More

Social Media

Light
Dark

একটি নো বল, একটি দুনিয়া কাঁপানো ‘বিপ্লব’

ক্রিকেট খেলাটা কারো কাছে স্রেফ বিনোদন। কারো কাছে আবার হয়তো জীবনের চেয়েও বড় কিছু! পেশাদার ক্রিকেটারের জীবনে নাকি আবেগের জায়গা নেই। যদিও, মাঠে প্রায়ই আবেগের নিয়ন্ত্রন হারান কেউ কেউ। এর মধ্যে অধিনায়কও আছেন। সেসব ঘটনা অনেক বিতর্কেরও জন্ম দেয়

তেমনই এক ঘটনা বলবো এবার। সেটা নব্বইয়ের দশকের ঘটনা। ঘটনা। স্পিন গ্রেট মুত্তিয়া মুরালিধরণের অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় ‘নো’ ডেকে দেন আম্পায়ার। ঘটনায় অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা এতটাই ক্ষেপে যান যে – দল নিয়ে তিনি বের হয়ে যান মাঠ ছেড়ে। বিশ্ব দেখে দুনিয়া কাঁপানো এক বিপ্লব।

ঘটনার শুরু ১৯৯৫-৯৬ সালে বেনসন অ্যান্ড হেইজেস কাপে। এই সিরিজের তীব্র লড়াই করছিলো অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই সিরিজে শ্রীলঙ্কা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার ম্যাচ চলাকালীন সময়ে মুত্তিয়া মুরালিধরনের অফ স্পিনকে ‘চাক’ হচ্ছে বলে নো বল ঘোষণা করেন আম্পায়ার টনি ম্যাককুইলান এবং রস ইমারসন। ওই ওভারে বাকি সব বল লেগ স্পিন করে ওভার শেষ করেন মুত্তিয়া মুরালিধরন।

ads
বিখ্যাত সেই নো-বল কাণ্ড

এই সিরিজের পর বিভিন্ন ধরনের বায়ো মেকানিক্যাল পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয় মুরালিধরনকে। এর পর বোলিং অ্যাকশনে পরিবর্তন এনে আবারো মাঠে ফিরে আসেন মুরালিধরন।

এই ঘটনার তিন বছর পর আবারো অস্ট্রেলিয়া সফরে আসে শ্রীলংকা। এই সফর ছিলো কার্লটন এবং ইউনাইটেড সিরিজ। এই সিরিজে শ্রীলঙ্কার সঙ্গী ছিলো ইংল্যান্ড এবং স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া।

২৩ জানুয়ারি, ১৯৯৯ আবারো মুরালিধরনের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তুলে নো বল ডাকলেন আম্পায়াররা। তিন বছর আগের ঘটনার দুই আম্পায়ার টনি মাককুলান এবং রস ইমারসন এবারো মাঠের আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এইবার আর আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মেনে নেন নি শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা। কারণ আইসিসির অফিসিয়ালরা মুরালিধরনকে বল করার অনুমতি দিয়েছে। মাঠের মাঝখানে আম্পায়ার এবং অর্জুনা রানাতুঙ্গাকে আক্রমণাত্মকভাবে দেখা যায়। এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিলো দুই দলই তাঁদের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন।

আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দল নিয়ে মাঠ থেকে উঠে যান অর্জুনা রানাতুঙ্গা। পরবর্তীতে শ্রীলংকা দলের ম্যানেজার রঞ্জিত ফার্নান্দো, রানাতুঙ্গাকে অনেক বুঝিয়ে ম্যাচ শেষ করে আসতে বলেন। শেষ পর্যন্ত এই ম্যাচে মুরালিধরনের বোলিং ফিগার ছিলো ৭ ওভারে ৪৬ রানে উইকেট শুন্য। এই টুর্নামেন্টে আর ম্যাচ পরিচালনা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি রস ইমারসনকে।

রানাতুঙ্গা যা করেছেন তা ছিলো একটু দেখতে দৃষ্টিকটূ। কিন্তু তিনি প্রমাণ করেছিলেন শ্রীলংকা দল অন্যায় আম্পায়ারিংকে কখনো মেনে নিবে  না। তিনি কোনো বোলারের সাথে এই রকম অন্যায় হোক সেটা তিনি চান না। মুরালিধরন তাঁর অধীনে ২০০ উইকেট শিকার করেছিলেন। রানাতুঙ্গা সবার আগে বুঝতে পেরেছিলেন কি হতে যাচ্ছেন মুরালিধরন। ক্রিকেট বিশ্ব পরবর্তীতে দেখেছে মুরালিধরনের ঘূর্ণি জাদু।

এই ঘটনার জন্য অর্জুনা রানাতুঙ্গাকে জরিমানা এবং নিষিদ্ধ করা হয়। ম্যাচ শেষে ম্যাচ রেফারি পিটার ভ্যান ডার মারভি শুনানি করে রানাতুঙ্গাকে ম্যাচে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য ৬ ম্যাচের জন্য নিষেধাজ্ঞা এবং ম্যাচ ফির ৭৫ শতাংশ জরিমানা করা হয়। এছাড়াও এই ঘটনার পর ১২ মাসের জন্য আইসিসির নজরদারিতে রাখা হয় তাঁকে।

এতোসব ঘটনার পরও বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সমস্যা এড়াতে পারেননি মুরালিধরন। কয়েকবারই তিনি মুখোমুখি হয়েছেন বায়ো মেকানিক্যাল পরীক্ষার। প্রত্যেক বারই পরীক্ষা উত্তরে এসে পারফর্ম করেছেন তিনি। এতো বাঁধা বিপত্তি সত্ত্বেও তিনিই হয়েছেন টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link