More

Social Media

Light
Dark

নয়া তামিমের নব আগ্রাসন

নাম নিয়ে অদ্ভুত বিভ্রান্তি! জাতীয় দলের ওপেনিংয়ে যিনি খেলেন তিনি তামিম। আবার বাংলাদেশ ‘এ’ দলে থাকা আরেক ওপেনারেরও নাম তামিম। দুজনই বাঁ-হাতি ব্যাটার। কিছুটা আলাদা করা যাচ্ছে বটে। একজন তামিম ইকবাল, অন্যজন তানজিদ হাসান তামিম। তবে ডাকনাম কিন্তু একই, ‘তামিম’।

নামের সাদৃশ্যতার এমন বিড়ম্বনায় তাই ‘এ’ দলের তামিমকে একটু চেনা ওঠা দায়ই বটে। মজার ব্যাপার হলো, তাঁরই আবার আরেক সতীর্থের নাম তানজিম হাসান সাকিব, যিনি পেসার। এখন তানজিদ হাসান আর তানজিম হাসান, এই দুই জনের মধ্যে কে বোলার, কে ব্যাটার— সেটা নিরূপণ করা যেন আরো বেশি ‘গুলিয়ে ফেলা’র মতো।

যা হোক, এমন গুবলেট পাকিয়ে ফেলার মতো চক্র থেকে সমর্থকদের বের করে আনার কাজটা এ দুই ক্রিকেটারই করছেন ঠিকঠাকভাবে। ইমার্জিং এশিয়া কাপে ওমানের বিপক্ষে ১৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন সাকিব। আর সাকিবের পেস তাণ্ডবের পর ওমানের বোলারদের উপরে রীতিমত ধ্বংসলীলা চালিয়েছেন তামিম, মানে তানজিদ হাসান তামিম।

ads

৪৯ বলে ৬৮ রানের ইনিংস। যে ইনিংস খেলার পথে এসেছে ১১ টা চার, আর ২ টা ছক্কার মার। অর্থাৎ বাউন্ডারিতেই ৫৬ রান। তামিমের ব্যাট ওমানের বিপক্ষে কতটা আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছিল, তা এই চিত্রই বলে দিচ্ছে।

শুধু ওমানের বিপক্ষেই নয়, তামিম তাঁর ব্যাটিং আগ্রাসন দেখিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কা এ দলের বিপক্ষেও। লঙ্কানদের দেওয়া ৩৫০ রানের লক্ষ্যে দারুণ টেম্পারমেন্ট দেখিয়ে খেলেছিলেন ৩৯ বলে ৫১ রানের একটি ইনিংস।

তাঁর ঐ ইনিংসেই ঝড়ো শুরু পেয়েছিল বাংলাদেশ এ দল। দিন শেষে বাংলাদেশ যদিও ৪৮ রানে ম্যাচ হেরেছিল। তবে তামিমের আগ্রাসী শুরুতে লড়াইটা একটু ঝিমিয়ে যায়নি। হাইস্কোরিং ম্যাচটাতে দর্শকদের চোখ আটকে ছিল অনেক ক্ষণ।

এমনিতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী এ ব্যাটার নজর কাড়ছেন গত ৩ বছর ধরেই। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এই স্বল্প সময়ের মধ্যে পূরণ করেছেন এক হাজারের বেশি রান। গড়টাও মন্দ নয়, প্রায় ৪৪ (৪৩.৯)। আর সেই সাথে তিন সেঞ্চুরি আর ৪ হাফসেঞ্চুরির গল্প তো বড় ইনিংস খেলার সক্ষমতারও প্রমাণ দিচ্ছে।

লিস্ট এ ক্রিকেটেও কম যান না তামিম। গড় কিছুটা কম। কিন্তু ৪২ ইনিংসের ক্যারিয়ারে খেলেছেন ৮ টি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস। যার মধ্যে রয়েছে ৩ টি সেঞ্চুরি ও ৫ টি হাফসেঞ্চুরির ইনিংস।

বয়সভিত্তিক ক্রিকেট। সেই গণ্ডি পেরিয়ে এরপর জাতীয় দলের দ্বারপ্রান্তে। তানজিদ হাসান তামিমের জন্য যাত্রাটা কিন্তু মোটেই সুমসৃণ ছিল না। বাইশ গজের ক্রিকেটের নেশাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে রীতিমত বাবার সাথে লড়াই করতে হয়েছে তাঁকে।

তামিমের বাবা তোজাম্মেল হোসেন বগুড়ার সোনাতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য পরিদর্শক। পড়াশোনা শেষ করে ছেলে চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হবেন, আর দশটা বাবার মতো এমন স্বপ্নই তামিমকে নিয়ে বুনেছিলেন তোজাম্মেল হোসেন। কিন্তু তামিমের নেশা তো ক্রিকেটে।

অবশ্য বাবার কড়া নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ছোটবেলাতেই বগুড়া স্টেডিয়ামের দর্শন পেয়েছিলেন তামিম। আর তার বন্দোবস্ত করেছিলেন মা রেহেনা বেগম। তার পিছনেও ছিল অদ্ভুত এক শর্ত। স্কুলের পরীক্ষায় ভালো ফল করতে হবে তামিমকে। তবেই স্টেডিয়ামের দর্শন পাওয়া যাবে। তামিমও সেই আশ্বাসে বাধ্য ছেলের মতো ভাল রেজাল্ট করতে শুরু করলেন।

এরপর একদিন মায়ের হাত ধরে ক্রিকেট অনুশীলন দেখতে চলে গেলেন বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে। তামিমের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নটা আরো প্রগাঢ় হলো তাতেই। স্থানীয় কোচ মোসলেম উদ্দিনের সাহচর্যে বেড়ে উঠতে থাকলেন। কিন্তু বাবা তোজাম্মেল আগের সিদ্ধান্তেই অনড়। ছেলেকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতেই হবে। ক্রিকেট খেলার অপরাধে তামিমকে বাড়ি থেকে একবার নয়, তিন তিনবার বের করে দিয়েছিলেন।

তবে তামিম ছাত্র হিসেবেও ছিলেন মেধাবী। ২০১৫ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে এসএসসিতে এবং ২০১৭ সালে সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পান তিনি। এরপর ভর্তি হন ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে (এআইইউবি)।

এর মধ্যে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দলে সুযোগ পান তামিম। ততদিনে রাগের বরফ গলতে শুরু করে তামিমের বাবার। এরপর ২০২০ এ যখন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতে ছেলে যখন বীরের বেশে দেশে ফিরছে তখন তো তোজাম্মেল হোসেন এক গর্বিত বাবা।

তানজিদ হাসান তামিমের ক্রিকেট ক্যারিয়ার এরপর থেকেই এগিয়েছে দারুণভাবে। জাতীয় দলের দরজায় এখনো পা রাখতে পারেননি বটে। কিন্তু লাইমলাইটে ঠিকই এসেছেন। ২০২০ এর পর ঘরোয়া ক্রিকেটে ৬ টা সেঞ্চুরি করেছেন। সাথে রয়েছে ১৪ টা ফিফটি। যেন নিজের নামটা নিয়ে এক বিভ্রান্তি ছেঁটে ফেলার মিশনেই নেমেছেন তিনি।

২০০৭ থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাথে জড়িয়ে আছে এক তামিমের নাম। ভবিষ্যতে সেই তামিমের জায়গাটাতেই কি আসবেন ‘নতুন তামিম’? সেটা অবশ্য সময়ই বলে দিবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট প্রাঙ্গনে অবশ্য তাঁর ছদ্মনামই যে ‘নতুন তামিম’।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link