More

Social Media

Light
Dark

আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তানের প্রেডিক্টেবল ঘাটতি

একেবারে সন্নিকটে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, অস্ট্রেলিয়ায় মাঠে গড়াবে এই বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট। বর্তমানে তাই অন্য দলগুলোর মতই নিজেদের গুছিয়ে নিচ্ছে টি-টোয়েন্টির অন্যতম পরাশক্তি পাকিস্তান। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়টা ভাল যাচ্ছে না তাদের। এশিয়া কাপ এবং ইংল্যান্ড সিরিজের পারফরম্যান্স মোটেই সন্তুষ্ট করতে পারেনি ভক্ত-সমর্থকদের।

এশিয়া কাপে একটা ভাল শুরুর পরেও শিরোপা জিততে ব্যর্থ হয়েছে বাবর আজমের দল। এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হেরেছে তাঁরা। তবে ম্যাচের ফলাফল ছাপিয়ে ফুটে উঠেছে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি দুর্বলতা। বিশ্ব আসরে অংশ নেয়ার আগে এই দুর্বলতাগুলোই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে টিম ম্যানেজমেন্টের।

  • ব্যাটিং

২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ টপ অর্ডারের উপর অতিনির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আরো পরিষ্কারভাবে বললে বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ানকে ছাড়া প্রায় অচল দলটি। দুইজন ইনফর্ম ব্যাটারের উপস্থিতির কারণে অনেকটা সময় জুড়েই পাকিস্তানের নড়বড়ে ব্যাটিং লাইনআপ খুব একটা নজরে আসেনি। তবে এবারের এশিয়া কাপ এবং ইংলিশদের বিপক্ষে বারবার মিডল অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতা ভক্তদের হতাশ করেছে।

ads

ধারাবাহিকভাবে রান করলেও মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেকবার। মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হওয়া সত্ত্বেও সমালোচিত হতে হয়েছে স্ট্রাইক রেটের জন্য। এই যেমন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পাওয়ার প্লেতে রিজওয়ান ব্যাটিং করেছেন মাত্র ৭২ স্ট্রাইকরেটে, শেষপর্যন্ত ৪৯ বলে ৫১ রানে আউট হয়েছেন – যা নিঃসন্দেহে দলের অন্য ব্যাটারদের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছিল।

অন্যদিকে এশিয়া কাপে পাক অধিনায়ক বাবর আজম ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে আবারো স্বরূপে ফিরেছেন তিনি, এক সেঞ্চুরি সহ সাত ইনিংসে ২৮৫ রান করেছেন এই ব্যাটার। কিন্তু দুই ওপেনারের অন্তত একজন যদি দ্রুত আউট হয়ে যান তবেই শুরু হয় সমস্যা। বাবর, রিজওয়ানরা ফিরে গেলে লড়াইয়ের পুঁজি সংগ্রহ করতেই হিমশিম খেতে হয় পাকিস্তানকে। আর এর মূল কারণ নড়বড়ে মিডল অর্ডার।

মূলত স্পিনের বিপক্ষে পুরোপুরি নখদন্তহীন হয়ে পড়েন খুশদিল শাহ, আসিফ আলীরা। এশিয়া কাপে রশিদ খান, রবি বিষ্ণয়, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাদের বোলিংয়ে কোন প্রতিরোধই গড়তে পারেননি তারা। এছাড়া ফর্ম বিবেচনায় ইফতেখার আহমেদ কিংবা খুশদিল শাহ কেউই আসলে বিশ্ব মঞ্চে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করার মত অবস্থায় নেই।

  • বোলিং

ফাস্ট বোলাররা পাকিস্তানের ক্রিকেট সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু এই পাকিস্তানই এখন ভুগছে কার্যকরি পেসারের অভাবে। অবশ্য শাহীন শাহ আফ্রিদি ইনজুরির কারণে ছিটকে না গেলে এতটা দুরাবস্থা হত না পাক বোলিং লাইনআপের। তাই বিশ্বকাপে যেভাবেই হোক এই বাঁ-হাতিকে মাঠে দেখতে চায় সমর্থকেরা। যদিও চোট থেকে ফিরেই পুরনো ছন্দে ফিরবেন কি না তিনি সেটা নিয়ে সংশয় রয়েই যায়।

শাহীন শাহ ছাড়াও হারিস রউফের উপর আস্থা রয়েছে পাকিস্তানের। বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ডেথ বোলার তিনি, এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বিগ ব্যাশ খেলার অভিজ্ঞতা থাকায় তাঁকে ঘিরে প্রত্যাশাটাও অনেক বেশি। অন্যদিকে এশিয়া কাপে দুর্দান্ত বোলিং করা নাসিম শাহ বিশ্বকাপেও দলের ট্রাম্প কার্ড হতে পারেন, তবে অসুস্থতাজনিত কারণে তিনিও আপাতত ক্রিকেটের বাইরে আছেন।

ব্যাকআপ পেসারদের মাঝে আছেন শাহনেয়াজ দাহানি এবং মোহাম্মদ হাসনাইন। কিন্তু এশিয়া কাপ এবং ইংল্যান্ড সিরিজে দুইজনের বোলিংয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্টি মেলেনি। বিশেষ করে রান আটকানোর ক্ষেত্রে দুইজনেই ব্যর্থ হয়েছেন। তাই শাহীন শাহকে বিশ্বকাপে না পাওয়া গেলে বাবর আজমের বড় চিন্তার বিষয় হবে দলের পেস আক্রমণভাগ।

 

সবমিলিয়ে পাকিস্তান অনেক ‘যদি’ ‘কিন্তু’ নিয়েই অস্ট্রেলিয়ায় যাবে। যদি বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ান দ্রুত আউট না হয় তবে যেকোনো সংগ্রহ তাড়া করে জিততে পারে দলটি। আবার উল্টো কিছু ঘটলে হঠাৎ উদ্বোধনী জুটির স্থায়ীত্ব কম হলে অল্পতেই হয়তো গুটিয়ে যাবে তাঁরা। অবশ্য শান মাসুদের অন্তর্ভুক্তি কিছুটা হলেও আশা দেখাচ্ছে পাকিস্তানকে।

অন্যদিকে শাহীন শাহ না থাকলে হারিস রউফ, নাসিম শাহদের পাশাপাশি শাদাব খান, মোহাম্মদ নওয়াজদের উপর নির্ভর করবে পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণ। সেক্ষেত্রে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ বোলারের অভাব ভালোভাবেই ভোগাবে তাদের।

পাকিস্তানের পরবর্তী মিশন নিউজিল্যান্ড এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজ; কিউই কন্ডিশনে অন্তত চারটি ম্যাচ খেলবে তাঁরা। এই সুযোগে নিজেদের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারাটাই হতে পারে পাকিস্তানের বড় অর্জন। বিশ্ব মঞ্চে প্রত্যাশামাফিক ফলাফল চাইলে নিঁখুত পারফরম্যান্স করতে হবে সেটি ভালোই জানা আছে বাবর, রিজওয়ানদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link