More

Social Media

Light
Dark

যাত্রাবিরতির মাত্রা ছাড়িয়ে…

বাংলাদেশের ক্রিকেট কিংবা সামগ্রিক ইতিহাস – সব জায়গাতেই সাকিব আল হাসান নামটা খুবই অনন্য। কোনো সন্দেহ ছাড়াই বলা যায় যে, বাংলাদেশের ইতিহাসেরই সবচেয়ে ‘আলোচিত’ মানুষগুলোর একজন তিনি।

তিনি ক্রিকেটের মাঠে থাকুক কিংবা না থাকুক তাঁকে নিয়ে আলোচনা থাকবেই। আর সেটাই হওয়ার কথা। কারণ, তাঁর মত চৌকস ক্রিকেটার বাংলাদেশের ক্রিকেটে আর আসেনি। আবার বিপরীত মুখী তর্কও হতে পারে। কারণ, সাকিবকে ঘিরেই সবচেয়ে বেশি রহস্য দানা বেঁধে ওঠে। সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসার নজীরও কম নয়।

আজকাল তিনি নিয়মিত টেস্ট খেলছেন না, কখনও পারিবারিক কারণে, কখনও ইনজুরি কখনো বা আইপিএলের কারণে সাদা পোশাকের দল থেকে নিজের নাম সরিয়ে নিচ্ছেন তিনি। টেস্ট খেলা কিংবা না খেলার বিষয়টা অবশ্যই সাকিবের ব্যক্তিগত ব্যাপার। টেস্ট থেকে মনোযোগ সরিয়ে সীমিত ওভারের ক্যারিয়ারটা লম্বা করার ভাবনা তাঁর থাকতেই পারে। সেটাতে দোষের কিছু নেই। এখানে তাঁকে নিয়ে সমালোচনা হওয়াটাও অহেতুক।

ads

কিন্তু, গোল বাঁধে টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনায়। প্রথমত, একটা ব্যাপার ঠিক যে – সাকিবের সমমানের ক্রিকেটারের খুঁবই অভাব বাংলাদেশ ক্রিকেটে। ম্যানেজমেন্ট সেটা বোঝে, জানে এবং মানে। কিন্তু সেই বার্তাটা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার ফলেই সৃষ্টি হয় মূল সংকটের।

দল শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সাকিবের অপেক্ষা করে। কখনও সাকিব শেষ মুহূর্তে ফিরে এসে টেস্ট খেলেন। এই যেমন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলছেন। আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। আবার অনেক সময় শেষ সময়ে এসে জানা যায় সাকিব খেলবেন না। তাঁর সার্ভিস টেস্টে পাবে না বাংলাদেশ।

এই দুই নৌকায় পা রেখে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট কখনোই সাকিবকে ছাড়া সাদা পোশাকের পরিকল্পনা সাজাতে পারে না। ফলে, সাকিবের এই নিজের সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রাখা, কিংবা ম্যানেজমেন্ট বা বিসিবির ঝুলিয়ে রাখায় চূড়ান্ত বিপর্যয়টা আসে মাঠের ক্রিকেটে। সাকিব না থাকতেই পারেন। কিংবা আরো বড় করে বললে, সাকিব একটা সময় একেবারেই থাকবেন না। সেই দিনের জন্য এখন থেকেই তো প্রস্তুত হওয়ার সময়। কিন্তু, সেটা আর আমরা পারছি কোথায়!

একটা টেস্ট দল কখনো একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা ক্রিকেটারের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে না। আসলে কোনো দলীয় খেলাতেই যদি একজনের ওপর বাড়তি নির্ভরশীলতা থাকে, তখন সেটা আশু বিপদের কারণ হতে পারে।

সাকিবকে নিয়ে টানহেঁচড়া নতুন কিছু নয়। সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়ার সময়, কিংবা নিউজিল্যান্ড সফরের আগেও টেস্ট খেলা নিয়ে স্বয়ং সাকিব ও বোর্ড পাল্টাপাল্টি বক্তব্য রেখেছে।

বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে এই দৃশ্যটা চূড়ান্ত একটা রূপ নেয়। মানসিক অবসাদের কারণে ছুটি চাওয়া সাকিবকে অনেকটা ধরে বেঁধে টেস্ট খেলতে পাঠায় বিসিবি। যদিও, পরিবারের একাধিক সদস্যের অসুস্থতায় সাকিবের সাদা পোশাকে ওই সিরিজে মাঠে নামা হয়নি। সিরিজের মাঝপথে তিনি ফেরেন দেশে।

এবার যেমন কোভিড আক্রান্ত সাকিব চট্টগ্রাম টেস্ট থেকে ছিটকে গেলেন। আবার ফিরেও আসলেন। বোর্ড সভাপতি বললেন, সাকিব চাইলে খেলবেন, না চাইলে না। টেস্টের এক-দুই দিন আগ পর্যন্ত সাকিবের খেলার বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত নির্দেশনা টিম ম্যানেজমেন্টের হাতে নেই।

সেই লাইসেন্স বোর্ডও দেয়নি তাঁদের। বরং সব কিছু সাকিবের হাতে। সাকিব কি এতটাই অপরিহার্য্য যার জন্য টেস্ট দলের পরিকল্পনা থেমে থাকবে! আর যদি অপরিহার্য্যই হন, তাহলে সেটা কি দলের বাকিদের জন্য একটা নেতিবাচক বার্তা নয়!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link