More

Social Media

Light
Dark

মুনিম ঝলক ও বিপিএল ধাঁধা

ডি ক্যাটাগরি, বেজ প্রাইজ মোটে ১৮ লাখ টাকা। তাঁকে ঘিরে টানাটানি হওয়া তো দূরের কথা কথা ড্রাফট অনুষ্ঠানে কেউ আগ্রহই দেখায়নি। অথচ, মুনিম শাহরিয়ার জুম্মনের ভাগ্যটা এমন হওয়ার কথা ছিল না। সর্বশেষ যে টি-টোয়েন্টি আসর হয় দেশের ঘরোয়া অঙ্গনে তাঁর অন্যতম বড় পারফরমারই ছিলেন তিনি। সেদিক থেকে অন্তত একটা দল অন্তত জুটে যাওয়ারই কথা।

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে তিনি রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছিলেন আবাহনীর মত দলের হয়ে। যেখানে আগে থেকেই ওপেনার হিসেবে ছিলেন লিটন দাস ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ১৪ ম্যাচে ৩৫০-এর ওপর রান, ৩০-এর মত গড়, দুটি হাফ সেঞ্চুরি। স্ট্রাইক রেট প্রায় ১৪৫! পারফেক্ট টি-টোয়েন্টি প্যাকেজ। অথচ, সেই মুনিম শাহরিয়ার বিপিএল আলোচনার বাইরে! কেন?

বিপিএলের টিম ম্যানেজমেন্টগুলো কি বুঝে দল বানায়? প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবে, মুনিম শেষ অবধি দল পেয়েছিলেন। ড্রাফটের বাইরে থেকে পরে তাঁকে দলে নেয় সাকিব আল হাসানের দল ফরচুন বরিশাল। সেটাও হয়তো দলে খালেদ মাহমুদ সুজন না থাকলে হত না।

ads

কিন্তু, তারকাবহুল বরিশাল দলের একাদশে জায়গা পাওয়া কি এত সহজ? না, মুনিমের জন্য দল পাওয়ার পরের কাজটা একটু কঠিনই ছিল। দলে নাজমুল হোসেন শান্ত কিংবা তৌহিদ হৃদয়ের মত টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যান আছেন। বিদেশি হিসেবে আসা ক্রিস গেইল ও নিরোশান ডিকওয়েলাও মূলত ‍ওপেনারই।

এখানেই শেষ নয়। অধিনায়ক সাকিব আবার টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই ব্যস্ত নানা পরীক্ষা নিরীক্ষায়। কখনও সৈকত আলী, কখনও জ্যাক লিনটট, কখনও বা ডোয়াইন ব্রাভোকে দিয়ে ওপেন করান তিনি।

মুনিম শাহরিয়ারের সুযোগটা হয় একটু দেরিতেই। চট্টগ্রামের মাটিতে স্বাগতিক চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে খেলতে নেমে করলেন মোটে এক রান। ছোট্ট ঝড়টা জমা করে রাখলেন সিলেটের জন্য।

সিলেটের সবুজের মাঠে দেখা গেল মুনিমের আসল চেহারা। ২৫ বলের ইনিংসটাতে তিনি ব্যাট করেছেন ১৮০ স্ট্রাইক রেটে। ৪৫ রানের ইনিংসে ছিল চারটি চার ও তিনটি ছক্কা। না, খুব বড় হাতি ঘোড়া তিনি মেরে ফেলেননি। তবে, অন্তত তাঁর মত ব্যাটসম্যানের বিপিএল ড্রাফটে অবিক্রিত থাকা যে ভুল – সেটা অন্তত এখন প্রমাণিত।

কে এই মুনিম শাহরিয়ার? – এখন নিশ্চয়ই এমন প্রশ্ন করা অবান্তর। তবে, তাঁর সংগ্রামের গল্পটা বলা দরকার। এক কথায় বললে বলতে হয়, মুনিম হলেন ক্রিকেটের স্বর্ণভূমি ময়মনসিংহ থেকে উঠে আসা একজন তরুণ তুর্কি। ঢাকায় ক্রিকেট নিয়ে সংগ্রাম চালাতে থাকা এক স্বপ্নবাজ। এবং দারুণ এক স্বপ্নের পেছনে ছোটা এক ওপেনার।

আপাতত স্বপ্নটা তাঁর আবার ডানা মেলেছে। মুনিমের এই স্বপ্নের শুরু ময়মনসিংহের নয়াপাড়া থেকে। মেডিকেল কলেজের উল্টো দিকের এই এলাকায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা তার। বাবা একটি বেসরকারি বীমা কোম্পানির চাকুরিজীবি ছিলেন। শুরুতে বাবার কাছ থেকেই ক্রিকেটার হওয়ার প্রেরণাটা পেলেন।

মুনিম তখন টিভিতে আর মাঠে খেলা দেখে এই ক্রিকেটের প্রেমে মজে গেছেন। বাবা ব্যাট-বল এনে দেন; মুনিম যত্রতত্র ব্যাটিং শুরু করে দেন। এমনকি যে মার্কেট থেকে ব্যাট কেনা হয়, সেই মার্কেটে দাড়িয়েও মুনিম ব্যাটিং করেন!

কিন্তু বলাই বাহুল্য যে, বাবা-মায়ের এই প্রশ্রয় লম্বা সময় থাকেনি।ছেলে পড়ালেখা ফাঁকি দিয়ে ক্রিকেটার হোক, এমনটা আশা করেননি বাবা। তিনি চেয়েছিলেন, পড়াশোনাটাই হোক। ফলে মুনিম বিকল্প পথ বেছে নিলেন। স্কুল পালিয়ে মাঠে গিয়ে খেলা শুরু করলেন। কোনোক্রমে লুকিয়ে লুকিয়ে ক্রিকেট কিট জোগাড় করা শুরু করলেন।

এই সময়ে তাকে কোচিং করিয়েছেন হাবিবুর রহমান রহমান অলক। অলকের একজন শিষ্যকে আপনারা চেনেন-মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এ ছাড়া প্রয়াত হায়াতুল ইসলাম হান্নান ও জাকির হোসেনের কাছেও ট্রেনিং করেছেন মুনিম।

মুনিম এই পর্যায়ে ব্রেকটা পেলেন বিভাগীয় অনূর্ধ্ব ১৬ দলে খেলার ভেতর দিয়ে। এখানে ভালো করায় তাঁর ঢাকায় এসে খেলার স্বপ্ন তৈরি হলো। বাড়িতে রীতিমত লড়াই করে চলে এলেন ঢাকায়; তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট খেলতে। এখানে দু বছর শ্যামল বাংলা বলে একটা দলে খেললেন। তারপর প্রথম বিভাগে সিসিএস। ২০১৭ সালে গাজী গ্রুপের হয়ে প্রিমিয়ারে অভিষেক হলো।

মজার ব্যাপার হলো, ওই আবাহনীর বিপক্ষেই প্রিমিয়ার অভিষেক হয়েছিলো তাঁর। সেই আবাহনী থেকে তিনি বিপিএলে। এবার এই যাত্রাটা লম্বা হোক। জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ওপেনারের নিদারুণ অভাব। কে জানে, হয়তো এই অভাবটাও দূর হতে পারে মুনিমের ব্যাটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link