More

Social Media

Light
Dark

শর্মার ছেলেকে আর ঘৃণা করার সুযোগ নেই

শর্মা জি কা বেটা – ভারতের চিরকালীন ঘৃণার পাত্র। বাংলাদেশে চৌধুরীর ছেলে যেমন। ওদের সব আছে, বাপে টাকা – ভাল রেজাল্ট, বড় চাকরি, দারুণ মাইনে – ঘরে সুন্দরী বউ। সুখের সংসার, যেন রীতিমত চাঁদের হাঁট। অনূর্ধ্ব ১৫ ক্রিকেট থেকেই বিরাট কোহলিরা জানতেন, আসছেন শর্মাজি কা বেটা।

সেই ডেকান চার্জার্সে যখন খেলতেন, তখন থেকেই তিনি ভারতের নেক্সট বিগ থিঙ। কিন্তু, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেন আরও আগে থেকেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও খেলেছেন। তবে, সময়ের সাথে সাথে কেমন যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন। কালক্রমে ফর্মে আসতে লাগল ঘাটতি। যে বিরাট স্বপ্ন নিয়ে ভারত তাঁকে দলে নিয়ে ছিল – সেই আস্থার প্রতিদান তিনি দিতে পারলেন খুব সামান্যই।

ads

২০১১ সালের বিশ্বকাপে তাঁর জায়গা হল না। নিজ দেশে বিশ্বকাপ। কোনো ইনজুরি নেই। তবুও দলে নেই রোহিত শর্মা। দুনিয়ার সকল ‘শর্মা জি কা বেটা’-দের জন্য তো সেটা দুর্বোধ্য এক যন্ত্রনা।

বিশ্বকাপ জিতল ভারত। তবুও রোহিতের মুখে হয়তো হাসি ছিল না। তিনি জানতেন, এই দলে থাকার কথা ছিল তাঁরও। তাঁর ওপর ভরসা করার তখন কেউ নেই। সেই সময়ে তাঁর মধ্যে কি যেন দেখলেন স্বয়ং মহেন্দ্র সিং ধোনি।

শচীন-শেবাগদের চলে যাওয়ার পর ফাঁকা হয়ে যাওয়া ওপেনিং পজিশনের জায়গাটা দিলেন রোহিত শর্মাকে। ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের যুগান্তকারী এক সিদ্ধান্ত। সেই সিদ্ধান্তটা সেদিন নিতে না পারলে হয়তো ১৩ বছর পর এসে বিশ্বকাপ জিততে পারে না ভারত।

ওপেনিং পজিশনে রোহিত হয়ে উঠলেন ‘দ্য গ্রেটেস্ট হিটম্যান’। এমন একজন হিটম্যান পাওয়া যেকোনো দলের জন্য স্বপ্ন। এমন একজন ওপেনার যেকোনো অধিনায়কের জন্যই পরম আরাধ্য।

সেই আরাধ্য ওপেনারটা একের পর এক সেঞ্চুরিই নয়, ডাবল সেঞ্চুরি করাটাকেও রীতিমত নিয়মে পরিণত করলেন। তাও আবার ওয়ানডে ক্রিকেটে। তবুও কি ঘৃণা কমে? রোহিতের সমালোচক তখনও কম ছিল না।

লোকে বলতো, রোহিত দলের জন্য নয় – খেলেন কেবল নিজের জন্য। রোহিত চুপ ছিলেন। তবে, জবাব তিনি ঠিকই দিয়েছেন। ২০২৩ সালের বিশ্বকাপের পুরোটা সময় তিনি খুঁজেছেন কেবল দলের মোমেন্টাম। ব্যক্তিগত অর্জনকে পাশ কাটিয়ে দলের চাহিদাকেই দিয়েছেন সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য।

সেই বিশ্বকাপে পারেননি। আহমেদাবাদের অদ্ভুত এক উইকেটে তিনি ছুঁতে পারেননি অধরা বিশ্বকাপ। চোখের সামনে অধরা বিশ্বকাপটা অস্ট্রেলিয়ার হাতে যেতে দেখে কেঁদেছেন ‘শর্মা জি কা বেটা’। কে বলেছে, রাজার ছেলেরা কাঁদতে জানে না?

সেই কান্নাটা ক্ষোভ হয়ে বুকে পাথরের মত জমে ছিল রোহিত শর্মার। সেই ক্ষোভটা তিনি উগরে দিলেন বিশ্বকাপের মঞ্চে। বার্বাডোজে ক্রিকেটের ইতিহাসে মাত্র তৃতীয়বারের মত কোনো ভারতীয় অধিনায়ক হাতে নিলেন বিশ্বসেরার ট্রফি। ২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে নেমেই জিতে যাওয়া ছোট্ট সেই ছেলেটা এবার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক।

নাহ, শর্মা জি কা বেটাকে আর ঘৃণা করার কোনো সুযোগ নেই। টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলার দিনে এটাই সম্ভবত রোহিতের সেরা প্রাপ্তি।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link