More

Social Media

Light
Dark

অন্ধকার হয়ে আসা ‘ফিজ’ অধ্যায়

নব উদ্দ্যমের পালে লেগেছে হাওয়া। তড়িৎ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। নতুন দিনের গান লেখা হচ্ছে। কাব্য হচ্ছে রেকর্ড বইয়ে। হুট করেই যেন সাদা বলের ক্রিকেটে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিতে শুরু করেছে টাইগাররা। এই পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা হবে, প্রশংসা হবে। সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এতসব প্রশংসার ভীড়ে একটা বিষয় আড়ালে রয়ে যাচ্ছে।

বিষয়টা মুস্তাফিজুর রহমানের যাচ্ছেতাই ফর্ম। সাবেক প্রোটিয়া তারকা পেসার অ্যালান ডোনাল্ড বাংলাদেশের বোলিং কোচ হয়ে এসেছেন এক বছর হতে চলল। এই সময়টায় বাংলাদেশের পেস বোলিং ইউনিট হয়ে উঠেছে দুর্ধর্ষ। এই তো সেদিন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে পেসাররা করে দেখিয়েছে অভাবনীয় এক কীর্তি।

আইরিশদের দশ উইকেটের দশটি উইকেটই নিয়েছিল পেসাররা। এটাই যেন অকল্পনীয় এক কীর্তি। বাংলাদেশ তো মূলত ছিল স্পিন বান্ধব এক দল। দলের স্পিনাররাই প্রতিপক্ষের সিংহভাগ উইকেট শিকার করে আসছে বিগত বছরগুলোতে। তবে সে চিত্র পালটে যেতে শুরু করেছে ক্রমশ। সেই ম্যাচটায় একাদশে জায়গা হয়নি মুস্তাফিজুর রহমানের। আইরিশদের দশ উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসেন ও হাসান মাহমুদ।

ads

এই বিষয়টিই একটু চিন্তার কারণ। কপাল জুড়ে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিচ্ছে মুস্তাফিজের এই অফফর্ম। তবে সমস্যাটা আরেকটু গুরুতর। মুস্তাফিজের এই অফফর্ম যেন শেষ হবারই নয়। কিন্তু একটা সময় এই মুস্তাফিজই ছিল বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের প্রধান অস্ত্র। সেই অস্ত্র দূর গোধূলীর আলোতে মিলিয়ে যাচ্ছেন ক্রমশ। অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে মুস্তাফিজের উজ্জ্বল আকাশ।

মুস্তাফিজুর রহমানকে এখন আর টেস্ট ক্রিকেটে বিবেচনা করা হয় না। জোর গুঞ্জন ছিল লাল বলের ক্রিকেটে ফিজের নাকি রয়েছে অনীহা। সেই অনীহার কারণেই তাঁকে এক প্রকার অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মূল উদ্দেশ্য সাদা বলের ক্রিকেটে তাঁর আরও বেশি মনোযোগী হওয়া। তবে সেটা আর হচ্ছে কই!

তাসকিন, এবাদত, হাসানরা নিয়ম করে উইকেট বাগিয়ে নিচ্ছেন। প্রতিপক্ষের মনে কাপণ ধরিয়ে দিচ্ছেন। কেবল মুস্তাফিজই হাটছেন রীতিমত উলটো পথে। শুধুমাত্র ২০২৩ সালের পরিসংখ্যানই বিবেচনা করা যাক। হাসান মাহমুদ, একেবারেই নবাগত এক ক্রিকেটার।

ইনজুরির থাবায় খানিকটা দেড়িতেই তিনি এসেছেন জাতীয় দলে। তবে তিনি এসেই নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রেখে দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যে পরিণত হয়েছেন। এই বছর দুইটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে একটি ফাইফার রয়েছে তার।

তাছাড়া টি-টোয়েন্টিতে তিনি উইকেট বাগিয়েছেন পাঁচটি, পাঁচ ম্যাচে। এবাদত হোসেন কয়েকদিন আগেও ছিলেন টেস্ট বোলার। তবে সে তকমা ছাপিয়ে তিনি সাদা বলের ক্রিকেটেও নিজেকে মেলে ধরতে শুরু করেছেন। ওয়ানডেতে চার ম্যাচে আট উইকেট নিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একই পরিমাণ ম্যাচে তিনি সাতটি উইকেট শিকার করেছেন। এরা ছাড়াও তাসকিন আহমেদ রয়েছেন নিজের ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে।

ইনজুরি ছাপিয়ে মানসিক দৃঢ়তা অর্জন করে এখন তাসকিন রীতিমত অপ্রতিরোধ্য। ২০২৩ সালে পাঁচ ওয়ানডেতে তাঁর শিকার নয় উইকেট। আর একই পরিমাণ ম্যাচ তিনি খেলেছেন টি-টোয়েন্টিতে। ১১ খানা উইকেট পুরেছেন নিজের পকেটে। মোদ্দা কথা সাদা বলের ক্রিকেটে এই বছর অন্তত দুই অংকের ফিগার স্পর্শ করেছেন টাইগার পেসাররা। ব্যতিক্রম স্রেফ মুস্তাফিজুর রহমান।

২০২৩ সালে মুস্তাফিজ পাঁচটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। নিয়েছেন তিন উইকেট। ওয়ানডেতে অবস্থা আরও খানিকটা বেগতিক। কেবল একটি উইকেট এসেছে বিগত চার ম্যাচে। এই চিত্রটাই খানিকটা বিষাদের কারণ। পরিসংখ্যানে শুভঙ্করের ফাঁকি থাকে। তবুও বছরের প্রথম কোয়ার্টারে খুব যে ভাল পারফর্ম করেছেন মুস্তাফিজ সেটা বলার সুযোগ নেই।

সমস্যা আরও খানিকটা গুরুতর হয় পেছনের ঘটনা টেনে নিয়ে আসলে। হঠাৎ করেই যে মুস্তাফিজ পড়েছেন এই অফফর্মের দুষ্টচক্রে, তা কিন্তু নয়। ক্রমাগত তিনি হারিয়ে খুঁজছেন নিজেকে। ২০২১ থেকেই উইকেটের ট্যালিটা ক্রমশ নিম্নগামী। এই সময়টায় তিনি প্রতিপক্ষের মনে বিন্দুমাত্র আতংকের সঞ্চার ঘটাতে পারেননি।

বিবর্তনের সাথে পাল্লা দিয়ে ঠিক কুলাতে পারছেন না ফিজ। তাঁর দেওয়া দুর্ধর্ষ কাটারগুলো এক্সপোজ হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। সেই শক্তির জায়গাটা এখন আর ততটা কার্য্যকর নয়। মুস্তাফিজ নিজের ভাণ্ডারে নতুন কোন অস্ত্র যুক্ত করতে পারেননি। সে প্রচেষ্টাও যে রয়েছে তেমনটা বোঝার উপায় নেই। সামনেই ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। সেখানে তিনি খেলবেন দিল্লী ক্যাপিটালসের হয়ে। সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে একাদশ সুযোগ না পাওয়ার।

কেননা ভীনদেশি খেলোয়াড়ের তালিকায় মুস্তাফিজকে টক্কর দিতে রয়েছেন এনরিচ নর্কিয়া ও লুঙ্গি এনগিডি। সাম্প্রতিক পারফরমেন্সের বিচারে ফিজ রয়েছে বেশ দূরত্বে। সেদিক বিবেচনায় হয়ত মুস্তাফিজ নিজের হারানো ফর্ম ফিরে পাওয়ার পূর্ণ সুযোগটুকুও পাবেন না।

আইপিএল তাঁকে কাঁটাতে হতে পারে সাইড বেঞ্চে বসে। অথচ একটা সময় তাঁকে কেন্দ্র করেই পরিকল্পনা সাজাতো মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স কিংবা সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। নিজের হারানো সেই জৌলুস ঠিক কবে নাগাদ ফিরে পাবেন মুস্তাফিজুর রহমান সেটা হয়ত কারোই জানা নেই। আচ্ছা, মুস্তাফিজ কি আদৌ ফিরবেন স্বরুপে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link