More

Social Media

Light
Dark

জাদেজার বিকল্প কে!

আঘাতে আঘাতে শরীর চূর্ণ হলেও তীব্র দাঁতে দাঁত চাপা লড়াই করে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মহাকাব্যিক এক ড্র ক্রিকেট বিশ্বকে উপহার দিয়েছে ভারত।

ফলশ্রুতিতে আগের আহতদের সাথে নতুন করে ইনজুরিতে পরা ক্রিকেটারের তালিকা বাড়তে বাড়তে ভারতের স্কোয়াড এখন হাসপাতালের ওয়ার্ডে রূপ নিয়েছে। দুয়ারে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্রিসবেন টেস্ট ছাড়াও তো কড়া নাড়ছে ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ! তবে শক্ত পাইপলাইনের অধিকারী ভারতীয় টিমে তৈরি রিপ্লেসমেন্ট রয়েছে প্রায় সকল পজিশনেই। তবে দুটি পজিশনে সম্ভবত নেই কোনো তাৎক্ষণিক বিকল্প। তা হল রবীন্দ্র জাদেজা আর রবীচন্দ্রন শ্বিনের পজিশনে।

স্পেশালিস্ট স্পিনার হিসেবে গত ৫ বছর এই দু’জন মিলে খেলা ৭৭ টেস্টের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ টেস্ট খেলেছেন কুলদীপ যাদব, কয়টি জানেন? মাত্র ৬টি! এর থেকেই বোঝা যায় যে ভারতীয় দলে জাদেজা-অশ্বিন জুটির কোন বিকল্প নেই। এখন আশ্বিন তাও ফিজিওথেরাপি নিয়ে পিঠের ব্যথা সারিয়ে ব্রিসবেন টেস্টে মাঠে নামার ব্যাপারে আশাবাদী। তবে জাদেজা বৃদ্ধাঙ্গুলির হাড় ডিসলোকেট হয়ে যাওয়ার কারণে শুধু সিরিজ নয়, মাঠের বাইরেই চলে গেছেন কয়েক মাসের জন্য। ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ড সিরিজও খেলছেন না ‘জাড্ডু’ বলাই বাহুল্য।

ads

কিন্তু তিনি না খেললে ইন্ডিয়া পড়ে যাবে মহা সমস্যায়। ঘরের মাটিতে স্পিনার তো লাগবেই। এখন তাঁর জায়গায় দলে আনতে হবে একেবারেই আনকোরা কাউকে। তাও আবার জাদেজা তো শুধুই স্পিনার নয়, দলে তাঁর মত বহুমুখী ভূমিকা রাখা একজন ‘স্পিনিং অলরাউন্ডার’-ই চাইবে টিম ম্যানেজমেন্ট। হাত ঘুরানোর পাশাপাশি লোয়ার মিডল অর্ডারে  ব্যাটও যিনি চালাতে জানেন ঠিকঠাক। আবার যার রয়েছে টেস্ট টেম্পারামেন্টও। এই মর্মে ভারত তাদের বিশাল ঘরোয়া ও জাতীয় দলের আশেপাশে থাকা প্লেয়ার পুল থেকে যে কয়েকজনকে বিবেচনা করতে পারে তাঁদের নিয়েই আজকের এই আলোচনা।

  • জলজ সাক্সেনা

প্রথমেই আসে ভারতের ঘরোয়া সার্কিটের এই অভিজ্ঞ সেনানীর নাম। ৩৪ বছর বয়সী সাক্সেনা কখনো ইন্ডিয়ার জার্সি গায়ে জড়াননি, তবে ফার্স্ট ক্লাসে রয়েছে তাঁর বিস্তর অভিজ্ঞতা। ১২৩ ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে ৩৪৭ উইকেট ভরেছেন, ২১ বার পাঁচ উইকেট ও ১০ বার ১০ উইকেট শিকার রয়েছে তাঁর নামের পাশে। গত পাঁচ রঞ্জি আসরের তিনটিতেই ৪০টির বেশি করে উইকেট নিয়েছেন। ব্যাট হাতেও কীর্তি কম নয়, ৬৩৩৪ রান ৩৫ গড়ে, ১৪ টি সেঞ্চুরি। বোঝা যাচ্ছে বোলিং ব্যাটিং মিলিয়ে খুবই কার্যকর এক লঙ্গার ভার্শন অলরাউন্ডার জলজ। দেশের মাটিতে তো অবশ্যই!

দেখার বিষয় এটাই যে, নির্বাচকরা কি তাঁর বুড়ো হাড়ের ভেলকির উপর ভরসা রাখবেন? নাকি লং-টার্ম এর কথা চিন্তা করে কোন তরুণ তুর্কি খুঁজে নিয়ে আসবেন?

  •  শাহবাজ নাদিম

যদি বাঁহাতি স্পিনারটা একমাত্র ক্রাইটেরিয়া হয়, শাহবাজ নাদিম এই মুহূর্তে সম্ভবত জাদেজার সেরা রিপ্লেসমেন্ট! বলা হয় গত কয়েকবছর ধরে ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটেরই সেরা স্পিনার তিনি। ১১৭ ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচে ৪৪৩ উইকেট নাদিমের। ইনিংসে চার উইকেট নিয়েছেন ২৭ বার, পাঁচ উইকেট ১৯ বার! এমনকি ভারতের হয়ে টেস্ট ক্যাপ পরার সৌভাগ্যও হয়েছে তাঁর ২০১৯ সালে রাঁচি টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এর পাশাপাশি ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে ১৮ ম্যাচে ৭৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি।

বয়স ৩১, সেটা তেমন কোন বাধা নয়। বাধা একটাই, তাঁর ব্যাটিং। তিনি জাদেজার মাপের তো দুরে থাক তাঁর ধারেকাছের মাপের ব্যাটসম্যানও নন। মাত্র ১৪.২৪ ফার্স্ট ক্লাস ব্যাটিং গড়ের নাদিমের রয়েছে মাত্র একটি সেঞ্চুরি! এখানেই আসলে তিনি বাতিল হয়ে গেলেও যেতে পারেন।

  • অক্ষর প্যাটেল

গুজরাটের এই তরুণকে আমরা সবাই কমবেশি চিনি। বহুদিন ধরেই সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভারতীয় জাতীয় দলে আসা যাওয়া করছেন। খুব যে বড়কিছু করতে পেরেছেন তা নয়। তবে ২০১৯-২০ রঞ্জি ট্রফিতে ৬ ম্যাচে ২৭ উইকেট আছে এই বাঁহাতি স্পিন-অলরাউন্ডারের। সব মিলিয়ে ৩৯ প্রথম ক্লাস ম্যাচের ক্যারিয়ারে ১৩৪ উইকেট নিয়েছেন ও ১৬৬৫ রান করেছেন ২৬ বছর বয়সী আক্সার। পাশাপাশি ভারতীয় এ দলেরও নিয়মিত সদস্য। বয়সটাও পক্ষে আছে।

সমস্যা হল ২০১২ সালে প্রথম শ্রেণিতে একজন স্পিনারের জন্য ৩৯ ম্যাচের ক্যারিয়ার খুব বড় বা বর্ণাঢ্য কোন ক্যারিয়ার নয়। ‘শর্ট ফরম্যাট স্পেশালিস্ট’-এর একটা তকমা ইতোমধ্যে গায়ে সাঁটা! জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা আক্সারকে হয়ত বাড়তি সুবিধা দেবে। কিন্তু সাদা বলের ক্রিকেট আর লাল বলের ক্রিকেটে যে অনেক পার্থক্য এটা কিন্তু মাথায় রাখা প্রয়োজন।

  • জয়ন্ত যাদব

জয়ন্ত যাদবকেও সবার মনে থাকার কথা। ২০১৬ তে স্পেশালিস্ট স্পিনার হিসেবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই অভিষেক হয় ভিশাখাপত্তনমে। কিন্তু নিজের অফ স্পিন বোলিংয়ের চেয়ে হইচই ফেলেছিলেন ব্যাটিং দিয়েই। ভারতের ইতিহাসে প্রথম ৯ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে করেছিলেন সেঞ্চুরি; মুম্বাই টেস্টে।

এর ঠিক আগের ম্যাচে মোহালিতে করেছিলেন ফিফটি। একজন কার্যকর অলরাউন্ডার হিসেবে তাঁকে ভাবতে মাত্রই শুরু করেছিল নির্বাচকরা, কিন্তু ইঞ্জুরিতে ইঞ্জুরিতে এরপর দলে ব্রাত্য হয়ে গেলেন। ৬১ ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচে ১৬২ উইকেটের পাশাপাশি ২৬.৪৮ গড়ে ২১৭২ রানও আছে জয়ন্তের। আছে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরিও। কিন্তু তাঁর মূল শত্রু তো ইনজুরি। ইনজুরির কারণে গত দুই সীজনে মাত্র আটটি ম্যাচ খেলতে পেরেছেন রঞ্জিতে। পারফর্মেন্সও অত ভালো নয়। নির্বাচকদের তাঁকে সিলেক্ট করার জন্য পর্যাপ্ত কারণ তিনি আদৌ দিতে পেরেছেন কিনা প্রশ্ন থাকবে।

এদের বাইরে ক্রুনাল পান্ডিয়া, ওয়াশিংটন সুন্দর, রাহুল চাহার, শ্রেয়াস গোপালদের মত অপশন আছে বৈকি। তবে এরা কেউই অভিজ্ঞতা বা পারফর্মেন্স বিচারে উপরোক্ত চারজনের ধারেকাছে নেই। এখন দেখার বিষয় ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকরা কাকে বেছে নেয় রবীন্দ্র জাদেজার জায়গা পূরণে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link