More

Social Media

Light
Dark

আনপ্রেডিক্টেবল নেইমার, প্রেডিক্টেবল ব্রাজিল

কোপা আমেরিকা আদৌ হবে কি হবে না – সেই নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ছিল। শেষ মুহূর্ত আয়োজক হিসেবে সরিয়ে নেওয়া হয় আর্জেন্টিনাকে। ব্রাজিলে সরে গেলেও সেখানেও বিপত্তি। কারণ করোনা ভাইরাসের প্রকোপ। তবে, সব সন্দেহ উড়িয়ে দিয়ে মাঠে গড়ালো লাতিন শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই।

  • ব্রাজিল ৩-০ ভেনেজুয়েলা

দু’বছর আগের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। নিজেদের মাটিতে খেলা আবার। ফলে, ব্রাজিল স্পষ্ট ফেবারিট হয়েই মাঠে নেমেছিল। আর কোপা আমেরিকার উদ্বোধনী ম্যাচে খেলেছেও তাঁরা সেভাবেই। ব্রাসিলিয়ার মানে গারিঞ্চা স্টেডিয়ামে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে পুরোটা সময়েই আধিপত্ত ছিল সেলেসাওদের।

ম্যাচে ৩-০ গোলে জিতেছে ব্রাজিল। ফলাফলই বলে দিচ্ছে ম্যাচটা কতটা একপাক্ষিক ছিল। নেইমারময় এই ম্যাচে নেইমার একটা গোল ও একটা অ্যাসিস্ট করেন। তিতের দলের হয়ে অপর দু’টি গোল করেছেন মার্কিনহোস ও গাব্রিয়েল বারবোসা।

ads

এই ম্যাচ নিয়ে কোপায় ঘরের মাঠে টানা ২১ ম্যাচ অপরাজিত থাকল তাঁরা। ১৯৭৫ সালের পর এখনো ঘরের মাঠে কোপা আমেরিকার কোনো ম্যাচ হারেনি ব্রাজিল। বিধ্বংসী জয় দিয়ে শুরু করা তিতের দল যে এবারো শিরোপা ছাড়া অন্য কিছু ভাবছে সে কথা বলাই বাহুল্য।

করোনার ধাক্কায় আগের দিনই স্কোয়াডের ১২ জন সদস্য ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছেন। এমনিতেই ভেনেজুয়েলা লাতিনের দুর্বল দলগুলোর একটি, করোনার আঘাতে আরো দুর্বল হয়েই মাঠে নেমেছিল তারা। ম্যাচের শুরু থেকেই একের পর এক আক্রমণে যেতে থাকে ব্রাজিল। ১০ মিনিটেই নেইমারের দারুণ পাসে রিচার্লিসন শট করলে সে যাত্রা ভেনেজুয়েলাকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক গ্রাতেরল।

তবে গোল পেতে খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। ২৩ মিনিটে নেইমারের কর্নার থেকে রিচার্লিসনের মাথা ঘুরে বল পড়ে মার্কিনহোসের পায়ের সামনে। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের জটলার ভীড়ে বাঁ পায়ের দারুণ টোকায় বল জালে জড়ান তিনি।

গোলের পরেও আক্রমণের ধার কমেনি সেলেসাওদের, ২৫ মিনিটেই রেনান লোদির নিচু ক্রসে বল জালে জড়িয়েছিলেন রিচার্লিসন। তবে অফসাইডে বাতিল হয় সেই গোল। ৩০ মিনিটে সুযোগ এসেছিল আরেকবার। মিলিতাওয়ের বাড়ানো দারুণ লং বল খুঁজে নেয় নেইমারকে, একজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে জোরালো শট নিলেও তা পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। আক্রমণের ধারা অব্যাহত থাকলেও প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-০ ব্যবধানেই।

দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণের ধারা অব্যাহত রাখে ব্রাজিল। সুফল পেতেও দেরি হয়নি, ৬৪ মিনিটে রাইটব্যাক দানিলোকে ডিবক্সের মধ্যে ফেলে দেন ভেনেজুয়েলার ডিফেন্ডার। সেখান থেকে পেনাল্টি পায় ব্রাজিল। সেখান থেকে গোল করতে মোটেও সমস্যা হয়নি নেইমারের। এ নিয়ে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে ১০৬ ম্যাচে ৬৭ গোল করা হয়ে গেল নেইমারের। আর মাত্র ১০ গোল করলে ব্রাজিলের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকার শীর্ষে কিংবদন্তি পেলের পাশে বসে যাবেন পিএসজির এই ফরোয়ার্ড।

এরপরই রিচার্লিসনকে তুলে নিয়ে গ্যাব্রিয়েল বারবোসাকে মাঠে নামানো হয়। ৮৯ মিনিটে নেইমারের ক্রস বুক দিয়ে জালে ঠেলে ব্যবধান ৩-০ করে ফেলেন এই স্ট্রাইকার। ব্রাজিলের জন্য ফলাফলটা খুবই প্রেডিক্টেবল। কোচ তিতে ফলাফলের জন্য কৃতিত্ব দিলেন ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ নেইমারকে।

ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘নেইমার এখন অনেক বেশি সুযোগ সৃষ্টি করতে পারছে। ডান পা ও বাম পা সমান ভাবে ব্যবহার করছে। ও এখন আনপ্রেডিক্টেবল।

দলে করোনার প্রকোপে ১৫ জন খেলোয়াড়কে জরুরী বদলী হিসেবে ডেকে পাঠিয়েছিল ভেনেজুয়েলা। তবে, ঘাটতি পোষানো যায়নি। দলের পর্তুগিজ কোচ হোসে পেসেরিও বলেন, ‘শুধু আমরা মূল খেলোয়াড়দের ছাড়া খেলছিই না, আমাদের হাতে দলটা গোছানোরও সময় ছিল না।’

  • কলম্বিয়া ১-০ ইকুয়েডর

শুরু আগেই করোনার আঘাতে পর্যুদস্ত এবারের কোপা আমেরিকা। ভেনেজুয়েলার পর করোনা আঘাত হেনেছে কলম্বিয়া শিবিরেও; দলটির কোচিং স্টাফের দুজন সদস্য সংক্রমিত হয়েছেন — টেকনিক্যাল সহকারী পাবলো রোমান ও মনোবিদ কার্লোস এনত্রেনা।

তবে মাঠে নেমে ঠিকই জয় তুলে নিয়েছে কলম্বিয়া। এ’ গ্রুপের ম্যাচে বাংলাদেশ সময় সোমবার ভোরে এরেনা পানতানালে মুখোমুখি হয় দুদল। যেখানে ৪২তম মিনিটে এদোইন কারদোনার একমাত্র গোলে জয় নিশ্চিত করে কলম্বিয়া।

প্রথমার্ধে দুই দলই যে সুন্দর ফুটবল খেলেছে তেমনটা কেউ বলতে পারবে নাহ। তবে প্রথমার্ধের একবারে শেষ মুহুর্তের গোলটা অনেকদিন চোখে লেগে থাকবে ফুটবলপ্রেমীদের। ৪২ মিনিটে ইকুয়েডরের ডি বক্সের ঠিক সামনে হুয়ান কুয়াদ্রাদো ফাউলের শিকার হলে ফ্রি কিক পায় কলম্বিয়া।

সেখান থেকেই এডউইন কারদোনা, কুয়াদ্রাদো এবং মিগুয়েল বোর্হা মিলে উপহার দেন অনিন্দ্যসুন্দর এক গোল। গোলপোস্টে সরাসরি শট না নিয়ে কুয়াদ্রাদোর সঙ্গে তিনটি ছোট পাস খেলেন কারদোনা। বক্সে অপেক্ষায় থাকা বোর্হাকে ইকুয়েডরের ডিফেন্ডারের মাথার উপর দিয়ে বল দেন কুয়াদ্রাদো।

ওদিকে কারদোনো ছুটে ঢুকে পড়েন বক্সে। বোর্হার আলতো হেড কারদোনার সামনে পড়তেই দারুণ শটে বল জালে জড়ান কারদোনা। সম্মিলিত ফুটবলের দারুণ এক নিদর্শন ছিল গোলটি। তবে মাঠে রেফারি অফসাইডের অজুহাতে গোলটি বাতিল করে দিলেও ভিডিও অ্যাসিসট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) প্রযুক্তি জানিয়ে দেয় গোলটি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।

ম্যাচের বাকি সময়টা দুদলই শরীরনির্ভর ফুটবল খেলে গেছে। রেফারিকে মোট ৩৩ বার বাঁশি বাজাতে হয়েছে এ ম্যাচে। এ নিয়ে সর্বশেষ তিন ম্যাচে অপরাজিত কলম্বিয়া।

রিও ডি জেনিরোতে ২০ জুন ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে খেলবে ইকুয়েডর। এর আগেই ১৭ জুন পেরুর ‍মুখোমুখি হবে ব্রাজিল। একই দিনে কলম্বিয়ার প্রতিপক্ষ ভেনেজুয়েলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link