More

Social Media

Light
Dark

ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ: শক্তির মাঝে সংকট

ইংল্যান্ডের মঈন আলী আছে। একইভাবে দক্ষিণ আফ্রিকায় ডেভিড মিলার, অস্ট্রেলিয়ায় ম্যাথু ওয়েড, নিউজিল্যান্ডে জিমি নিশাম, শ্রীলঙ্কা দলে ভানুকা রাজপাকসের মতো বাঁহাতি বিধ্বংসী ব্যাটার রয়েছেন। যারা মিডল অর্ডারে ব্যাটিংয়ে এসে মুহূর্তের মধ্যেই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু ভারতের স্কোয়াডে মিডল অর্ডারে ব্যাট করার মতো এমন মারকাটারি বাঁহাতি ব্যাটার কই? ঋষাভ পান্ত? কিন্তু তিনি তো নিজেই একাদশে নিশ্চিত নন। 

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মিডল অর্ডারে বাঁহাতি ব্যাটারের বেশ প্রয়োজন। গুরুত্বের আধিক্য কতটুকু সেটি কয়েকটি ক্রাইটেরিয়া দিয়ে বিবেচনা করলেই হয়। বাঁহাতি ব্যাটার উইকেটে আসা মানেই প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়কের নতুন করে ফিল্ড প্লেসমেন্ট করার চাপ। এ ছাড়া যে লেগ স্পিনকে অনেক সময় দুর্বোধ্য মনে হয় সে সব ডেলিভারি অনায়াসেই খেলতে পারেন পরীক্ষিত বাঁ-হাতি ব্যাটাররা। একই সাথে এরা অফস্পিনও খুব ভাল খেলতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পায় স্লগ শট খেলার সময়। এ সময় ফুল ফেসে ব্যাটিং করতে পারে তারা। 

কিন্তু ভারতের ব্যাটিং লাইন আপ খানিকটা একমাত্রিকই হয়ে গেছে। শুরুর চার ব্যাটারই ডানহাতি। এরপরে ঋষভ পান্তের কথা থাকলেও দীনেশ কার্তিকের কাছে তাঁর জায়গা হারানোর প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এরপরে বাঁহাতি ব্যাটার বলতে অক্ষর প্যাটেলই টুকটাক পারেন। কিন্তু তাঁকে খুব একটা স্বীকৃত ব্যাটারও বলা যায় না। তাই ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ আনেকটা ডানহাতি নির্ভরই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ দলের ফিল্ড প্লেসমেন্টে তেমন চ্যালেঞ্জ আসবে না।

ads

অর্থাৎ, ভারতীয় ব্যাটারদের বিপক্ষে ফিল্ডিং করার সময় পরিকল্পনায় তেমন হেরফের হবে না। এটাই ভারতকে একটু ব্যাকফুটে ফেলে দেয় কিনা সেই শঙ্কা থাকছেই। যদিও তাদের একাদশে পরীক্ষিত পারফর্মাররাই থাকবে। তবে নির্দিষ্ট দিনে ভারত যে কোনো ম্যাচেই প্রতিপক্ষের টেকনিক্যাল কিছু সিদ্ধান্তের কারণে বিপদে পড়তে পারে। সেটার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো না। 

অবশ্য এমন ব্যাটার যে ভারতের রাডারে যে ছিল না তা কিন্তু নয়। এই যেমন রাহুল তেওয়াতিয়া এ বারের আইপিএলেই বেশ ভাল ফর্মে ছিলেন। ১৪৭.৬২ স্ট্রাইকরেটে রান করেছিলেন ২১৭। শেষের দিকে একক নৈপুণ্যে কিছু ম্যাচও জিতিয়েছেন। কিন্তু ভারতের চূড়ান্ত স্কোয়াডের ধারের কাছেও ছিলেন না তেওয়াতিয়া। 

রোহিত শর্মার সময়ে মিডল অর্ডারে রবীন্দ্র জাদেজা এই রোলটা বেশ ভালভাবেই প্লে করছিলেন। কিছু কিছু ম্যাচে চারেও ব্যাট করেছেন তিনি। সেই অর্ডারে সফলও হয়েছেন। কিন্তু তাঁর ইঞ্জুরির কারণে নিশ্চিতভাবেই একটা গ্যাপ তৈরি হয়ে গেছে স্কোয়াডে। যদিও অক্ষর প্যাটেল দলে এসেছেন, কিন্তু বড় ম্যাচে তিনি কতটা ব্যাটিংয়ের সামর্থ্য দেখাতে পারবেন সেটি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

অবশ্য দলে বাঁহাতি ব্যাটারের স্বল্পতা থাকলেও ব্যাটিং লাইন আপে তেমন সমস্যা দেখেন না মুম্বাইয়ের প্রাক্তন ক্রিকেটার অভিষেক নায়ার। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আসলে বাঁহাতি, ডানহাতি গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ন দিকটা হলো ব্যাটারের স্কিলসেট। আর আমি ডান হাতি, বামহাতি কম্বিনেশনে বিশ্বাসী না। ব্যাটারের সক্ষমতা থাকলে সে যেকোনো ধরনের বল খেলতে পারবে। ভারতের এই দলটার ব্যাটিংয়ে আমি তেমন সমস্যা দেখি না। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পরিকল্পনা করতে হবে ওভার দেখে, ব্যাটিং অর্ডার দিয়ে নয়। ‘

তবে অভিষেক নায়ার যেটাই বলুন না কেন, এই সময়ে বাঁহাতি ব্যাটারদের প্রভাবটা ঠিক অস্বীকার করা যায় না। এই যেমন গত বিশ্বকাপেই প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচ জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন ম্যাথু ওয়েড। তাঁর ঐ ১৭ বলে ৪১ রানের ঝড়ো ইনিংসই উড়ন্ত পাকিস্তানকে মাটিতে নামিয়ে এনেছিল। এ ছাড়া ডেভিড মিলার কিংবা মইন আলীর সাম্প্রতিক ইনিংস গুলো দেখলেই একটা স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়।

এই ভারত সিরিজেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন মিলার। মইন আলী পুরো বছর জুড়েই আছেন ছন্দে। পাকিস্তান সিরিজেও মিডল অর্ডারে এসে একটা গড়পড়তা সংগ্রহকে এক ঝটকায় দুর্দান্ত সংগ্রহের দিকে নিয়ে গেছেন। আর ভানুকা রাজপাকসের কথা বলতে গেলে তো এশিয়া কাপ ফাইনালের চিত্রই ভেসে ওঠে।

শ্রীলঙ্কার ইনিংসে বিপদকালীন সময়ে বলতে গেলে একাই টেনে তুলেছিলেন রাজাপাকশে। তাঁর ৪৫ বলে করা অপরাজিত ৭১ রানের ইনিংসেই শ্রীলঙ্কা লড়াই করার মতো একটা পুঁজি পেয়েছিল। এরপর এশিয়া কাপটাই জিতে নেয় লঙ্কানরা। আর সে ফাইনাল জয়ের নায়ক ছিলেন ভানুকা রাজাপাকসে।

সেরা সেরা সব ব্যাটার নিয়ে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ। সেই ব্যাটিং লাইনআপ শুধু বাঁহাতি ব্যাটারের অভাবে ব্যর্থ হবে তেমনটিও নয়। কিন্তু দিনশেষে ভারতের ব্যাটিং যে বড্ড বেশি একমাত্রিক হয়ে গেছে সেটি বলাই যায়। এখন সে কারণে নির্দিষ্ট কোনো ম্যাচে তাদের স্ট্রাগলের চিত্র উঠে আসে কিনা সেটিও সময় বলে দিবে।  

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link