More

Social Media

Light
Dark

সে এক অমর ভালবাসা

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মনে বিস্ময় জাগিয়েছিল ভালবাসা। সখী ভালবাসা কারে কয়! আসলেই তো ভালবাসা কাকে বলে? বেশ জটিল প্রশ্ন। তবে এর উত্তর হয়ত হতে পারেন নাঈম ইসলাম। হ্যা, আমাদের ক্রিকেট পাড়ার চেনা ছেলেটা। ঠিকই ধরেছেন ছক্কা নাঈমের কথাই হচ্ছে। তাঁর এই ভালবাসার পুরোটা জুড়েই রয়েছে শুধুই ক্রিকেট। তিনি ক্রিকেটটাকে ভালবেসে গেছেন নি:স্বার্থভাবে। তাঁর সে ভালবাসায় ছিল না চিমটি পরিমাণ খাঁদ।

বয়সটা ঝুকে গেছে চল্লিশের দিকে, কাগজে কলমে এখন ৩৫। না এখনও বছর পাঁচেক বাকি সে সীমানা পেরিয়ে যেতে। তবে তিনি যেন কোন ধরণের সীমানা দাগে আটকে থাকতে চান না। তিনি যেন নিলাম্বরে উড়ে বেড়াবেন শুভ্র এক পাখি হয়ে। তাঁর আকাশ অবশ্য সবুজ। মাঝে বাইশ গজের শক্ত মাটি। তিনি যে নিবেদিত প্রাণ ক্রিকেটার।

এইতো সেদিন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগেই তো প্রমাণ করলেন। তিনি অদম্য এক সৈনিক। বয়স তো স্রেফ একটা সংখ্যা। সেটা কি আর আটকে রাখতে পারে মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা বাসনা? না পারে না, অন্তত নাঈমের ক্ষেত্রে সেটা প্রযোজ্য। তিনি তাঁর থেকেও বয়সে ঢের ছোটদের সাথে লড়াই করে হয়েছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।

ads

এখনও তিনি প্রস্তুত থাকেন। তিনি আগেও প্রস্তুত থাকতেন ও নিয়মিত পারফরম করতেন। তবে অজানা, অদ্ভুত সব কারণে তিনি বাদ পড়ে যেতেন জাতীয় দল থেকে। ব্যাটার নাঈমের পারফরমেন্সের ঘাটতি কখনোই ছিল না। তিনি যখনই মাঠে নেমেছেন, তখনই ব্যাট হাতে রান করার চেষ্টা করেছেন। তিনি এই কাজটা আজও করে যাচ্ছেন নিয়ম মেনে।

সেই ২০১৪ সালে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে খেলতে নেমেছিলেন। এরপর দীর্ঘ প্রায় আটটি বছর পর জাতীয় দলের খানিকটা কাছে আসার সুযোগ মিলেছে ছক্কা নাঈমের। সদ্য শেষ হওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের পারফরমেরন্সের পর পুরষ্কারটা তো তাঁর প্রাপ্য ছিল। তবে এখানে খানিক বাঁধ সেধেছে বয়স। এই ডিপিএলের পারফরমেন্স দিয়েই এনামুল হক বিজয় সরাসরি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজকে সামনে রেখে দলে জায়গা পেয়েছেন। কিন্তু নাঈমের জায়গা হয়েছে জাতীয় দলের ছায়া দলে।

এটাও তো আর কম নয়। একেবারে দূরে থাকার থেকেও খানিক কাছে থাকা তো হচ্ছে। তবে এই খানিক কাছাকাছি আসতেও তো আর কম অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয়নি তাঁকে। নাঈমের ঘরোয়া টুর্নামেন্টের পারফরমেন্স যদি বিচার করাই হত যথাযথভাবে তাহলে নিশ্চয়ই আরও আগেই তিনি ডাক পেতে পারতেন। অবহেলার শিকার তিনি হয়েছেন। তবে কথায় মিতব্যয়ী নাঈম বরাবরই দোষ দিয়ে গেছেন তাঁর ভাগ্য কিংবা সময়কে।

তবে কখনোই ক্রিকেটের প্রতি তাঁর ভালবাসায় এক চিলতে পরিমাণ ফাটল ধরেনি। জাতীয় দলের থেকে দূরে চলে গেলেও নাঈম কখনোই ক্রিকেট থেকে দূরে যেতে পারেননি। বড্ড বেশি ভালবেসে ফেলেছেন কিনা। ক্রিকেটের প্রতি এমন ভালবাসায় ক্রিকেটও মুগ্ধ। তাইতো যখনই সুযোগ পেয়েছে তাঁকে উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে ক্রিকেট। আর লুফে নেওয়ার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টাই করে গেছেন নাঈম।

তবে নাঈমের এমন প্রত্যাবর্তনে অনেকেরই হয়ত খানিকটা ভ্রু কুচকে যাবে। কারণ হতে পারে বয়স। অনেকের অভিমত হতে পারে তরুণদের সুযোগ দেওয়া হোক। নাঈম যে ক্রিকেট প্রেমে চিরতরুণ সে আলাপটা কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া প্রচেষ্টাও যে কম হবে না। ৩৭ বছর বয়সী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো যখন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের মত এক জমজমাট লিগে খেলতে পারেন তবে নাঈম কি পারবেন না আরেকবার জাতীয় দলে খেলতে?

এমন তো নয় তিনি নিজেকে প্রমাণ না করেই চলে এসেছেন বাংলা টাইগার্সের ক্যাম্পে। ওইদিকে ভারতের প্রায় ৩৭ বছরে পা দিতে চলা দীনেশ কার্তিক নিজের খেলার ধরণে পরিবর্তন এনে আশা করছেন বছরের শেষভাগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে  ভারতের হয়ে খেলবেন। অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন সাথে পারফরমেন্স হোক নিয়ামক। এভাবে জয় হোক নাঈমের ভালবাসার। নাঈমের মত করেই ভালবাসুক সবাই ক্রিকেটকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link