More

Social Media

Light
Dark

নাঈম শেখ এক আশ্চর্য চরিত্র

বেশ কয়েকবার তারিখ ও ধরন পরিবর্তনের পরে, বিসিবির নির্বাচক কমিটি দল ঘোষণা করেছেন ডেডলাইন ডে তে এসে। শনিবার সকাল সাড়ে নয়টায় দল ঘোষণার সীদ্ধান্তও সম্ভবত মিডিয়া সেন্টারে খুব বেশি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে না চাওয়ার কারণেই। প্রশ্ন থেমে থাকে নি। ১৭ সদস্যের দল ঘোষণার পর থেকেই চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এবং সবথেকে বড় সমালোচনা গুলোর একটা নিশ্চিতভাবেই মোহাম্মদ নাঈম শেখের দলে অন্তর্ভুক্তি।

ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে সর্বোচ্চ রান করার পরে, জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে রানের দেখা পাননি নাঈম। আউটও হয়েছেন দৃষ্টিকটুভাবে। রানের দেখা মেলে নি ইমার্জিং এশিয়া কাপেও। উপরন্তু পূর্বের টি-টোয়েন্টি অভিজ্ঞতার কারণে তিনি সমর্থকদের জন্য মাথাব্যাথার কারণও বটে।

নাঈম শেখ এক আশ্চর্য চরিত্র। স্কয়ার অঞ্চল দিয়ে তাঁর ড্রাইভ কিংবা পুল, হুক বা পিক আপ শট দেখলে, প্রতিভা নিয়ে সংশয় জাগে না। পরক্ষণেই আউট হওয়ার ধরন দেখলে মনে হবে, তিনি ক্রিকেটের বেসিকটাই ধরতে পারেন নি। এই সম্ভাবনা কিংবা সমস্যার পরেও নাঈমের দলে অন্তর্ভুক্তিই সঠিক সীদ্ধান্ত।

ads

নাঈম জাতীয় দলে এসেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে। কেবল রান করেছেন এমন নয়, সময়ের চাহিদা মিটিয়ে দ্রুত গতিতে রান করেছেন। ১৬ ম্যাচে ৯১.৬৪ স্ট্রাইক রেটে ৯৩২ রানের পরিসংখ্যান সেই সাক্ষ্যই বহন করে। জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন কেবল মাত্র দুই ম্যাচ। দুই ম্যাচ একজন খেলোয়াড়কে মূল্যায়নের মানদণ্ড হতে পারে না।

একজন খেলোয়াড়কে মূল্যায়ন করার জন্য নূন্যতম খেলার সুযোগ প্রদানের প্রয়োজন রয়েছে। সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও সেই চর্চার শুরু হয় মাশরাফির সময়েই। সেটা বজায় থাকা উচিত শান্ত, লিটন, নাঈম কিংবা যে কোন ক্রিকেটারের জন্যই।

স্কোয়াডে নাঈম শেখের বিকল্প হতে পারতেন জাকির হাসান। লাল বলের ক্রিকেটে তিনি বাংলাদেশের নিয়মিত মুখ। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে ইঞ্জুরির কারনে এই বছরের ডিপিএলে তিনি খেলতে পেরেছেন কেবলমাত্র ৫ ম্যাচ। সেই ৫ ম্যাচে খারাপ খেলেন নি। ৮৭ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ২২৩ রান, আছে ১ টি সেঞ্চুরিও।

কিন্তু, স্যাম্পল সাইজ হিসেবে ম্যাচের সংখ্যা বেশ কম। ইমার্জিং এশিয়া কাপেও রয়েছে একটা হাফ সেঞ্চুরি। ব্যর্থ হয়েছেন বাকি ম্যাচগুলোতে। সামগ্রিকভাবেও জাকিরের লিস্ট ‘এ’ রেকর্ড তার পক্ষে কথা বলে না। ১০৩ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ২৯.৯২ গড় এবং ৮০ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ২৬৬৩। ফলে জাকিরকে অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।

প্রশ্ন হতে পারে, নাঈমকে বাজিয়ে দেখার সময় নিয়ে। যে কোন খেলোয়াড়কে তৈরি করার জন্য বিশ্বকাপের দুইমাস পূর্ব ভালো সময় নয়। এই পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিলো আরো দুই বছর আগে থেকে। যে কোন খেলোয়াড় যে কোন সময় ইনজুরি কিংবা ভিন্ন কোন কারনেও দলের বাইরে থাকতে পারেন। ফলে, বিকল্প তৈরি রাখতে হয়।

কম গুরুত্বপূর্ণ সিরিজে বা ম্যাচে তাদের বাজিয়ে দেখতে হয়। বিসিবি সেখানে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে এই মূহুর্তে এশিয়া কাপে দলকে একজন অপরীক্ষিত ওপেনার নিয়ে যেতে হচ্ছে। একই কথা প্রযোজ্য হতো জাকির হাসান অন্তর্ভুক্ত হলেও।

আরো প্রশ্ন তোলা যায়, ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে, যেখানে নাঈম এতসংখ্যক রান করে এসেছেন। যদিও বর্তমান সময়ে ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো যে কোন সময়ের থেকে উন্নত। কিন্তু এই মানের ক্ষেত্রে নাঈম, জাকির বা অন্য কোন ব্যাটারের ভূমিকা নেই। তারা যেখানে সূযোগ পাচ্ছেন, সেখানেই রান করতে হবে। এবং জাতীয় দলে কিংবা তার আশে পাশে নতুন খেলোয়াড় অন্তর্ভুক্তির জন্য ঘরোয়া লীগকেই মানদন্ড ধরা উচিত।

নাঈমের দলে নির্বাচন দেরীতে হলেও, পদ্ধতির সঠিক প্রয়োগ হয়েছে। তবে, দলে জায়গা ধরে রাখতে পারবেন কি না, প্রমাণ করতে নাঈমকেই। ঘরোয়া লিগ এবং প্র‍্যাকটিস ম্যাচের তাসকিন-ফিজকে ছিড়েখুঁড়ে ফেলা ফর্ম যদি তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও টেনে নিয়ে যেতে পারেন, সমালোচকদের সমর্থক বানাতে সময় লাগবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link