More

Social Media

Light
Dark

সূর্যাস্তের রঙের মতো…

২০১৬ সালের মিরপুর।

সেটি ছিল বাংলাদেশ – ইংল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। জয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়েও চিটাগংয়ে প্রথম টেস্টে জয়ের স্বাদ পায় নি মুশফিকুর রহিমের দল। মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্টে আবারো জয়ের সম্ভবনা তৈরি করে বাংলাদেশ। লক্ষ তাড়া করতে নেমে চতুর্থ ইনিংসে দারুণ ব্যাট করছিলেন দুই ইংলিশ ওপেনার। দুই ইংলিশ ওপেনারের শতরানের জুটি। এরপর সদ্য অভিষিক্ত এক তরুণের স্পিন বিষে নীল পুরো ইংলিশ শিবির। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট খেলা সেই তরুণের নাম মেহেদী হাসান মিরাজ।

ওয়ানডে অভিষেকে মুস্তাফিজুর রহমান যেমন সব আলো নিজের দিকে কেড়ে নিয়েছিলেন সাদা বলের ক্রিকেটে তেমনি ধূমকেতুর মত বাংলাদেশ ক্রিকেটে আবির্ভাব হয়েছিল মিরাজের। মিরপুরের সেই ঐতিহাসিক টেস্টে দুই ইনিংস মিলে ১২ উইকেট নিয়ে একাই পাশার দান উল্টে দিয়েছিলেন এই তরুণ তুর্কী। পুরো সিরিজেই ইংলিশদের বোতল বন্দী করে রেখেছিলেন।

ads

২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিলেন মিরাজ, ওই বছরই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। মিরাজের নেতৃত্বে সেবার ট্রফি জিততে না পারলেও হয়েছিল তৃতীয়, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেটিও কম ছিল না। দারুণ প্রশংসিত হয়েছিল মিরাজের নেতৃত্ব, বেশি মুগ্ধতা ছড়াল অলরাউন্ড নৈপুণ্য।

অলরাউন্ডার হলেও বল হাতে জাতীয় দলে লম্বা রেসের ঘোরা হওয়ার আভাস দিয়েছিলেন শুরুতে। এরপর জাতীয় দলেও নিয়মিত খেলেছেন। তবে শুরুর সেই মিরাজের পঞ্চাশ শতাশও কি মেটাতে পেরেছে। সময়ের সাথে সাথে নিম্নমুখী মিরাজের পারফরম্যান্সের গ্রাফ। ব্যাট হাতেও বলার মত তেমন কিছু করে দেখাতে পারে নি গত চার বছরে। টেস্টে ২২ ম্যাচে ৪২ ইনিংস ব্যাট করে রান করেছেন মোটেই ৬৩৮ ফিফটি কেবল দুটি গড় ১৭.৭২।

মিরাজের শক্তির জায়গা বল হাতে দেশের বাইরে বল হাতেও হতাশ করেছেন মিরাজ। এমনকি দেশের মাটিতেও তিনি ক্রমেই ক্ষয়িষ্ণু। উপমহাদেশীয় কন্ডিশনে খেলা শেষ তিনটি টেস্টে নিয়েছেন মাত্র চার উইকেট। এবার ওয়ানডের ওয়ানডের আলোচনায় আসি। সর্বশেষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডের সবগুলোতেই খেলেছেন। পেয়েছেন মাত্র দুই উইকেট। শেষ দু’টি ম্যাচে ছিলেন উইকেটশুণ্য। হ্যাঁ, ম্যাচগুলো হয়েছে দেশের মাটিতে।

এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ, কিংবা ২০১৯ সালের বিশ্বকাপেও ছিলেন বর্ণহীন। বিশ্বকাপে ছয় উইকেট পেয়েছেন বটে, কিন্তু তিনি ছিলেন নখদন্তহীন। মানে বোলিংয়ে আলাদা কিছু ‍ছিল না। স্রেফ জায়গা মত বল ফেলে যাওয়ার অনন্ত চেষ্টা। ঘরোয়া ক্রিকেট, টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট – কোনো জায়গাতেই তিনি ঠিক ‘আলোচিত’ কোনো চরিত্র নন।

টি-টোয়েন্টি দলে তিনি অপরিহার্য্য নন। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি দলগুলোর একাদশেও নিয়মিত জায়গা পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। অথচ, এই মিরাজকেই একটা সময় ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল) খেলতে ডেকে পাঠিয়েছিল ত্রিনবাগো টোব্যাকো নাইট রাইডার্স।

২০১৬ সালে যুব বিশ্বকাপ খেলেছেন। এর মাত্র বছর তিন-চারেকের মধ্যে তাঁর মনোযোগ কেন কেবল জায়গা মত বল ফেলায় হবে! এখন সেই সময় যখন তিনি নিজের অস্ত্রশালা সমৃদ্ধ করবেন, নতুন নতুন টেকনিক আয়ত্ব করবেন। পুরনো অস্ত্রগুলো ঝালিয়ে নেবেন, ফিটনেসে কাজ করবেন। প্রয়োজনে ব্যাটিংয়েও আরো মনোযোগ দেবেন। মিরাজের মধ্রে সেই চেষ্টাটা আছে তো? নাকি, স্রেফ জায়গা মত বোলিং করে গিয়ে দলের ঠিকানা ধরে রাখতে পারলেই সন্তুষ্ট তিনি।

মিরাজ চাইলে অনুপ্রেরণা পেতে পারেন খুব কাছ থেকেই। ভারতের বরুণ চক্রবর্তীর কথাই ধরা যাক। উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান পরিচয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। ১৭ বছর অবধি খেলে নিজেকে প্রমাণ করতে না পারার ব্যর্থতা দিয়ে সরে যান। স্থাপত্যবিদ্যায় পড়াশোনা করেন স্থপতি হন, ক্রিকেটের টানে আবার সব ছেড়ে ছুড়ে যখন ফেরেন তখন তিনি মিডিয়াম পেস বোলিং অলরাউন্ডার।

এখানেই শেষ নয়, আরো চড়াই উৎরাই পেড়িয়ে তিনি এখন ফিঙ্গার স্পিনার। ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরম করে তিনি এখন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) রহস্য স্পিনার। ক’দিন হল ডাক পেয়েছেন ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে। বয়স ২৯। আর মিরাজের বয়স ২৩! মিরাজকে মূল পরিচয় পাল্টাতে হবে না, স্রেফ নিজের দক্ষতার জায়গাটাই আরো ঝালাই করতে হবে। এত অল্পতেই তুষ্ট হলে চলবে কি করে!

যত দিন যাচ্ছে পরিস্থিতি আরো বেশি ঘোলাটে হচ্ছে তাঁর জন্য। বলাই বাহুল্য সামনের দিনগুলো আরো কঠিন হবে তাঁর জন্য। মিরাজের জন্য বদলে যাওয়ার এটাই সঠিক সময়। শাহরুখ খানের মত বলতেই হচ্ছে, ‘ক্যায় পাতা! কাল হো না হো!’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link