পাকিস্তানের ওল্ড ব্রিগেড


বেশ ঘটা করে, ছোট একটা রেকর্ড করে পাকিস্তান টেস্ট দলের হয়ে অভিষেক হয়ে গেলো মিডিয়াম ফাস্ট বোলার তাবিশ খানের।

তাবিশ এখন পাকিস্তানের হয়ে অভিষিক্ত তৃতীয় বয়স্কতম খেলোয়াড়। গতকাল অভিষেকের দিন তার বয়স ছিলো ৩৬ বছর ১৪৬ দিন। এমনকি, ৩৬ পার করে টেস্ট অভিষেকের ঘটনাই পাকিস্তানে আছে আর মাত্র দু’টি।

৩৬ পার করে অভিষেক হওয়াটা একটু নতুন ব্যাপার। কিন্তু ৩৪-৩৫ পার করে, এমনকি ৪০ পার করেও ক্রিকেট খেলতে থাকা ইদানিং পাকিস্তানের জন্য আর খুব নতুন কিছু নয়। পাকিস্তান গত বেশ কিছুকাল ধরেই একটু বুড়িয়ে যাওয়া খেলোয়াড়দের বাড়তি যত্ন নিচ্ছে। এবং আজকালকের অতি তারুণ্যের গানের মধ্যেও ব্যতিক্রম হয়ে এই ওল্ড ব্রিগেডের ওপর দিব্যি ভরসাও রাখছে।

ads

একটা ছোট্ট তথ্য বলা যাক। গত দুই মাসে তিন ফরম্যাটে পাকিস্তানের হয়ে নয় জন ৩৩ বছর পার করা খেলোয়াড় ময়দানে নেমেছেন! বুঝতেই পারছেন, এই বুড়োদের দাপট কম। এই যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আজ থেকে হারারে টেস্ট পার হলো, এখানেও পাকিস্তানের একাদশে পাঁচ জন ৩৩ পার করা খেলোয়াড় আছেন।

পাকিস্তানের হয়ে নানা ফরম্যাটে খেলতে থাকা এই বয়সী খেলোয়াড়দের সর্বোচ্চ পাঁচ জনের দিকে নজর বুলিয়ে নেওয়া যাক আজ।

  • মোহাম্মদ হাফিজ (৪০ বছর ২০২ দিন)

নিঃসন্দেহে আধুনিক ক্রিকেটের এক গ্রেট। সময়ের সাথে সাথে তার ব্যাট আরও বেশী তরবারি হয়ে উঠেছে।

হাফিজ ক্যারিয়ারের শুরু থেকে খুব মারকাটারি ব্যাটসম্যান ছিলেন না। কিন্তু গত বছর কয়েক ধরে তিনি আরও বেশী শর্টার ফরম্যাটের উপযুক্ত হয়ে উঠেছেন। সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন ২০১৮ সালে, ওয়ানডে খেলেছেন ২০১৯ সালে। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে এখনও তার বিকল্প নেই। গত দু বছরে তিনি পাকিস্তানের সেরা টি-টোয়েন্টি পারফরমার।

বয়স ৪১ ছুঁতে চলেছে। কিন্তু ব্যাটিং বা ফিল্ডিংয়ে সে ছাপ পড়েনি।

  • শোয়েব মালিক (৩৯ বছর ৯৫ দিন)

পাকিস্তানের এই আফ্রিকা সফরের কোনো দলে শোয়েব মালিক নেই। তবে তিনি খুব ভালোভাবেই আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটের বিবেচনায় আছেন। করোনা পরবর্তী সময়েও ইংল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি খেলে এসেছেন।

শোয়েব মালিক এখন সক্রিয় থাকা খেলোয়াড়তের মধ্যে সবচেয়ে আগে অভিষিক্ত খেলোয়াড়। ক দিন পরই চল্লিশে পা দেবেন। ক্যারিয়ার শুরু করেছেন সেই ১৯৯৯ সালে। এর মধ্যে বহুবার মালিকের ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছেন অনেকে। কিন্তু তিনি বারবার ফিরে এসেছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, বয়স আর সময় নিয়ে ভাবনা করাটা খেলোয়াড়ের কাজ নয়।

  • তাবিশ খান (৩৬ বছর ১৪৬ দিন)

অভিষেক হওয়া মাত্রই সক্রিয়া পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের মধ্যে তৃতীয় সিনিয়র খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছেন।

তাবিশ এই শেষ বয়সে এসে ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুন পারফরম্যান্সের পুরষ্কার পেয়েছেন। উঠে এসেছেন তিনি সিন্ধ থেকে। সিন্ধের হয়ে সম্প্রতি বল হাতে দারুন সময় কাটাচ্ছিলেন। ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অনেকদিন ধরেই আলোচিত নাম। এবার আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে সেই কাজটা করে দেখানোর পালা।

  • আজাহার আলী (৩৬ বছর ৭৭ দিন)

মাঝে কিছুটা সময় অধিনায়কত্বও করেছেন। আজাহার আলী এখন পাকিস্তানের অন্যতম ফর্মে থাকা টেস্ট ব্যাটসম্যান। অভিষেকটা হয়েছে তারও অনেক বিলম্ব করে। তবে ২০১০ সালে শুরু করার পর নিজেকে প্রমাণ করতে খুব সময় নেননি।

গতকালও জিম্বাবুয়ের সাথে ভালো একটা ইনিংস খেলে প্রমাণ করেছেন, বয়সের সাথে সাথে তার ব্যাটে ধার বাড়ছে ছাড়া কমছে না।

  • ফাওয়াদ আলম (৩৫ বছর ২১১ দিন)

মাঠে ও মাঠের বাইরে অবশ্য তাঁর আচরণ খুব তারুণ্যে ভরপুর।

২০০৯ সালে অভিষেকের পর থেকে লম্বা সময় খেলা হয়নি ফাওয়াদের। বাজে ফর্মের কারণেই বাদ পড়ে গিয়েছিলেন। ২০২০ সালে, প্রায় ১১ বছর পর তাকে আবার জাতীয় দলে ডাকতে বাধ্য করেছেন ফাওয়াদ। টেস্ট দলে এই দীর্ঘ বিরতি হলেও ওয়ানডে দলে ২০১৪ পর্যন্ত প্রায় নিয়মিত খেলেছেন। তবে টি-টোয়েন্টিতে খুব বলার মতো কিছু করতে পারেননি।

এ ছাড়াও ৩৩ পার করে খেলে চলেছেন আবিদ আলী, নোমান আলী, ফখর জামান, সরফরাজ আহমেদ ও জাহিদ আহমেদ। আর এই বুড়োদের কাঁধেই সওয়ার এখন পাকিস্তানের অনাগত ভবিষ্যৎ।

Share via
Copy link