More

Social Media

Light
Dark

রিয়ালের তারকাপ্রীতি ও ইউরোপিয়ান ট্রান্সফার মার্কেট

পিএসজির স্কোয়াড ছেড়ে কিলিয়ান এমবাপ্পে কেন মাদ্রিদে আসবে, এই প্রশ্নটি তোলা হচ্ছে এই যুক্তিতে – মেসি, রামোস, নাভাস, নেইমার, মারিয়া প্রায় প্রত্যেকেরই উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের অভিজ্ঞতা আছে, পাশাপাশি স্কোয়াড ডেপথ অনেক ভালো ও এমন দল নিয়ে আধিপত্যের সাথে লিগ ওয়ান জয় করা খুব কঠিন কিছু নয় (যদিও গত পাঁচ মৌসুমে পিএসজি তিন বার লিগ জিতেছে, সুতরাং অতি সন্যাসীতে গাঁজন নষ্টের উদাহরণ আমরা মূলত দেখে ফেলেছি) এবং স্বভাবতই লিগ জিতুক আর না জিতুক, এবার তাদের সবচেয়ে বড় ফোকাস থাকবে কেবল চ্যাম্পিয়নস লিগকে ঘিরে। আপাতদৃষ্টিতে এটাই ঠিক, কিন্তু গন্তব্য হতে পারে যখন রিয়াল মাদ্রিদ তখন যুক্তিগুলো আড়াল করতেই হয়।

ইউনাইটেডের হয়ে পরপর দুটো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলেও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো মাদ্রিদের প্রস্তাব ফেলে দিতে পারেননি। মাত্র দুই মৌসুম পূর্বে এসি মিলানকে চ্যাম্পিয়নস লীগ জেতানো, ব্রাজিলের হয়ে সদ্য কনফেডারেশন কাপ জেতা ও নির্বাচিত সেরা খেলোয়াড় রিকার্ডো কাকা নিজেই তৎকালীন সময়ে সিটির বড় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে মিলানে থাকার ঘোষণা দিলেও, কদিন পরেই ট্রফিলেস মাদ্রিদের ডাক আর ফিরিয়ে দিতে পারেননি।

জাভি আলোনসো এসেছিলেন, যিনি ইতোমধ্যেই লিভারপুলের হয়ে ইউরোপিয়ান মুকুট পড়েছিলেন। এরা তিনজনই একই মৌসুমে রিয়ালে এসেছিলেন। অথচ রিয়াল মাদ্রিদ ততদিনে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে প্রায় সাত মৌসুম হতে চললো! এমনকি এরা তিনজন যোগ দেয়ার আরো পাঁচ মৌসুম পর, এক যুগের প্রতীক্ষা শেষে রিয়াল পুনরায় শোকেসে ট্রফিটি তোলে।

ads

শুধু তাই নয়। ১৯৬৬ সালের পর ৩২ বছর লেগেছিলো আবারো জিততে৷ তাতে ইউরোপিয়ান ফুটবলে রিয়াল মাদ্রিদের শ্রেষ্ঠত্ব কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। তার প্রমাণ হলো, শতাব্দীর সেরা ক্লাবের মুকুট জয় করা। মজার ব্যাপার হলো, গত ২০ বছরের ব্যালন ডি অর জেতা খেলোয়াড়দের মধ্যে গুটিকয়েক বাদ দিলে, বাকি প্রত্যেকেই রিয়ালের জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন। স্বর্ণালি সময় ছিল নাকি ছিল না তাতে সেরা খেলোয়াড়দের মাদ্রিদ আগমনে খুব বড়ধরনের তফাৎ পড়েনি।

অনেকে বলছে রোনালদোর প্রস্থানের পর, কোথাও যেন ট্রান্সফার মার্কেটে রিয়াল হারিয়ে গেছে। তারা কিভাবে এমবাপ্পে সাইনিং করবে! কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়। হয়তো ম্যানেজমেন্ট রোনালদোর শূন্যতাকে মেনে নিয়েছে। সেটা পূরণে পাগলপ্রায় আচরণ করার কোনো সম্ভাবনা তারা দেখায়নি, এটা মাদ্রিদের ম্যাচুরিটি অথবা পেশাদার আচরণ।

তবে, মাদ্রিদ যাকে টার্গেট করেছে সেই ইডেন হ্যাজার্ড কিন্তু ঠিকই দলে এসেছে। আর চেলসিতে পরীক্ষিত হাজার্ড ছাড়া লেফটউইং এর জন্য তখন আর বড় কোনো অপশন ছিল না৷ মাদ্রিদ সেটাই করেছে। হাজার্ড চেলসিকে ইউরোপা লিগ জিতিয়ে, উড়ন্ত ফর্ম নিয়েই মাদ্রিদে যোগ দিয়েছিলেন। এখানে এসে পারফর্ম করতে পারে নাই, সেটা ভিন্ন আলাপ। মিলিতাওকে প্রায় ৫০ মিলিয়ন রিলিজ ক্লজ দিয়ে দলে নিয়ে এসেছিলো ম্যানেজমেন্ট।

ভিনিসিয়াস, রদ্রিগো ও রেনিয়িরি জেসুসের মতোন অনভিজ্ঞ তরুণদের জন্য ১২০ মিলিয়ন খরচ এবং লুকা জোভিচ ৬০ মিলিয়ন এর বিনিময়ে আসাটা শুধুমাত্র পারফরম্যান্স এর অভাবের কারণে চোখে পড়ছে না। দুই ব্যাকআপ ফুলব্যাক অদ্রিওজোলা ও মেন্ডির জন্য রিয়াল সর্বমোট খরচ করেছে ৭৮ মিলিয়ন! গত তিন মৌসুমে মাদ্রিদ ট্রান্সফার সিজনে আঁটঘাট বেঁধে নামেইনি, তারপরেও খরচের খাতায় হিসাব একেবারে কম না।

হাজার্ড, কর্তোয়া চেলসি ছেড়ে মাদ্রিদে এসেছেন। চেলসি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে গেছে৷ আলাবা দীর্ঘদিনের ক্লাব ছেড়ে এসেছেন, বায়ার্ন হয়তো রিয়ালের আগেই জিতবে। কিন্তু তাতে তাদের রিয়াল মাদ্রিদে এসে খেলার স্বপ্ন ভুলে হয়ে যায়নি।

আরেকটি বিষয় হল, আমার মনে হয় না মেসি কখনো ভেবেছেন আমি রোনালদো বা রামোসের সাথে খেলবো অথবা রামোস কিংবা রোনালদো ভেবেছেন মেসি বা নেইমারের সাথে একদিন খেলবেন। যদি এমন হতো তাহলে নেইমার বার্সা বা মারিয়া মাদ্রিদ ছাড়তেন না।

এখানে বিভিন্ন রকমের হিসাব নিকাশ ও পারিপার্শ্বিকতা থাকে। অনেক সময় তো খেলোয়াড়রা বাধ্য হয় নিজের অনিচ্ছার বিরুদ্ধে ক্লাব ছাড়তে বা উপায়ন্তর না দেখে অন্য ক্লাবে যোগ দিতে। আসলে প্রতিটা কোয়ালিটিফুল খেলোয়াড়ই চান, নিজের সর্বোচ্চ পারফর্ম দিয়ে নিজের ল্যান্ডমার্ক তৈরি করতে। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এমবাপ্পে নিশ্চয়ই চাইবেন রিয়াল মাদ্রিদের মতো একটি ক্লাবের পোস্টার বয় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে।

কিলিয়ান এমবাপ্পে হয়তো আসবেন, হয়তো কখনোই মাদ্রিদে আসবেন না৷ আবার চলে এলেও, সফল তো নাও হতে পারেন। রিয়াল মাদ্রিদ হয়তো আগামী দুই দশকেও ইউরোপ সেরা হবে না। কিন্তু তারকা খেলোয়াড়, রিয়াল মাদ্রিদ আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রোমান্স কেমন যেন, বারবার পূর্ণতা পায়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link