More

Social Media

Light
Dark

একটু ছুঁয়ে দেখার আকুতি

একটু ছুঁয়ে দেখার আকুলতার তীব্রতা ভীষণ। সেই ব্যাপকতার প্রমাণটা তো গেল মহামারীই বুঝিয়ে দিয়ে গেল। আপনজনদের ছোঁয়া যায় না, দূরে দাঁড়িয়ে কেবল দেখতে হয়। এ তো নিদারুণ এক কষ্টের স্মৃতি। তবে এই যে ছুঁয়ে দেখার ব্যাকুলতা, সেটা অবশ্য বহু আগের। ক্রীড়াঙ্গনে সেই চিত্র নতুন নয়। মাঠের ভিতরে থাকা মানুষটার একটুখানি স্পর্শের জন্যে হাজার খানেক ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ভোঁদৌড় দেওয়ার দৃশ্যের সাথে পরিচিত কম বেশি সবাই।

ক্রিড়া জগতে এই দৃশ্যের মঞ্চায়ন হয়েছে বহুবার। মাঠের ভেতর কতশত নিরাপত্তার বলয়। তবুও যেন কোন বাঁধাই দমিয়ে দিতে পারে না প্রিয় খেলোয়াড়েরের সন্নিকটে যাবার তীব্র ইচ্ছেটাকে। এই যে যেমন শ্রীলঙ্কা বনাম ভারতের ম্যাচেও হয়েছে তেমন দৃশ্য। বিরাট কোহলি, এই সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটার। সেটা নিয়ে তর্ক নেই। এই মানুষটা কোটি খানেক মানুষের পথপ্রদর্শক। ইংরেজিতে বললে ‘আইডল’। তাঁর সান্নিধ্য পাওয়ার আশায় জীবন বিপন্ন করে হলেও ছুটে আসে এক দর্শক।

দর্শক না ঠিক, ভক্ত। পাগলাটে ভক্ত। তিনি আসেন। জড়িয়ে ধরেন বিরাটকে। তৈরি হয় আবেগঘন এক মুহূর্তের। সেই মুহূর্তটা আবার ফ্রেমবন্দি করেন সুরিয়াকুমার যাদব। সেই পাগলাটে ভক্তের জন্য তো অপার্থিব এক অনুভূতি। এমন ঘটনা অবশ্য বাংলাদেশেও ঘটেছে বহুবার। আর অধিকাংশ ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা।

ads

মাশরাফি বিন মর্তুজা, বাংলাদেশ ক্রিকেটের সদা উজ্জ্বল এক তারকা। এই নামটার সাথে জড়িয়ে আছে এক ব্রহ্মাণ্ড সমান আবেগ। বাংলাদেশ ক্রিকেটের যত জয় গান, তার শুরুতেই ছিল তাঁর নাম। হাঁটুতে কয়েক দফা অপারেশন হল। তবুও কোন এক অজানা শক্তি তাঁকে বারেবারে টেনে নিয়ে এসেছে ক্রিকেটের ময়দানে। কোটি ক্রিকেট সমর্থকদের তিনি শিখিয়ে দিয়ে যান লড়াইয়ের কোন অন্ত নেই। লড়ে যেতে হয়। নিজেকে উজার করেই দেশের মাথা উঁচু রাখতে হয়।

ক্রিকেট ময়দানে তিনি লাল-সবুজ পতাকাটা আগলে রেখেছেন। তিনি গোটা দলটাকেই আগলে রেখেছেন একটা লম্বা সময়। আর তাঁকে আগলে রেখেছে এই বাংলার প্রতিটা ক্রিকেট পাগল ভক্ত, মনের মণিকোঠায়। তিনি সেখানে একটা নিজস্ব সিংহাসনে বসে আসেন রাজার বেশে। তবুও নিপাট এক সাধারণ মানুষ হয়ে তিনি ঘুরে বেড়ান নড়াইলের মাঠেঘাটে।

তবুও কেন যেন তাঁর কাছে যাওয়ার একটি সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ কেউ। এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেই মাশরাফির কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ নিতে মাঠের মধ্যে ঢুকে যান এক দর্শক। এই মাশরাফিকে একটু সামনে থেকে দেখার আকুতি কোন দিনও যেন কমবার নয়। মাশরাফি অবশ্য কাউকেই ফিরিয়ে দেন না। তিনি সবাইকে কাছে টেনে নেন। এক মুহূর্তের উষ্ণতা ছড়িয়ে দেন প্রতিনিয়ত।

সেটা মাঠের নিরপত্তা ডিঙিয়ে আসা কোন পাগল ভক্ত হোক কিংবা শহুরে জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকা বাইক চালক। মাশরাফি জানেন অগাধ ভালবাসায় সিক্ত তিনি। ভয় পাওয়ার খুব বেশি কারণ নেই। এই পুরো দেশের মানুষকে ক্রিকেটের আরও কাছে নিয়ে আসার পেছনের কারিগরের আবার কিসের ভয়। কলার উঁচু করে যিনি বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন চিরদিনের জন্যে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার শঙ্কাকে। তিনি সে অদম্য সাহসের বার্তা ছড়িয়ে দেন তরুণ তাসকিনদের মাঝেও।

তাই তো অন্ধভক্তের অভাব নেই তাঁর। বছর তিনেক হয় তিনি নেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। তবুও এক ছটাক কমেনি তাঁর জনপ্রিয়তা। সেটা বোধকরি কমবার নয়। তিনি চিরকাল রয়ে যাবেন পছন্দের শীর্ষে। তাঁকে ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছেটুকু চিরকালই রয়ে যাবে বর্ণিল হয়ে। তাঁকে চাইলেই তো মনের মধ্যখান থেকে সরিয়ে ফেলা যায় না। সেটা যা পৃথিবীর করুণতম এক দৃশ্য হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link