More

Social Media

Light
Dark

ধাঁধার উত্তর পাকুয়েতা

ব্রাজিলিয়ানরা ফুটবল খেলে না, ফুটবল যাপন করে। ব্রাজিলের অলিতে-গলিতে, রাস্তার মোড়ে ফুটবল খেলেই বড় হয় ভবিষ্যতের পেলে-রোনালদিনহোরা। রিও ডি জেনিরোর গলিতেও নিয়মিতই বসে ফুটবলের আসর, সেখানে নজর রাখে ব্রাজিলে ঘুরে বেড়ানো অসংখ্য ফুটবল স্কাউটের।

ফ্ল্যামেঙ্গোর এক স্কাউট এমনি এক টুর্নামেন্টে খুঁজে পেলেন এক ছেলেকে। বয়স মাত্র সাত, লিকলিকে গড়ন দেখলে মনে হবে বাতাসের ধাক্কাতেই উড়ে যাবে। অথচ এই বালকের কাছে থেকে বল নিতে পারছে না কেউ, বলের সাথে যেন আত্মিক যোগাযোগ তাঁর।

সেই স্কাউট আর দেরি করলেন না, ম্যাচ শেষ হতেই ছেলেটিকে নিয়ে আসলেন ফ্ল্যামেঙ্গোতে। সেই থেকে গল্প শুরু ফ্ল্যামেঙ্গো আর পাকুয়েতা জুটির, পুরো নাম লুকাস তোলেন্তিনো কোয়েলহো দে লিমা।

ads

মাত্র সতের বছর বয়সেই ফ্যামেঙ্গোর সিনিয়র দলের হয়ে অভিষেক ঘটে পাকুয়েতার। দুর্দান্ত ফুটবল খেলে কোপা ডে ব্রাজিল এবং কোপা সুদামেরিকানার ফাইনালে তোলেন দলকে। গোল করেন দুই টুর্নামেন্টের ফাইনালেই, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ফাইনালে হেরে যায় তাঁর দল।

বলের উপর দারুণ নিয়ন্ত্রণ, ড্রিবলিং করতে পারেন পাশাপাশি ফিনিশিংটাও খারাপ না। দ্রুতই ইউরোপিয়ান জায়ান্টদের নজর পড়ে এই তরুণ প্রতিভার উপর। ২০১৮ সালে ৩৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানে পাড়ি জমান পাকুয়েতা।

ব্রাজিলিয়ানরা মনের আনন্দে ফুটবল খেলে। জয়-পরাজয় ছাপিয়ে বল পায়ে কারিকুরি দেখাতেই তাদের আনন্দ। কিন্তু ইতালিয়ান ফুটবলের ধরণ আলাদা, সৌন্দর্যের চেয়ে প্যেন্ট পাওয়া এখানে গুরুত্বপূর্ণ। পাকুয়েতা ইতালিতে এসে যেন খেয় হারিয়ে ফেললেন, সবকিছু যেন অচেনা লাগলো তার কাছে।

মিলানের হয়ে ৩৭ ম্যাচ খেলে গোল করেন মাত্র একটি। সবাই ধরে নিয়েছিল আরো একটি প্রতিভার অকাল মৃত্যু ঘটলো। এরপরই পাকুয়েতা নিলেন নিজের ক্যারিয়ারের সেরা সিদ্ধান্ত। গত মৌসুমে ২০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে যোগ দিলেন ফরাসি ক্লাব অলিম্পিক লিঁওনে।

লিঁওনে এসে যেন ক্যারিয়ারের পুর্নজন্ম ঘটে পাকুয়েতার। ব্রাজিল কিংবদন্তি জুনিনহোকে পেলেন লিঁওতে এসে। তাতে যেন পুরো ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে গেল তার ক্যারিয়ার। স্বাধীনভাবে খেলার পূর্ণ লাইসেন্স পেলেন লিঁওতে, আস্থার প্রতিদানও দিলেন দারুণভাবে। মৌসুম শেষে নির্বাচিত হলেন লিগা ওয়ানের সেরা মিডফিল্ডার হিসেবে।

৩০ ম্যাচে ৯ গোলের পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেন পাঁচটি। ক্লাবে দারুণ পারফরম্যান্সের সুবাদে ডাক পান এবারের কোপা আমেরিকাতে। অথচ টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বাঁ পায়ে ব্যথা পেয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিলেন। তবে সব বাঁধা কাটিয়ে ফিরেছেন, নতুন করে চিনিয়েছেন নিজেকে।

নেইমারের সাথে গড়ে তুলেছেন অপ্রতিরোধ্য এক জুটি। ম্যাচে দারুণ সব মুহূর্তের পাশাপাশি নেইমারের পাস থেকে পাকুয়েতার গোল নিয়মিত দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে এবারের কোপাতে। তাছাড়া গোলের পর একত্রে তাদের নাচের উদযাপনও উল্লসিত করেছে দর্শকদের।

এবারের কোপার নকআউট পর্বে ব্রাজিলের দুইটি গোলের দুটিই তার। এরমাঝে চিলির বিপক্ষে তো মাঠে নামার দুই মিনিটের মাঝে বল জড়িয়েছেন জালে। নেইমারও খুশি জাতীয় দলে এরকম সতীর্থ পেয়ে, সংবাদমাধ্যমে খোলামেলা প্রশংসা করেছেন পাকুয়েতার।

বললেন, ‘পাকুয়েতা অসাধারণ ফুটবলার, প্রতি ম্যাচেই নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। লিঁওনের হয়ে অনবদ্য এক মৌসুম কাটানোর পর জাতীয় দলের হয়েও নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছে। তার মানের ফুটবলারকে সতীর্থ হিসেবে পাওয়া সবসময়ই আনন্দের।’

দুই শিষ্যের মেলবন্ধন দেখে উচ্ছ্বসিত সেলেসাও কোচ তিতেও। কৌতিনহো ইনজুরি আর বাজে ফর্ম মিলিয়ে কোপা শুরুর আগে তিনি দুশ্চিন্তায় ছিলেন মিডফিল্ডের সামনের পজিশন নিয়ে। কিন্তু পাকুয়েতার দারুণ পারফরম্যান্সে সব চিন্তা উবে গেছে কর্পূরের মতো।

তিনি বলেন, ‘সে অসাধারণ। চিলির বিপক্ষে হতাশাজনক প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধে গোল করে সে ম্যাচটা জিততে সহায়তা করেছে। মাত্র ৭২ ঘন্টার বিরতিতে দুই ম্যাচ খেলা সবসময়ই কষ্টকর। কিন্তু সে অনবদ্য, পেরুর বিপক্ষেও ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। হ্যাঁ, নেইমারের সাথে তার দারুণ এক জুটি গড়ে উঠেছে। দুজনের মেলবন্ধন যত দৃঢ় দলের জন্য ততই ভালো।’

কোপার ফাইনালে মারাকানায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হবে ব্রাজিল। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারাতে পূর্ণ ছন্দে থাকা পাকুয়েতাকেই চাইবেন কোচ তিতে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link