More

Social Media

Light
Dark

রিয়াদে ব্রাত্য রাব্বি!

এই কিছুদিন আগের কথা। টানা ব্যর্থতার কারণে ওয়ানডে ফরম্যাট থেকে অবসর নিলেন অস্ট্রেলিয়ার সাদা বলের অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। অধিনায়কত্বের সুবিধা নিয়ে চাইলেই ২০২৩ বিশ্বকাপ খেলতে পারতেন। কিন্তু তিনি আর দলের উপর চাপ বাড়াতে চাইলেন না।

তরুণ কোনো ব্যাটারের দলে আসার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেন না। একেই বলে চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটারের মানসিকতা। কিন্তু উপমহাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতিতে এমন দৃশ্য দেখা যায় না বললেই চলে। ক্রিকেটকে বড্ড ভালবেসে বাইশ গজ আঁকড়ে রাখে নাকি আত্মোপলব্ধির বড় অভাব- সেটিই প্রশ্নের বিষয়।  

শেষ এক বছরে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পরিসংখ্যান ছিল রীতিমত হতাশাজনক। ফরম্যাট টা যখন টি-টোয়েন্টি তখন সে দৈন্যদশা আরো ফুটে ওঠে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অবশ্য তাতে চিন্তার কোনো পরিবর্তন হয়নি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ‘অভিজ্ঞতা’ নামক অদ্ভুত এক মানদন্ডকে বিবেচনা করে রিয়াদের পাশে আছেন অধিনায়ক, সাথে টিম ডিরেক্টারও।

ads

মাহমুদউল্লাহর মতো ক্রিকেটারকে তো আর ‘নো’ বলা যায় না। টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনের এ কথাতেই স্পষ্ট, বিশ্বকাপ দলে রিয়াদকে চাওয়া, না চাওয়ার মাঝে বিভেদ থাকলেও শেষ পর্যন্ত দলে তিনি থাকবেন। 

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ থাকলে দলের ক্ষতিটা কোথায় হচ্ছে? রিয়াদ ৬ এ খেলেন। বিশ্বকাপেও বোধহয় এ পজিশনেই খেলবেন। কিন্তু মিডল অর্ডারে এ জায়গাটায় বহুদিন ধরে প্রস্তুত করা হচ্ছে ইয়াসির আলী রাব্বিকে।

সুযোগ পেয়েছেন কম৷ কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন৷ ঐ কম কিছু ম্যাচেই ওয়ানডে, টেস্ট দুই ফরম্যাটেই করেছেন ফিফটি। এখন রিয়াদের কারণে বিশ্বকাপ দল থেকে রাব্বি বাদ পড়লে ক্ষতিটা বাংলাদেশের, একই সাথে ক্ষতিটা তাঁরও। কারণ তরুণ কোনো ক্রিকেটারের পিক টাইম কাজে না লাগাতে পারলে সেই প্রসেসটাই অবান্তর হয়ে যায়।  

রিয়াদ, রাব্বি দুজনই যদি বিশ্বকাপ দলে টিকে যান তাহলে কি সমাধানের পথ আসবে? কখনোই না। রিয়াদ স্কোয়াডে থাকা মানে ঐ ৬ নম্বর পজিশনে রাব্বির সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা একই ভাবে কমে যাওয়া। এতে করে স্কোয়াডে ব্যাটিং ডেপথ বাড়ানো যায়। কিন্তু মাঠে তো স্কোয়াড খেলে না, একটা একাদশ খেলে। সেই একাদশে তাই সহজেই সুযোগ মিলবে না রাব্বির। রাব্বি সুযোগ পেলেই যে আমূল বদলে যাবে বাংলাদেশের ব্যাটিং পরিস্থিতি, তা নয়।

কিন্তু, রিয়াদ খেললেই যে ঐ জায়গাটায় নির্ভরতার দারুণ জায়গা তৈরি হবে, সে ভাবনার আকাশেও তো বড়সড় আশঙ্কা রয়েছে। তুলনামূলক তরুণ ক্রিকেটারেরই তাই সুযোগ পাওয়া উচিত সে জায়গায়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হয় উল্টোটা। অভিজ্ঞ ক্রিকেটার একদিন দারুণ কিছু করে দিবে, এই ভাবনার মাঝে কখন যে তরুণ ক্রিকেটারদের পিকটাইম বলি দিয়ে দেওয়া হয়ে যায়, সেটাই তারা বুঝে উঠেন না। 

অন্য আট দশটা দেশের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডের দিকে তাকালেই বুঝা যায়, মিডল অর্ডার ব্যাটার নির্বাচনের ব্যাপারে কতটা সতর্ক তারা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যে কোনো ম্যাচই নির্ধারণে বেশির ভাগ সময় ভূমিকা রাখে মিডল অর্ডারে ব্যাট করা ব্যাটাররা। 

এই কিছুদিন আগে হওয়া এশিয়া কাপ ফাইনাল ম্যাচের কথাই ধরা যেতে পারে। শ্রীলঙ্কার কোনো টপ অর্ডার দাঁড়াতেই পারেনি সেদিন। এমন সময় রাজাপাকসে যে রোলটা প্লে করলেন সেটাই বর্তমান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মূলমন্ত্র। অর্থাৎ দল বিপদে থাকলেও কাউন্টার অ্যাটাকে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

কারণ, ১২০ বলে ক্রিকেটে বিপদ সামলানো বলে কিছু নেই। বিপদ সামলে যদি কোনোভাবে ১৩০ পার করা যায়- এই মানসিকতায় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জেতা যায় না। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ঠিক এই মানসিকতায় আটকে থাকেন। তিনি গড়পড়তা রান করেন, কিন্তু তাতে দলের উপকার তো হয়ই না বরং একটা চাপ তৈরি হয়।  

এখন কথা হলো, ইয়াসির আলীই কি সমাধান? ব্যাপারটা এমন না আসলে। শ্রীলঙ্কার এই দলটা একেবারেই তরুণ একটা দল। গড়ে ২ বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতাও নেই কারো। কিন্তু তারা একসাথে ১২-১৫ মাস খেলেছে। সেই অভ্যস্ততা দলের কম্বিনেশনে যেমন মূখ্য ভূমিকা রেখেছে, তেমনি শিরোপা জেতার পিছনেও অনবদ্য কাজ করেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটেও ঠিক এমন তারুণ্য নির্ভর দল প্রয়োজন। সহসায় সফলতা হয়তো মিলবে না। কিন্তু এক সময় না এক সময় সাফল্য ধরা দিবেই।

এক সময় কোনো না কোনো ক্রিকেটারকে থামতেই হয়। সেটার জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা থাকতে হয়। যেটা বোধহয় বিসিবি কিংবা রিয়াদ- কারোরই নেই। আর এ কারণেই ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বাংলাদশে বের হতে পারে না৷ সে ব্যর্থতাকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান গতিতে চারপাশে ঘুরতে থাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট। 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link