More

Social Media

Light
Dark

কৌতুক-বিতর্কে লুকানো এক পাওয়ার হিটার

নভজ্যোৎ সিং সিধু আসলে কে? আপনি হয়তো তাঁকে অতিরঞ্জনকারী একজন ধারাভাষ্যকার হিসেবে চিনবেন। কিংবা একটু বেশি যারা খোঁজখবর রাখেন তাঁরা বললেন, তিনি আইনভঙ্গকারী একজন রাজনীতিবিদ। বিনোদনজগতে বুঁদ হয়ে থাকা দর্শকদের কাছে তিনি কমেডি শো-তে অকারণে হাসতে পারা একজন বিচারক যিনি কথায় কথায় ভুতুড়ে সব ‘শায়েরি’ বানাতে ওস্তাদ। কেউ কেউ তো তাঁকে চেনাটাকেও জরুরী মনে করেন না।

কিন্তু, তাঁর ছক্কা মারার দক্ষতার কথা আজকাল আর কেউ বলে না! বিতর্ক আর কৌতুকের ভিড়ে তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা এখন অনেকটাই ম্লান।

১৯৬৩ সালে পাতিয়ালার এক শিখ পরিবারে জন্ম। বাবা সর্দার ভগবন্ত সিং সিধু ছিলেন প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটার। ছেলে নভজ্যোৎকে তিনি বড় ক্রিকেটার হিসেবে দেখতে চাইতেন। সেভাবেই নিজেকে গড়ে তোলেন সিধু।

ads

১৯৮৩ সালে অভিষেক টেস্ট খেলেন আহমেদাবাদে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। করেন মাত্র ১৯ রান। পরের ম্যাচেও তেমন একটা রান পাননি। রজন বালা নামের স্বনামধন্য কলামিস্ট তখন এক আর্টিকেল লিখেন – ‘সিধু: দ্য স্ট্রোকলেস ওয়ান্ডার’ শিরোনামে।

সিধু ছিটকে যান। পরের সিরিজেই আর দলে জায়গা হয় না তাঁর। ২০ বছর বয়সী সিধু বাড়ি ফিরে দেখেন, বাবা কাঁদছে। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, নিজেকে পাল্টাতে হবে। বড় ক্রিকেটার হতেই হবে।

যে সিদ্ধান্ত সেই কাজ। শুরু হয় পরিশ্রম, নিজেকে বদলে ফেলার সংগ্রাম।

সেই পরিশ্রমটা কতটা অমানবীয় ছিল আজকের দিনে বসে কল্পনাও করা যাবে না। রোজ ভোর চারটা বাজে উঠে পড়তেন ঘুম থেকে। মাঠে চলে যেতেন। তখনও কেউ আসতো না। নিজেই উইকেটে রোলার চালাতেন।

কোনো কিছুই যেন তাঁকে নিজের চেষ্টা থেকে সরাতে না পারে, তাই খুব সাধারণ জীবনে মন দেন। টানা চার বছর তিনি কোনো রকম রঙিন পোশাকই পরেননি। তিনি অন্তত ৩০০ টা ছক্কা মারার অনুশীলন করতেন। ব্যাট হাতে নিয়ে একটা পর্যায়ে হাত নিয়ে রক্ত বের হয়ে যেত – তবুও তিনি থামতেন না।

বাড়ি থেকে হাতখরচ পেতেন সামান্য। সেটা নিয়ে তরুণ বোলারদের জন্য চকলেট কিনতেন, যাতে তারা টানা তাঁকে বোলিং করে যায়। এর মধ্যে দু:সময়ও আসে – বাবা মারা যান।

কিন্তু, নিজের সংকল্পে অটল থাকেন। ঠিকই দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নেন।

১৯৮৭ বিশ্বকাপে যখন ফিরেন, তখন দেখা যায় তাঁর অন্যরূপ, গড়েন নতুন ইতিহাস। অভিষেকেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করেন ৭৩ রান। সেই বিশ্বকাপে যে পাঁচটা ম্যাচ খেলেন তাতে চারটিতেই করেন হাফ সেঞ্চুরি। একমাত্র সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই পারেননি, সেই ম্যাচ হেরে বাদ পড়ে ভারত। সেই বিশ্বকাপের পর ওই একই কলামিস্ট নিজের কথা ফিরিয়ে নেন। এবার তিনি এক আর্টিকেল লিখেন, যার শিরোনাম ছিল – ‘সিধু: ফ্রম স্ট্রোকলেস ওয়ান্ডার টু পাম-গ্রুভ হিটার’।

এটুকুতেই বোঝা যায়, নিজেকে কতটা বদলে ফেলেছিলেন তিনি। সিধু অনেকবারই অনেক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আর্টিকেলের ওই সমালোচনাতেই নিজেকে আমূল বদলে ফেলতে পেরেছিলেন তিনি। তবে, নিশ্চয়ই তাঁর সংকল্পটাই এখানে মূল ভূমিকা রেখেছে।

প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি আসে শারজাহতে, পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৯৮৯ সালে। ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল ১৩৪, ১৯৯৩ সালে সেটা করেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গোয়ালিওরে। ১৯৯৯ সালে তিনি অবসরে যান।

টেস্ট ক্রিকেটে তিনি তিনবার (১৯৯৩, ১৯৯৪, ১৯৯৭) বছরে ৫০০’র ওপর রান করেন। ১৯৯৭ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে করেন ক্যারিয়ারের একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরি। ২০১ রানের সেই ইনিংসটা ছিল ১১ ঘণ্টা লম্বা!

১৯৯৪ সালে এক বছরেই ওয়ানডেতে করেন ৮৮৪ রান। এখানেই শেষ নয়, সিধু হলেন প্রথম ভারতীয় ব্যাটসম্যান যার ওয়ানডেতে পাঁচটির বেশি সেঞ্চুরি ছিল। বোঝাই যাচ্ছে, এখনকার হিসেবে তিনি যাই হন না কেন – ব্যাটসম্যান হিসেবে মোটেও তামাশার পাত্র ছিলেন না।

৫০ টির বেশি টেস্ট ও ১০০ টির বেশি ওয়ানডে খেলে তিনি সাত হাজারের ওপর রান করেছেন। ১৮ বছরের লম্বা ক্যারিয়ারে করেছেন ২৭ টি প্রথম শ্রেণির সেঞ্চুরি। তবে, সবচেয়ে বড় পরিচয় হল ওই ছক্কা মারার ক্ষমতা। আদুরে নাম ছিল ‘সিক্সার সিধু’।

আরেকটা নামেও ডাকা হত তাঁকে – জন্টি সিং। দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি জন্টি রোডসের মত না হোক, সেই সময়ের ভারতীয় দলে অন্তত সেরা ফিল্ডারদের একজন ছিলেন সিধু।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link