More

Social Media

Light
Dark

শাস্ত্রীয় রিপোর্ট কার্ড

বর্ণাঢ্য তাঁর ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ার। ৮০ টেস্ট ম্যাচে ১৫১ উইকেট। অপরদিকে রানের সংখ্যা ৩৮৩০। পরিসংখ্যানটি ভারতীয় কোচ রবি শাস্ত্রীর। খেলোয়াড়ী জীবনে তিনি ছিলেন একজন অলরাউন্ডার। ব্যাট আর বলে ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলকে সার্ভিস দিয়েছেন দীর্ঘ প্রায় এক যুগ (১৯৮১-৯২)। ১৯৯১ সালে ক্রিকেটকে বিদায় জানানো শাস্ত্রী ফিরে এলেন ২০১৭ সালে ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ হয়ে।

এর আগে অবশ্য শাস্ত্রী যুক্ত ছিলেন ক্রিকেট কমেন্ট্রির সাথে। ক্রিকেট কি অত সহজে ছেড়ে দেওয়া যায় বলুন! দলের ডিরেক্টর থেকে একেবারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মাঠের ক্রিকেটের সিদ্ধান্ত নেবার এবং দলকে সাজিয়ে গুছিয়ে রণক্ষেত্রে নামাবার দায়িত্ব পান শাস্ত্রী ২০১৭ সালের জুলাইয়ে। তারপর নীল জার্সিধারীদের ড্রেসিং রুমে রণক্ষেত্রের পরিকল্পনা করছেন শাস্ত্রী দীর্ঘ চার বছর।

শাস্ত্রীর জাতীয় দলের কোচিং ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সপ্তম আসরের মধ্য দিয়ে। ইতিমধ্যেই তাঁর স্থলাভিষিক্ত কে হবেন তা নির্ধারণ করে ফেলেছে বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)। তবে বিদায় বেলাটা খুব একটা সুখকর হলো না রবি শাস্ত্রীর। নিজের শেষ অ্যাসাইনমেন্টে ব্যর্থ হলেন তিনি। দলকে নিয়ে যেতে পারেননি অন্তত সেমিফাইনাল অবধি। তবে কি এই ব্যর্থতাই শাস্ত্রীর কোচিং ক্যারিয়ারের সারসংক্ষেপ?

ads

দীর্ঘ চার বছরের শাস্ত্রীর কোচিং ক্যারিয়ারে ভারত খেলেছে সব ফরম্যাট মিলিয়ে ১৮৩ ম্যাচ। ৫৩ হারের বিপরীতে তাঁর দলের জয়ের সংখ্যা ১১৮। প্রশংসনীয় নয় কি? যদি একটু আলাদা আলাদা ফরম্যাটের হিসেব টানা হয় তাহলে তাঁর সাফল্যের পাল্লাটা টি-টোয়েন্টির দিকেই খানিক ঝুকে থাকতে দেখা যায়। শাস্ত্রীর কোচিং আমলে ভারত আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে মোট ৬৫ টি যার ৪৩ টিতেই জয় পেয়েছে ভারত।

অপরদিকে ২০১৭-২০২১ এই চার বছরে ভারতের খেলা টেস্টের সংখ্যা ৪৩ টি। জয় ২৫ টি আর পাঁচটি ড্র বাকিগুলোতে হেরেছে টিম ইন্ডিয়া। ওয়ানডেতেও জয়ের পাল্লা ভারী রবি শাস্ত্রীর। ৫১ জয়ের বিপরীতে হার ২২ ম্যাচে। এখন বিবেচনা করুন রবি শাস্ত্রী সফল নাকি ব্যর্থ। দাঁড়ান! এখনই কোন সিধান্ত পৌছানের আগে বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে শাস্ত্রীর পরিকল্পনার ফলাফল কেমন ছিল তা জেনে নেওয়া যাক।

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দিয়েই শুরু করা যাক। দলে অলরাউন্ডার কিংবা ম্যাচ উইনিং ক্রিকেটারের অভাব হয়ত বোধ করেছে ভারত ক্রিকেট দলের সমর্থকেরা। কিন্তু আদৌ কি দলে ম্যাচ উইনার ছিলেন না? ছিলেন কি ছিলেন না সে তর্কে না জড়ানোই বোধহয় শ্রেয়। কিন্তু দলের পরিকল্পনা কিংবা প্রতিপক্ষকে পর্যালোচনা এবং সেই মাফিক একাদশ সাজানোর ঘাটতির ফলাফল তো সবার অজানা নয়। গুরুত্বপূর্ণ দুইটি ম্যাচে হেরে বিদায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়নদের।

ধারাবাহিক সফলতায় ভারত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠলেও জেতা হয়নি শিরোপা। ২০২১ সালে জুনের ১৮ তারিখে শুরু হওয়া ফাইনালে ভারত হেরেছিল নিউজিল্যান্ডের কাছে। ব্যাটিং ব্যর্থতায় মূলত হারতে হয় সেই মর্যাদার ফাইনাল। যদিও ফাইনালে ওঠার পথে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দু’বার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জিতেছেন, ইংল্যান্ডের মাটিতে ভাল করেছেন – সেই অর্জনগুলোও মাথায় রাখতে হবে।

২০১৯ এ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারত খেলেছিল রবি শাস্ত্রীর তত্ত্বাবধানে। সেই টুর্নামেন্টের প্রথম পর্বে দশ দলের মধ্যে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থেকে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করা ভারত নয় ম্যাচে জিতেছিল সাতটি পরিত্যাক্ত হয় একটি ম্যাচ। কিন্তু দাপটের সাথে প্রথম পর্বে খেলা ভারত হারিয়ে ফেলে নিজেদের মোমেন্টাম। হেরে যায় সেই নিউজিল্যান্ডের কাছে এবং বিদায় নেয় বিশ্বকাপ থেকে।

শাস্ত্রীর জয়ের রেকর্ড বেশ বলিষ্ঠ এবং প্রশংসনীয়। তবে বড় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তাঁর পরিকল্পনায় দেখা দিয়েছে ঘাটতি। যার ফলস্বরুপ এই যাত্রায় তাঁর ক্যাবিনেটটা বৈশ্বিক কোন শিরোপার অভাবে শূন্য পড়ে রইলো।

রবি শাস্ত্রী যখন দলের দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাচ্ছেন তখন টেস্ট, টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে র‍্যাংকিংয়ে ভারতের অবস্থান যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ। বিচারের দায়িত্ব পাঠকদের উপর ছেড়ে দিয়ে আলোচনার ইতি টেনে নিচ্ছি এবারের মতো। কি মনে হয় রবি শাস্ত্রী কি সফল নাকি ব্যর্থ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link