More

Social Media

Light
Dark

ইতিহাসের চূড়ায় রোনালদো

পেলে, ম্যারাডোনা, লিওনেল মেসি; সর্বকালের সেরা হওয়ার জন্য কতো জনের লড়াই। কিন্তু একটা জায়গায় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো চলে গেলেন ধরাছোয়ার বাইরে।

জাতীয় দলের জার্সি হয়ে গেলো রাতে ১০৯ গোল করে ফেললেন। ছুঁয়ে ফেললেন সর্বোচ্চ গোলদাতা আলী দাঈকে। এখন কেবলই সবাইকে ছাপিয়ে ওপরে উঠে যাওয়ার পালা। এই প্রতিযোগিতাতে তার যেনো কোনো প্রতিদ্বন্ধীই নেই।

রাতটা অবশ্য এতোটা সহজ ছিলো না। অঘটন ঘটতে গিয়েও যেন ঘটলো না। জার্মানি, পর্তুগাল নাকি সবাইকে চমকে দেয়া হাঙ্গেরি, ম্যাচ শুরুর আগে খাতাকলমে তিন দলের সামনেই সুযোগ ছিল পরের রাউন্ডে যাবার। দুটো ম্যাচই শেষ হয়েছে একই ফলাফলে। কিন্তু ম্যাচের ফলাফল ফুটবলপ্রেমীদের উল্লাসকে বিন্দুমাত্র দমাতে পারেনি।

ads

ঘরের মাঠে ২০১৬ ইউরোতে দারুণ ফুটবল খেলছিল ফ্রান্স। স্বাগতিক দর্শক-সমর্থক থেকে শুরু করে প্রায় সবাই ধরে নিয়েছিল এবার চ্যাম্পিয়ন হতে যাচ্ছে গ্রিজম্যানের ফ্রান্স। কিন্তু ফাইনালে সবাইকে অবাক করে দিয়ে শিরোপা জিতে নেয় পর্তুগাল।

পরবর্তীতে বিশ্বকাপ জিতলেও ঘরের মাঠে সেই হারের দু:খ এখনো ভুলতে পারেনি ফ্রান্স। এবারের ইউরোতে তাই পর্তুগাল ম্যাচের আগে ফ্রান্স দিয়ে রেখেছিল যুদ্ধের হুংকার। হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে মুখোমুখি দুই দলের এই ম্যাচে প্রথমার্ধের নায়ক অবশ্য রেফারি মাতেও লাহোজ।

ভুল পেনাল্টি, অদ্ভুত কার্ড, বাজে ফাউল সবই দিয়েছেন তিনি। দুদলের কারোরই যাতে মন খারাপ না হয় সেজন্য দুই দলকেই পেনাল্টি দিয়েছেন একটি করে। সেখান থেকে গোল করেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এবং করিম বেনজেমা। সতীর্থ বেনজেমাকে পেনাল্টি ছেড়ে দিয়ে দারুণ টিমম্যানের পরিচয় দিয়েছেন গ্রিজম্যান।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বেনজেমার দারুণ গোলে লিড নেয় ফ্রান্স। পর্তুগালের চোখেমুখে তখন বিদায়ের আশংকা কারণ অন্য ম্যাচের ফলাফল যে তাদের বিপক্ষে। ৬০ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় পেনাল্টি পেল পর্তুগাল, পাহাড়সম চাপ নিয়ে পেনাল্টি নিতে আসলেন রোনালদো।

কিন্তু, রোনালদো যে স্নায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানেন, লরিসের উল্টো দিক দিয়ে বলকে পাঠিয়ে দিলেন জালের ঠিকানায়। জোড়া গোলের পাশাপাশি ১০৯ গোল নিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় আলি দাঈর পাশে বসলেন তিনি। পাশাপাশি এবারের ইউরোর সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি।

১৯৫৪ সালের ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে হার এখনো ভুলে পারেনি হাঙ্গেরি, গ্রুপ পর্বে যাদের ধ্বংস করেছিল ৮-৩ গোলে সেই তাদের কাছে ফাইনালে ৩-২ গোলে হার ছিল অচিন্ত্যনীয় ঘটনা। সেই ফাইনালের পর হাঙ্গেরির ফুটবল কেবল পেছন দিকে হেঁটেছে আর জার্মানি এগিয়েছে তরতরিয়ে।

কিন্তু, ধীরে ধীরে পুরনো রূপ ফিরে পাচ্ছে হাঙ্গেরি। এবারে ইউরোতে জার্মানির সাথে মুখোমুখি হবার আগে তাই ছড়িয়েছে চাপা উত্তেজনা। জার্মানদের হারাতে পারলেই যে মিলবে পরের রাউন্ডের টিকেট, পাশাপাশি কিছুটা হলেও প্রলেপ লাগবে পুরনো ক্ষতে।

ম্যাচের এগার মিনিটেই দারুণ এক গোলে এগিয়ে যায় হাঙ্গেরি। স্যালাইয়ের দারুণ এক পাস থেকে ডাইভিং হেডে গোল করেন শ্জলাই। পুরো স্টেডিয়ামে তখন পিনপতন নীরবতা। ম্যাচের পরের গল্পটা পুরোটাই জার্মানির, আক্রমণের পর আক্রমণ শানিয়েছে কিন্তু ভাঙতে পারছিল না রক্ষণদেয়াল। অবশেষে ৬৭ মিনিটে হ্যাভার্টজের গোলে সমতা ফেরে জার্মানি। কিন্তু মুহুর্তের মাঝেই আবারো লিড নেয় হাঙ্গেরি।

কিক অফ থেকে শ্জলাইয়ের ভাসানো পাস পেয়ে গোল করেন শাফার। জার্মানদের চোখেমুখে তখন ২০১৮ বিশ্বকাপের মতো গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায়ের আশংকা। জোয়াকিম লো’র শেষটা কি তবে বিয়োগাত্মক হবে? হতে দিলেন নাহ একজন, লিওন গোরেৎজকা। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নামা এই মিডফিল্ডারের ৮৪ মিনিটের গোলেই হৃদয় ভাঙে হাঙ্গেরির।

গ্রুপ অব ডেথ থেকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্সআপ হয়ে পরের রাউন্ডে উঠলো ফ্রান্স এবং জার্মানি। সেরা চার তৃতীয় দলের একটি হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে পর্তুগালও। দ্বিতীয় রাউন্ডে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ সুইজারল্যান্ড। অন্যদিকে জার্মানি এবং পর্তুগালের প্রতিপক্ষ যথাক্রমে ইংল্যান্ড এবং বেলজিয়াম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link