More

Social Media

Light
Dark

সুপার সিক্সের মারপ্যাঁচ ও বাংলাদেশের সেমির রাস্তা

প্রথমবারের মত অনূর্ধ্ব-১৯ নারী বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে আইসিসি। ১৬ দলের আয়োজনে বিশ্বকাপ এখন গ্রুপ পর্ব পেড়িয়ে সুপার সিক্সের খেলা শুরু হওয়ার অপেক্ষায়। তবে প্রথমবার বলেই কিনা, এ টুর্নামেন্টের সুপার সিক্সের ফরম্যাট পুরোটাই আলাদা। অন্তত এমন ফরম্যাটে আইসিসি কখনোই কোনো টুর্নামেন্ট আয়োজন করেনি। বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে এ টুর্নামেন্টের ফরম্যাটে। কী সেই জটিলতা, ফরম্যাটের মারপ্যাঁচটা চলুন একটু বুঝে নেওয়া যাক। একই সাথে বাংলাদেশের জন্য এমন নিয়মে সেমিফাইনালের রাস্তা কঠিন হয়ে গেল কিনা সেই বিশ্লেষণও থাকছে।

প্রথমত, এই টুর্নামেন্টে ৪ গ্রুপে ভাগ হয়ে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। এখন ৪ গ্রুপ থেকে সুপার সিক্স কিভাবে নির্ধারণ করা হল? মূলত সুপার সিক্স বলা হলেও পরবর্তী রাউন্ডে খেলবে মোট ১২ টি দল। অর্থাৎ প্রতি গ্রুপ থেকে ৩ টি করে মোট ১২ টি দল সুপার সিক্সের জন্য কোয়ালিফাই করেছে। এখান থেকে আবার দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে ৬ টি করে দল খেলবে। আইসিসি এই ধাপটাকেই সুপার সিক্স বলছে। এখন সেমিফাইনালের ৪ দল নির্ধারিত হবে এই দুই গ্রুপ থেকে প্রতি গ্রুপের সেরা দুই দল নিয়ে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সুপার সিক্সে কি দলগুলো নিজেদের গ্রুপে থাকা প্রত্যেক দলগুলোর সাথে খেলবে? উত্তর হচ্ছে, না। সুপার সিক্সে ওঠা প্রত্যেক দল খেলবে দুটি করে ম্যাচ। এখন এই দুটি ম্যাচ কিভাবে নির্ধারিত হবে? কিছুটা জটিলতা আছে এখানেই। আইসিসি মূলত সুপার সিক্সের ফরম্যাট সাজিয়েছে দুটি গ্রুপে। প্রথম গ্রুপে থাকছে প্রথম রাউন্ডের খেলায় গ্রুপ ‘এ’  আর গ্রুপ ‘ডি’ থেকে আসা ৩ টি করে মোট ৬ টি দল। এভাবে দ্বিতীয় গ্রুপে প্রথম রাউন্ডের খেলার গ্রুপ ‘বি’ আর গ্রুপ ‘সি’ মিলিয়ে থাকছে সেরা ৬ টি দল।

ads

এখন দলগুলো দুটি করে ম্যাচ খেলবে প্রথম রাউন্ডে খেলা দুই প্রতিপক্ষ আর অপর গ্রুপে নিজেদের পজিশনে থাকা দল বাদ দিয়ে। অর্থাৎ প্রথম রাউন্ডে নিজ গ্রুপে থাকা দল গুলো সুপার সিক্সে এসে নিজেদের মধ্যে ম্যাচ খেলবে না। একই সাথে যেহেতু প্রথম রাউন্ডের খেলায় দুটি গ্রুপ একসাথে হয়ে সুপার সিক্স রাউন্ড হবে তাই, এ দুই গ্রুপের চ্যাম্পিয়নরা সুপার সিক্সে নিজেদের মধ্যে খেলবে না।

আরেকটু সহজ করে বুঝালে, সুপার সিক্সের গ্রুপ ১ এ খেলছে গ্রুপ এ আর গ্রুপ ডি থেকে আসা ৬ টি দল। এখন গ্রুপ এ থেকে আসা ৩ টি দল আর নিজেদের মধ্যে খেলবে না। তারা খেলবে গ্রুপ ডি থেকে আসা দলগুলোর সাথে। আর এর পাশাপাশি গ্রুপ পর্বে একটা দল যে পজিশনে থেকে শেষ করেছে অপর গ্রুপের সেই একই পজিশনে থাকা দলের সাথে খেলবে না। একটা উদাহরণ দিলে এই জটিলতা আরেকটু পরিস্কার হওয়া যাবে।

এবারের বিশ্বকাপে সুপার সিক্সের গ্রুপ ১ এ আছে গ্রুপ এ থেকে আসা বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া আর শ্রীলঙ্কা। আর বাকি ৩ টি দল দল এসেছে গ্রুপ ডি থেকে আসা ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং সংযুক্ত আমিরাত। এখন বাংলাদেশ যেহেতু অস্ট্রেলিয়া আর শ্রীলঙ্কার সাথে আগেই খেলেছে তাই তারা আর সুপার সিক্সে নিজেদের মধ্যে খেলবে না। একই ভাবে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত নিজেদের মধ্যে খেলবে না। আরেকটা ব্যাপার হল গ্রুপ এ থেকে চ্যাম্পিয়ন দল গ্রুপ বি এর চ্যাম্পিয়ন দলের সাথে খেলবে না। একই সাথে দুই গ্রুপের রানার্স আপ আর তৃতীয় হওয়া দলগুলো একে অপরের সাথে খেলবে না।

সেই হিসেবে গ্রুপ এ থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাংলাদেশ তাই গ্রুপ ‘ডি’ এর চ্যাম্পিয়ন ভারতের সাথে খেলবে না। তারা খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকা আর সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে। একই ভাবে গ্রুপ ‘এ’ থেকে রানার্সআপ হওয়া দল অস্ট্রেলিয়া গ্রুপ ‘ডি’ এর রানার্সআপ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলবে না। তারা খেলবে ভারত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে। একই নিয়মানুযায়ী গ্রুপ ‘এ’ থেকে তৃতীয় হওয়া দল শ্রীলঙ্কা অপর গ্রুপের তৃতীয় হওয়া দল সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে খেলবে না। তারা খেলবে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এভাবে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ ২ দল ঠাই পাবে সেমিফাইনালে।

মজার ব্যাপার হল, এই পয়েন্ট গণনায় গ্রুপ পর্বের পয়েন্টও বিবেচিত হবে। কিভাবে? এই বিশ্বকাপে সুপার সিক্সে উঠতে না পারা দলগুলোর সাথে জয়ের পয়েন্ট বাদ দিয়ে বাকি পয়েন্ট দলগুলোর সাথে যুক্ত হবে। যেমন বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বের ৩ টি ম্যাচেই জয় পেয়েছে। কিন্তু গ্রুপ এ তে থাকা যুক্তরাষ্ট্র সুপার সিক্সে কোয়ালিফাই করতে পারেনি। তাই ঐ ম্যাচ জয়ের পয়েন্ট বাদ দিয়ে বাকি ২ ম্যাচে পাওয়া ৪ পয়েন্ট বাংলাদেশের পাশে যুক্ত হবে। একইভাবে গ্রুপ ‘এ’ থেকে রানার্স আপ দল অস্ট্রেলিয়ার পাশে যুক্ত হয়েছে ২ পয়েন্ট।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এখান থেকে বাংলাদেশের সেমিফাইনাল যাওয়ার রাস্তাটা কতটা কঠিন? কঠিন না বলে বরং এটাকে সহজ বলাই শ্রেয়। কারণ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কারণে এর মধ্যেই ৪ পয়েন্ট পাওয়া হয়ে গিয়েছে। এখন দক্ষিণ আফ্রিকা আর সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারালেই কোনো প্রকার হিসেব নিকাশ ছাড়াই সেমিতে উঠবে বাংলাদেশ। আর একটি ম্যাচে জয় পেলে তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য দলগুলোর দিকে।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের যা পারফরম্যান্স তাতে এ দুটি দলের সাথেই বাংলাদেশের জেতা সম্ভব। অতি নাটকীয় কিছু না হলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জেতার পাল্লাটাই ভারি। একমাত্র বাঁধা হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এবারের বিশ্বকাপটাও হচ্ছে তাদের মাটিতে। তাই স্বাগতিক দেশকে হারানো কিছুটা চ্যালেঞ্জই বটে। তবে সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে অন্য জায়গায়। এ বিশ্বকাপ শুরুর আগে প্র্যাক্টিস ম্যাচে এই দক্ষিণ আফ্রিকাকেই হারিয়েছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী দল। তাই সেমিতে যাওয়ার পথটা বাংলাদেশের জন্য এখন পর্যন্ত আশা জাগানিয়া। এখন দেখার পালা, আইসিসির এমন নিয়মের বেড়াজাল ভেদ করে বাংলাদেশের বাঘিনীরা কতদূর পাড়ি দেয়।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link