More

Social Media

Light
Dark

তোমায় ভালবাসায় ভোলাবো…

বাইরে প্রচণ্ড বৃষ্টি, ল্যাম্পপোস্টের ওপর ভেজা বাসায় কাকদুটো ভয়ে কাঁপছে। তবু দুজনে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে ছুঁয়ে নিচ্ছে উষ্ণতা। ঘরের ভেতরে টিমটিম করে জ্বলছে মোমবাতির আলো। চড়া আতরের গন্ধে ম ম করছে ঘর। রুজান একদৃষ্টে চেয়ে আছে নাসিমের চোখের দিকে। মোমবাতির আলোয় চোখের কোণায় চকচক করছে কিছু একটা,সেই পুরোনো রেকর্ডারটায় রুজানের গলায় ১১ বছর আগের রেকর্ডিংটা বাজছে – ‘ইউ হি প্যাহেলু মে ব্যায়ঠে র‌্যাহো, আজ জানে কি জিদ না কারো!’

নাসিম ভুলে যেতে পারছে না ১১ বছর আগের দিনগুলো, রুজানের গানে কত যৌবন পেরিয়ে এসেছে সে, দুজনে ডুয়েট গেয়ে মাতিয়ে দিত কলেজ সোশ্যাল। ‘ইগো’ – আসলে এক বারুদের কৌটো যা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেয় সময়কে, নাসিম বুঝতে পারে নি যে যন্ত্রণা ছাড়া রুজানকে আর কী দিল ও!

নেস্তা-কাফুর হাঁটু ভাঙা ট্যাকল পেরিয়ে ফের উঠে দাঁড়ায় দুঁদে স্ট্রাইকার। নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ট্যাকল করে ক্লান্ত নেস্তা-কাফু মাটিতে ধরাশায়ী। শেষ প্রহরী হিসেবে স্ট্রাইকারের সামনে তখন লম্বা চুলের ‘নাম্বার থ্রি’। হাতে হলুদ আর্মব্যান্ড।

ads

চওড়া কাঁধদুটো এক ইঞ্চি ঝুঁকে যায় নি, স্ট্রাইকারের চোখে চোখ রেখে এক পা দু পা করে পেছাচ্ছেন মিলান ক্যাপ্টেন। ঠোঁটের কোণায় হাসি, তিনি জানেন এ পৃথিবীতে শক্তির আস্ফালন নয় বরং ভালবাসার আগলের কাছে ধরা দেন সর্বশক্তিমানভ বলের আর চোখের দিকে ওঠানামা করছে চাউনি।

নিজের অজান্তেই পেনাল্টি বক্স থেকে দূরে সরছে স্ট্রাইকার। পাহাড়ের মতো নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়ে যাচ্ছে ‘দ্য মিথ – দ্য লিজেন্ড’ পাওলো মালদিনি। অবশেষে যখন স্ট্রাইকার বুঝল আর উপায় নেই তখন বাধ্য হয়ে ড্রিবলের চেষ্টা আর আটকে যাওয়া ইতালিয়ান ঢালের বিছিয়ে রাখা ভালবাসার শিকলে।

নাসিমরা যা পারে না, আমরা যা পারি না তা করে দেখান পাওলো মালদিনি। নাসিম পারতো আঘাত না দিয়ে রুজানকে সময় দিতে, যেভাবে স্ট্রাইকারের ধৈর্যের পরীক্ষা নেন হাজার হাজার মাইক দূরে বসে থাকা কোনো ইতালীয় সম্রাট। নাসিম পারতো আঘাত না করে একবার ভালবাসায় নিজের দুহাতে আগলে রাখতে রুজান কে ঠিক যেরকম পৈশাচিক ভলির বদলে স্কুপ করে নিজের ভালবাসার ফুটবলটা আগলে নিতেন মালদিনি স্ট্রাইকারের থেকে। তারপর আস্তে আস্তে সবুজ ঘাসে লিখে দিতেন ফুটবলের কোমল রেখাব, রুজান ও তো চাইত নাসিমের কাছে এটুকু, স্রেফ এটুকুই।

বাইরে অন্ধকার গাঢ় হয়ে আসছে, রুজানের হাতটা একবার এত বছর পর ছুঁয়ে নিতে চায় নাসিম, হয়ত কোনো অসীম অনন্তলোকে পায়ে বল নিয়ে মাঠে নামছেন পাওলো মালদিনি। যেখানে ডিফেন্ডারদের পৈশাচিক শক্তি নেই রয়েছে শিল্পের সাজানো পসরা, যেখানে নাসিমের শক্ত ইগো ভেঙে যাচ্ছে রুজানের ভালোবাসার কাছে, দুজনে জড়িয়ে ধরে দুজনকে।

দুজনের ভেতর নিঃশ্বাস ধরে রাখার জায়গা নেই আর। নাসিমের বুকের শক্ত পাঁজর আলগা হয়ে অনেকটা সবুজ মাঠ খুলে দিয়েছে রুজানের ভালবাসার আশ্রয় হয়ে। মালদিনি অনেক দূরে কোথাও হাসছেন, ভালবাসার চেয়ে বড় সম্মোহন এ পৃথিবীতে আর কিছু নেই, থাকতে পারে না, যে ভালবাসায় ওই সাদা বলটার প্রেমিক হতে পেরেছিলেন মালদিনি, তাকে নিজের কাছে আগলে রেখে গাইতেন –

চাঁদের মতো অলখ টানে জোয়ারে ঢেউ তোলাব

তোমায় ভালবাসায় ভোলাবো।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link