More

Social Media

Light
Dark

ঝরে পড়া স্বপ্নের দল

প্রতিটা সূর্য নতুন দিনের বার্তা দেয়। এ কথা চিরন্তন সত্য। একটা সূর্য নিত্য নতুন গল্পেরও জন্ম দেয়। বাংলাদেশের প্রতিটা গ্রামে-গঞ্জে ব্যাট আর বল হাতে দাপিয়ে বেড়ানো প্রতিটা ছেলেরই স্বপ্ন একদিন অন্তত লাল-সবুজ জার্সিটা গায়ে জড়ানো। ব্যস্ত এই নগরীতে খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন দেখা ছেলেটার দিনটা শুরু হয়তো সূর্য্যি মামার পূব আকাশ দখলের আগে। কতশত পথ পাড়ি দিতে হয়। তবুও কি সবাই ছুঁতে পায় সেই অধরা জার্সি!

না, সবাই ছুঁয়ে দেখতে পারে না। গায়ে জড়িয়ে একটা স্নিগ্ধতার পরশ অনুভব করতে পারে না। আবার ভিন্ন উপাখ্যানও যে নেই তাও নয়। কারও কপালে আবার সুখ সহ্য হয় না। কপালের দোষ নাকি সময়ের সে কারণটাও হয়ত অনেকে ঠিক আন্দাজ করতে পারে না। তবে একটা জায়গায় মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সেটা পরিকল্পনার অভাব। বাংলাদেশ ক্রিকেটে বড্ড বেশি চোখে লাগে বিষয়টা।

এমনই পরিকল্পনা আর পরিচর্যার অভাবে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া এবং সেখান থেকে ছিটকে যাওয়ার গল্প  থাকছে খেলা ৭১-এর আজকের আয়োজনে।

ads
  • মুনিম শাহরিয়ার

বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে বেশ দূর্বল। সেটা নিয়ে দ্বিমত থাকার কথা নয়। এই দূর্বলতা কাটাতে আমাদের ইনিংসের শুরুতে একজন মারকুটে ব্যাটারের প্রয়োজন। যে ভয়ডরহীনভাবে চালাবে ব্যাট। তেমন একজনের সন্ধান করতে করতে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চ সামনে নিয়ে আসে মুনিম শাহরিয়ারকে। ঘরোয়া ক্রিকেটের তিনি মারকুটে ব্যাটার হিসেবেই ছিলেন পরিচিত।

তবে লাইমলাইটটা তাঁকে এনে দেয় বিপিএল। এরপরই তড়িঘড়ি করে তাঁকে নিয়ে আসা হয় জাতীয় দলে। অভিষেকও করে ফেলেন তিনি। তবে দীর্ঘস্থায়ী একটা বন্দোবস্ত হল না তাঁর। ছিটকে গেলেন। আবার ফিরবেন কি না তাও জানেন না। অথচ তাঁকে একটা কাঠামোর মধ্যে এনে সময় নিয়ে তবে জাতীয় দলের গুরু দায়িত্ব দেওয়া যেত। তবে সেটা আর হল কই?

  • শামীম হোসেন পাটোয়ারি

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য শামীম হোসেন পাটোয়ারি। তরুণ উদীয়মান খেলোয়াড়দের একজন। সময় বুঝে গায়ের জোরে খেলতে পারেন দারুণভাবে। বিশ্বকাপ জেতার পর বিসিবির রাডারেই ছিলেন। আর ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্ম  করেই তিনি জানান দিচ্ছিলেন সঠিক পথে থাকার। তবে বিসিবির নীতিনির্ধারক পর্যায়ে অপেক্ষার প্রহর গুণতে না পারা শামীমকে নিয়ে আসে জাতীয় দলে।

স্লগারের রোলটা এসে পড়ে তরুণ শামীমের কাঁধে। দু’এক ম্যাচে শামীম ভালও করেন। তবে অপরিপক্কতার কারণে খেই হারিয়ে ফেলতে শুরু করেন শামীম। এরপর ক্রমশ অপছন্দের পাত্রে পরিণত হতে শুরু করেন। শেষমেশ তরুণ এই ক্রিকেটারকেও তুলে রাখতে হয় জাতীয় দলের জার্সি। তিনি হয়ত ফিরবেন। তবে কবে নাগাদ সেটা এখনই বলে দেওয়া মুশকিল।

  • সাকলাইন সজীব

বাংলাদেশ সবসময়ই স্পিন নির্ভর একটা দল। আর বাঁ-হাতি বোলারদের কদরটা একটু বেশিই টাইগার ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে। কিন্তু ২০১৬ সালের দিকে বাংলাদেশ ক্রিকেটে খানিকটা কালিমার দাগ পড়ে। অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের জন্যে নিষিদ্ধ হন বাঁ-হাতি স্পিনার আরাফাত সানি। ঠিক তখন বাংলাদেশ দলে উদয় হন সাকলাইন সজীব।

হুট করেই তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় জাতীয় দলে। মূলত সানির শূন্যস্থান পূরণের একটা স্বল্প মেয়াদের সমাধান। তবে হুট করে এসেই আবার নিমিষেই যেন হারিয়ে গেলেন সাকলাইন সজীব। মাত্র একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সে ম্যাচটায় প্রচণ্ড খরুচে বোলার হয়েই প্রস্থান ঘটে সজীবের।

  • তানভীর হায়দার

২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেই মূলত লেগ স্পিনারদের একটা উত্থান। প্রায় প্রতিটা দল তখন ব্যস্ত লেগ স্পিনার অন্বেষণে। বাংলাদেশও তাঁর ব্যতিক্রম ছিল না। তবে প্রক্রিয়াতে নিশ্চয়ই কোন ফাঁকি ছিল। কেননা আজ অবধি বাংলাদেশ একজন প্রকৃত লেগ স্পিনারকে খুঁজে পায়নি। তবে তানভীর হায়দারকে দিয়ে শুরু হয়েছিল লেগ স্পিনার খোঁজার যাত্রা।

তবে তিনি ছিলেন একজন মিডল অর্ডার ব্যাটার। টুকটাক লেগ স্পিন করতে জানতেন। তাঁর উপর দায়িত্ব এসে বর্তায় লেগ স্পিনের। তিনি ঠিক নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি জাতীয় দলের জার্সি গায়ে। ব্যাটার থেকে মূল দায়িত্ব বোলার বনে যাওয়ায় পারফরমেন্সে আসে ধ্বস। হারিয়ে যান তিনি জাতীয় দলের রাডার থেকে।

  • সাঞ্জামুল ইসলাম 

আরও একজন বাঁ-হাতি স্পিনার হিসেবেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন সাঞ্জামুল ইসলাম। তিনি যখন জাতীয় দলে সুযোগ পেলেন তখন বাংলাদেশ দলে সাকিব ছাড়া আর তেমন কেউই থিতু নন। বেশ কিছু বিকল্পের মধ্যে সাঞ্জামুলও ছিলেন একজন। তবে বয়সটা খানিক বেশি থাকায় তাঁর উপর বিনিয়োগ করতে সাহস করেনি বিসিবি। যদিও তিন ওয়ানডে খেলে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন সাঞ্জামুল।

তাছাড়া ঘরোয়া লিগগুলোতেও তিনি বেশ উজ্জ্বল। তবুও অজানা কারণে তিনি থিতু হতে পারেননি জাতীয় দলে। কোন পরিকল্পনার বালাই নেই। আর তাতেই স্বপ্নগুলো ক্ষণিকেই চুরমার হয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link