More

Social Media

Light
Dark

কোহলির আউটে হাফ ছেড়ে বাঁচে পাকিস্তান

সফল রান তাড়া করার ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের জন্য বিরাট কোহলি বরাবরই এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তাঁর ৪৫ টা সেঞ্চুরির ২১ টিই এসেছে সফল রান চেজের সময়ে। প্রতিপক্ষের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য টপকানোর পথে কোহলি কতটা ভয়ানক হয়ে ওঠেন তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ডসহ প্রায় সবকটি দেশ।

কোহলির এমন রূপ সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে পাকিস্তানকে। ২০১২ এশিয়া কাপে ভারতকে ৩৩০ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েও কোহলির বিধ্বংসী ১৮৩ রানের ইনিংসে সে ম্যাচটা দিনশেষে হেরেছিল পাকিস্তানিরাই। এই গতবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই পাকিস্তানের প্রায় জিতে যাওয়া ম্যাচটা বলতে গেলে একাই ছিনিয়ে নেন কোহলি। এমন আরো বেশ কয়েকটি ম্যাচে পাকিস্তানের হতাশার কারণ হয়েছেন কোহলি।

তবে সফল রান চেজের ক্ষেত্রে কোহলির নিজেরও একটা হতাশার গল্প আছে। অবশ্য সেদিনের হতাশ কোহলির বিপরীতে একজন পাকিস্তানি ক্রিকেটার স্নায়ুবিক চাপ থেকে বেঁচে ফিরেছিলেন। গল্পটা ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালের। সেবার ফাইনালে উঠেছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারত আর পাকিস্তান।

ads

প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান বেশ বড় একটা সংগ্রহই দাঁড় করায়। স্কোরবোর্ডে জমা করে ৩৩৮ রান। তবে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপের সামনে সেটিও যেন বড় কোনো সংগ্রহ নয়। অন্তত এমন লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েও পাকিস্তানের তিক্ততার গল্প আছে। তাই শুরু থেকেই বোলিংয়ে বেশ সতর্ক পাকিস্তান। মোহাম্মদ আমিরের প্রথম ওভারেই শূন্য রানে ফিরেছিলেন রোহিত শর্মা।

এরপরে উইকেটে আসেন বিরাট কোহলি। রান চেজের ক্ষেত্রে কোহলি কতটা ভয়ানক তা পাকিস্তানিদের আগে থেকেই জানা ছিল। তবে মোহাম্মদ আমিরের বলে শুরুতেই পরাস্ত হলেন কোহলি। প্রথম স্লিপে দিলেন ক্যাচ। কিন্তু সেই ক্যাচ মিস করলেন স্লিপে থাকা আজহার আলী।

ব্যাস। ঠিক তখনই আজহার আলী থেকে শুরু করে পাকিস্তান শিবিরে চোখেমুখে আফসোস, আক্ষেপের ছাপ। কারণ দলের সেরা ব্যাটার সব সময় দ্বিতীয় সুযোগ দিবেন না। কিন্তু দিনটা যেন ছিল পাকিস্তানেরই। ৩০/৪০ সেকেন্ডের ব্যবধানে আমিরের পরের বলেই আবার ক্যাচ তুলে দেন কোহলি। এবার পয়েন্টে থাকা শাদাব খান আর সেই ক্যাচ লুফে নিতে ভুল করেননি। ৫ রানে ফিরে যান কোহলি। হাফ ছেড়ে বাঁচেন আগের ক্যাচ মিস করা আজহার আলী। স্বস্তি ফিরে পায় পাকিস্তানও।

সম্প্রতি সেই ফাইনালে ঐ ক্যাচ মিসের স্মৃতি টেনে এনেছেন আজহার আলী। ক্যাচ মিসের পর নাকি অদ্ভুত সব চিন্তায় ডুবে গিয়েছিলেন এ ক্রিকেটার। ‘হাসনা মানা হ্যায়’ নামক এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘কোহলি রান চেজে কতটা ভয়াবহ তা আমরা সবাই জানতাম। তাঁর ক্যাচই কিনা আমি ফেলে দিয়েছিলাম। আর ঐ ক্যাচ মিসের পরই আমি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভাবছিলাম, আজকে কোহলির কারণে ম্যাচ হারলে আমি শেষ। আমার বাড়ি উড়ে যেতে পারে। পাকিস্তানিদের কাছে আজীবন অপরাধী হয়ে যেতে পারি। এমন অদ্ভুত চিন্তার সময় আমি শুধু দোয়া করছিলাম, আল্লাহ, আজকে অন্তত যেন কোহলি উইকেটে বেশিক্ষণ না টিকে। সৌভাগ্যবশত, ও পরের বলেই আউট হয়ে যায়। আমরা চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জিতি। আর ঐ দিনে দলের মধ্যে বোধহয় আমিই বেশি আনন্দিত ছিলাম।’

সে বারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন হাসান আলী। আর লর্ডসের সে ফাইনালে ১১৪ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন ফখর জামান। তবে শুরুতেই জাসপ্রিত বুমরাহর বলে আউট হয়ে ফিরছিলেন ফখর। কিন্তু পরে দেখা যায়, বলটা নো ছিল। সেই নো বল নিয়েও আজহার আলীর সাথে ফখর জামানে মজার একটা গল্প রয়েছে।

সেই মুহূর্তের কথা টেনে তিনি বলেন, ‘ফখন যখন নো বলের কারণে উইকেটে ফিরে আসছিল, তখন সে হাসছিল। পরে আমাকে একদিন বলে, ওর নাকি একটা স্বপ্নই ছিল নো বলে আউট হওয়া! লর্ডসের ফাইনালেই সে সেই স্বাদ পায়। একটা লাইফলাইন পেয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। ওর ঐ ইনিংসেই আমরা বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে গিয়েছিলাম।’

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link