকেটাররা উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। তাই টেলরও তাদের বর্ণবাদী নয় এমনটা ভাবতে রাজি নন। আসলে শ্বেতাঙ্গরা অন্যের জায়গায় নিজেকে দাঁড় করিয়ে ভাবে না বলেই দাবি করেছেন রস টেলর। তারা টেলরকে কখনো ‘আমাদের একজন’ মনে করেনি; বরং বাইরের কেউ ভেবেছে ৷

প্যাসিফিক জাতিগোষ্ঠী নিউজিল্যান্ডের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৮ শতাংশ। দেশের আদিবাসীদের একজন হয়েও রস টেলর এতটা উচ্চতায় উঠেছেন যেখানে আর কেউ যেতে পারেননি। বারবার বিপর্যয়ের মুখে ব্ল্যাক ক্যাপসদের হয়ে হাল ধরেছেন। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপে সাঁকো হয়ে সমৃদ্ধ করেছেন দলের ব্যাটিংকে।

২০০৬ সালে এসেছিলেন এক টুকরো সম্ভাবনা নিয়ে, সে সম্ভাবনা’র কলি থেকে ফুল হয়ে ফুঁটেছেন; এরপর নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তি হয়ে ফিরে গিয়েছেন ‘লুটেরু রস পৌতোয়া লোট টেলর’। আর সাথে করে নিয়ে গিয়েছেন বর্ণবাদী আচরণের কিছু স্মৃতি আর বুকভরা ক্ষত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link