More

Social Media

Light
Dark

সাকলাইন মুশতাক, দুসরা শিল্পের স্থপতি

শচীন টেন্ডুলকারের ক্যারিয়ারের মুকুটে একটা পালক হয়ে যুক্ত হয়ে আছে ১৯৯৯ সালের চেন্নাই টেস্ট। ভারতের সামনে জয়ের জন্য ২৭১ রানের লক্ষ্য ছিল। ৮৬ রান তুলতে না তুলতেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত।

উইকেটে তখনও ছিলেন শচীন। তিনিই ছিলেন একমাত্র ভরসা। ভরসার প্রতিদান তিনি দিয়েছিলেন। ২৭৩ বলে করেন ১৩৬। তারপরও অবশ্য ভারতের তরী ভেড়েনি তীরে। কারণ, শচীনের সামনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন এক অফ স্পিনার।

শচীন যখন একটু একটু করে ম্যাচটা পাকিস্তানের হাত থেকে বের করে নিচ্ছিলেন, তখন অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম এগিয়ে আসলেন তাঁর কাছে। কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘এখান থেকে খেলাটা পাল্টানোর যদি কেউ থাকে, সেটা কেবল তুমি। অন্য কেউ নয়। পাকিস্তান যদি জেতে, তাহলে সেটা হবে তোমার জন্য। কেবল তুমিই আউট করতে পারো শচীনকে।’

ads

পরের বলটা করার আগে উজ্জীবিত সেই অফ স্পিনার দিলেন দুসরা। মারমুখী শচীন ধরা পড়লেন মিড অফে ওয়াসিম আকরামের হাতে। ১২ রানে জিতে গেল পাকিস্তান। অধিনায়কের এক কথায় ভোজভাজির মত ম্যাচের মোড় সেদিন ঘুড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন নিজের সময়ের ইতিহাস কাঁপানো এই স্পিনার।

তিনি হলেন সাকলাইন মুশতাক। সাকলাইনের ক্রিকেট ক্যারিয়য়ারে নি:সন্দেহে সেটা অন্যতম সেরা মুহূর্ত ছিল। ওই টেস্টের দুই ইনিংসেই শচীনের উইকেট পাওয়া এই কিংবদন্তি নেন মোট ১০ উইকেট। ২০০০ সালে উইজডেনের বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন তিনি।

শচীনের সাথে পেরে উঠলেও বীরেন্দ্র শেবাগের সাথে পারেননি সাকলাইন। ২০০৪ সালে যেবার শেবাগ মুলতান টেস্টে ৩০৯ রানের দানবীয় এক ইনিংস খেলেন সেবার বড় তোপ যায় সাকলাইনের ওপর দিয়ে। একমাত্র ইনিংসে ৪৩ ওভারে ২০৪ রান হজম করার পর সাকলাইন আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই ফিরতে পারেননি।

সাকলাইন নিজেই সেটাকে নিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে দু:সময় হিসেবে দেখেন। শেষ ওয়ানডেটা খেলেন এর আগের বছর। সাকলাইন অবশ্য এরপর ২০১১ সাল অবধি খেলে গেছেন। ইংলিশ কাউন্টি, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট, নিষিদ্ধ ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগ (আইসিএল) – কোনো কিছুই বাদ ছিল না। 

সাকলাইনকে ক্রিকেট বিশ্বের ভুলে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। কারণ, তিনি হলেন ‘দুসরা’র আবিষ্কার। সাকলাইনের দুসরাটা ব্যাটসম্যানদের জন্য ধরতে পারা খুবই শক্ত ছিল। উইকেট নেওয়ার জন্য এটা সাকলাইনের অন্যতম প্রিয় অস্ত্র ছিল। সাকলাইন প্রমান করে গেছেন যে, এই ডেভিভারিটা বিশুদ্ধ অ্যাকশনেও করা সম্ভব।

এই ডেলিভারির কৌশল রপ্ত করার কৌশলটা খুবই অদ্ভুত। একবার নিজের বাসার ছাদে টেনিস বল দিয়ে অনুশীলন করছিলেন সাকলাইন। তখনই এই ‘আইডিয়া’ প্রথম মাথায় আসে। পরে ক্রিকেট বল দিয়ে কৌশলটাকে আরো পাকাপোক্ত করেন তিনি।

পাকিস্তানের স্পিনাররা ব্যাট হাতে বরাবরই নড়বড়ে। তবে, সাকলাইন ব্যাতিক্রম ছিলেন। আট নম্বরে নেমে টেস্টে তাঁর সেঞ্চুরিও আছে। ২০০১ সালে হাই স্কোরিং ড্র ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চে তিনি ১০১ রানে অপরাজিত ছিলেন! শুধু পাকিস্তান নয়, সাকলাইন একবার আয়ারল্যান্ডের জার্সিও শরীরে চাপিয়েছিলেন। তিনি ২০০৬ সালে দলটির হয়ে একটা লিস্ট ‘এ’ ম্যাচও খেলেন।

অন্য যেকোনো পাকিস্তানি ক্রিকেটারের মতই খুব অল্প বয়সে ক্যারিয়ার শুরু হয় সাকলাইনের। জারিফ মেমোরিয়াল ক্লাবের দ্বিতীয় একাদশের হয়ে প্রথম যেদিন স্বীকৃত ক্রিকেট খেলতে মাঠে নামেন, সেদিন তাঁর বয়স মাত্র ১৩। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট শুরু করেন ১৭ বছর বয়সে, ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে। প্রথম মৌসুমে ৫২ উইকেট পাওয়ার পর পাকিস্তান ‘এ’ দলের হয়ে আসেন ঢাকায়।

১৯৯৫ সালেই হয়ে যায় টেস্ট অভিষেক। সেপ্টেম্বরে প্রথম ম্যাচ খেলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পেশোয়ারে। দুই টেস্টের সিরিজে নেন নয় উইকেট। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সাবেক পাকিস্তানি অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম একবার বলেছিলেন, তাঁর দেখা সেরা অফস্পিনার হলেন সাকলাইন।

ক্যারিয়ার শেষ করে কোচিংয়ে মন দেন। আর সেখানেও তিনি বিশ্বসেরাদের কাতারে চলে গেছেন। স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে তিনি এখন বিশ্বসেরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড কিংবা বাংলাদেশের হয়ে কাজ করে ইতোমধ্যেই তিনি সেটা প্রমাণ করেছেন।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link