More

Social Media

Light
Dark

রোমাঞ্চকর আবুধাবি জয়ের কিউই কাব্য

টেস্টের শেষ দুই দিনে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করা দলের জয়ের জন্য প্রয়োজন ১৩৯ রান। আপাতদৃষ্টিতে আপনার কি মনে হচ্ছে? ব্যাটিং করা দলটি হেসেখেলেই জয় পাবে তাই তো কেননা সেটিই তো স্বাভাবিক। আগের দিনের বিনা উইকেটে স্কোরবোর্ডে ৩৭ রান তুলে চতুর্থ দিনেও সেই আভাসই দিচ্ছিল। লক্ষ্যমাত্রা ১৭৬। গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট, ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানোর খেলা ক্রিকেট। চলুন দেখে যাওয়া যাক এরকম রঙ বদলানো এক টেস্ট ম্যাচের গল্প।

২০১৮ সালের নভেম্বর। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্ট। ১৬ নভেম্বর টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিধান্ত নেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। তবে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিতে পারেনি কিউই ব্যাটসম্যানরা  উইলিয়ামসনের ৬৩ এবং হেনরি নিকলসের ২৮ ছাড়া বলার মত স্কোর করতে পারে নি কেউ।  মোহাম্মদ আব্বাস, হাসান আলী এবং ইয়াসির শাহর বোলিং তোপে মাত্র ১৫৩ রানে অলআউট নিউজিল্যান্ড। বিপরীতে ২২৭ রানে থামে পাকিস্তানের প্রথম ইনিংস।

বাবর আজম, আসাদ শফিক, হারিস সোহেলদের ব্যাটে ভর করে ভালই এগোচ্ছিল পাকিস্তান। ১৭৪ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে আসাদ শফিক আউট হলেও বড় লিডের আভাস দিচ্ছিল পাকিস্তান। কিন্তু শেষ দিকে তাসের ঘরের মত ভেঙে পরে পাকিস্তানের ইনিংস। শেষ ৫৩ রান তুলতে ৫ উইকেট হারায় পাকিস্তান। কিউইদের পক্ষে ট্রেন্ট বোল্ট নেন ৪ উইকেট।  প্রথম ইনিংসে ৭৪ রানের লিড পায় পাকিস্তান।  প্রথম দিন থেকেই দুবাইয়ের উইকেটে বোলাররা রীতিমত ছড়ি ঘুরাচ্ছে।

ads

৭৪ রানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় ইনিংসে ব্যাটিং শুরু করে নিউজিল্যান্ড। শুরুতে ধাক্কা খায় নিউজিল্যান্ড। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই হাসান আলীর বলে লাইন মিস করে বোল্ড ওপেনার টম ল্যাথাম। প্রাথমিক বিপর্যয় সামলে  ৮৫  রানের জুটি গড়ার পর ইয়াসির শাসর স্পিন ফাঁদে পা দেন ব্ল্যাক ক্যাপ অধিনায়ক।

এরপর উইকেটে  এসেই  আক্রমণাত্নক  শুরু করে অভিজ্ঞ রস টেইলর।  ইয়াসির শাসর সেই ওভারে  মারেন তিনটি চার। ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করতে থাকা টেলর বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেন নি।  এরপর বিজে ওয়াটলিংয়ের ৫৯  হেনরি নিকলসের ৫৫ এবং শেষদিকে ইশ সোদির ১৮ রানের উপর ভর করে ২৪৯ রানের সংগ্রহ পায় কিউইরা। পাকিস্তানের পক্ষে হাসান আলী এবং ইয়াসির শাহ নেন ৫ টি করে উইকেট।

চতুর্থ ইনিংসে পাকিস্তানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ১৭৬ রান। হাতে আছে দুই দিনেরও বেশি সময়। তৃতীয় দিন শেষে বিনা উইকেটে ৩৭ নিয়ে দুবাই টেস্টে চালকের আসনে পাকিস্তান। চতুর্থ দিন মানে, ১৯ নভেম্বর আগের দিনের সাথে  মাত্র ১১  রান তুলতেই  নেই তিন উইকেট৷ এরপর আসাদ শফিক আর অধিনায়ক আজহার আলীর দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে জয়ের পথেই এগোচ্ছিল পাকিস্তান। তিন উইকেটে ১৩০ রান নিয়ে লাঞ্চে যান পাকিস্তান।

উইকেটে দুই সেট ব্যাটসম্যান অর্থাৎ পাকিস্তানের জয় কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র। লাঞ্চের পরেই পরিস্থিতির আকস্মিক মোচড় ভেল্কিবাজির মত পাল্টে যেতে থাকে ম্যাচের গতিপথ। প্রথম ইনিংসে দুই উইকেট নেওয়া অভিষিক্ত স্পিনার এজাজ প্যাটেল ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলেন সাথে নিল ওয়াগনার। ১৩০/৩ থেকে মূহুর্তেই পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় ১৫৪/৬। জয়ের জন্য দরকার ২২ রান।

অধিনায়ক আজহার আলী এক পাশ আগলে রাখলে অপর প্রান্তে চলছে যাওয়া আসার মিছিল। নতুন ব্যাটসম্যান বিলাল আসিফও ধোপে টিকতে পারলেন না। প্যাটেলের বলে বোল্ড নিজের দ্বিতীয় বলেই। রসকষহীন এক ম্যাচে মুহুর্তেই উত্তেজনার পারদ তখন ঊর্ধমুখী। পরের ওভারেই ওভারেই রানের খাতা খোলার আগেই ওয়াগনারের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ইয়াসির শাহ।

জয় থেকে এখনও ১৭ রান দূরে পাকিস্তান হাতে আছে দুই উইকেট। আজহার আলীর সাথে নতুন ব্যাটসম্যান হাসান আলী। তখন ৫১ তম ওভারের খেলা এগিয়ে  ওভারের পঞ্চম বলে সিংগেল নিয়ে স্ট্রাইক দিলেন হাসান  আলীকে শেষ বলে প্যাটেলকে তুলে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে ধরা পরলেন হাসান আলী। নবম উইকেটের পতন জয়ের জন্য দরকার আরও ১২ রান।

আজহার আলী মাটি কামড়ে উইকেটে পরে থাকলেন আশা ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে। আব্বাসকে নিয়ে একটু একটু করে লক্ষ্যের দিকে যাচ্ছিলেন। পাকিস্তানের স্কোর তখন ১৭১ একটা চার হয়ে গেলেই স্কোর লেভেল। বোলিংয়ে সেই এজাজ প্যাটেল স্ট্রাইকে আজহার আলী।

ওভারের প্রথম তিনটি বল ডট দিলেন।  চতুর্থ বলে এরাউন্ড দ্য উইকেট আসলেন প্যাটেল। বল সরাসরি আজহারের পায়ে লাগল। জোড়ালো আবেদন এবং আম্পায়ার আঙুল তুলে জানিয়ে দিলেন আজহার তুমি আউট। রিভিউ নিয়েও শেষ রক্ষা হল না পাকিস্তানের। চার রানের শ্বাসরুদ্ধকর জয় পেল নিউজিল্যান্ড। আবুধাবিত রোমাঞ্চকর জয়কাব্য লিখলো ব্ল্যাক-ক্যাপরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link