More

Social Media

Light
Dark

রশিদ লতিফের ভারতীয় ভাই

মনে পড়ল দুই ভাইয়ের কথা। রশিদ লতিফ আর তাঁর ভাই শাহিদ।

পাকিস্তানের সাবেক উইকেটরক্ষক রশিদ লতিফ। একসময়ে পাকিস্তানকে নেতৃত্বও দিয়েছিলেন। ইচ্ছা করলেই তাঁর ছবি পাওয়া যায়। গুগল সার্চে গিয়ে রশিদ লতিফ লিখলেই হল।

তাঁর সৎ ভাই শাহিদের ছবি দেখতে পাই না। থাকলেও আমি চিনি না তাঁকে। স্টেটসম্যানের এক প্রাক্তন কর্মী একবার বলেছিলেন, শাহিদ উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর থেকে চলে এসেছিলেন কলকাতায়। পরে স্টেটসম্যানে কাজ নেন। খুব সম্ভবত খিদিরপুর এলাকায় থাকতেন শাহিদ।

ads

কিন্তু কীভাবে তিনি উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর থেকে কলকাতা চলে এলেন, রশিদ লতিফের সঙ্গে ছেলেবেলায় খেলাধুলো করেছেন কিনা, তা আমার জানা নেই। এই ধূসর এলাকায় আলো ফেলতে পারতেন দু’জন। এক জন রশিদ লতিফ স্বয়ং। অন্য জন তাঁর ভাই। আমার দুর্ভাগ্য দু’জনের কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করতে পারিনি।

রশিদ ও শাহিদের এই গল্প অনেকেরই জানা। পুরনো গল্প নতুন করে লেখার জন্য একবার পাকিস্তানের এক নামী ক্রিকেট সাংবাদিকের কাছে আবদার করে বসেছিলাম। সেই সাংবাদিকের সঙ্গে রশিদ লতিফের সম্পর্ক বেশ ভাল। আমার হাজারো অনুরোধের পরে সেই সাংবাদিক রশিদ লতিফের কাছে প্রসঙ্গ উত্থাপনও করেছিলেন। কিন্তু রশিদ লতিফ সে সব শুনেই পত্রপাঠ নাকচ করে দেন। আমার আর রশিদ লতিফের কাছ থেকে পুরনো গল্প শোনা হয়নি।

জনশ্রুতি বলে, সংবাদকর্মী ছিলেন না শাহিদ। প্রিন্টিং বা এরকমই কিছু একটা বিভাগের সামান্য এক কর্মী ছিলেন। কর্মস্থলে তিনি নাকি প্রায়শই রশিদ লতিফের কথা বলতেন। শাহিদের সতীর্থরা প্রথমটায় বিশ্বাস করেননি। ১৯৯৬ বিশ্বকাপের সময় কলকাতা বিমানবন্দরে রশিদ লতিফ তাঁর হারিয়ে যাওয়া ভাইকে দেখে জড়িয়ে ধরেছিলেন।

সেবার ব্যাঙালুরুতে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটায় ভারতকেই সমর্থন করেছিলেন শাহিদ। কারণ, এটাই তাঁর জন্মভূমি। রশিদও জানতেন। তিনি তাতে ভাইয়ের ওপর কোনো ক্ষোভও রাখেননি।

স্টেটসম্যান হাউজে রশিদ লতিফকে আমন্ত্রণও জানানো হয়েছিল। প্রাক্তন পাক তারকা সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে স্টেটসম্যানের দপ্তরে গিয়েছিলেন। কাঁটাতারের বেড়া দুই ভাইকে আলাদা করে রেখেছিল। ক্রিকেট আবার দুই ভাইকে মিলিয়ে দেয়।

পরে ভারত যখন পাক-সফরে গিয়েছিল ২০০৪ সোলে, সেই সময়ে শাহিদও পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। তাঁর ভাই রশিদ লতিফই খেলার টিকিট দিয়েছিলেন শাহিদকে। পাক-মুলুকে গিয়ে ভারতের হয়ে গলা ফাঁটিয়েছিলেন শাহিদ। দেশের পতাকা উড়িয়েছিলেন। রশিদও এর জন্য বকাঝকা করেননি ভাইকে।

রশিদ লতিফ প্রায়ই খবর হন। নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে তাঁর। ভারত-পাক ম্যাচ নিয়ে কথা বলেন। রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গাঙ্গুলিদের নিয়েও অনেক অজানা গল্প বলেন। কিন্তু তাঁর ভাই শাহিদকে নিয়ে সাম্প্রতিক কালে কোনও মন্তব্য করেননি। করলে তা নিশ্চয় খবর হত। শাহিদের খোঁজও পাওয়া যায় না। স্টেটসম্যানের প্রাক্তন এক কর্মী বলেছিলেন, ‘ও (শাহিদ) উত্তরপ্রদেশে নিজের বাড়িতে ফিরে গিয়েছে।’

সেখানে এখন কী করেন শাহিদ জানা নেই। ভারত-পাক ম্যাচের আগে তিনি কোনও মন্তব্য করেছেন বলেও শুনিনি। শাহিদ অন্তরালে।

ওঁদের বাবা অবশ্য অনেক আগেই ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন, পঞ্চাশের দশকে। সেখানে গিয়ে বিয়েও করেন, সেখানেই জন্ম রশিদ লতিফের।

রশিদ লতিফ না বললেও, বাবা আবদুল লতিফের সুবাদে শাহিদের কিছুটা গল্প জানা যায়। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘আমি যখন পাকিস্তানে চলে আসি, তখন চেয়েছিলাম ছেলেটাকে সাথে নিয়ে আসতে। কিন্তু, আমার বাবা তাতে রাজি হননি। তো জিদ ধরে বসেছিলেন।’ সেজন্যই তো দুই ভাইয়ের দেখাটা এত লম্বা সময় পর হল।

ভাইকে একদিন নিজের মুলুকে নিয়ে গিয়ে ক্রিকেট ম্যাচ দেখিয়েছিলেন রশিদ লতিফ। তাঁর সঙ্গে শাহিদের এখনও যোগাযোগ আছে কিনা তা আমি জানি না। দুই পড়শি দেশের ক্রিকেট যুদ্ধ আবার হয়তো মিলিয়ে দেবে দুই ভাইকে। সেদিন সুখ-দু:খের কথা বলবে ওরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link