More

Social Media

Light
Dark

ড্যারিল মিশেল, কিউই স্বপ্নভঙ্গের কাব্যে ট্র্যাজিক হিরো

মুম্বাইয়ের উন্মত্ত গ্যালারি বেশ খানিকটা সময়ের নিশ্চুপ বনে গিয়েছিল তাঁর জন্যই। ভারতের ফাইনাল যাত্রায় তিনিই যে বাঁধা হয়ে ছিলেন প্রায় শেষ অবধি। তবে নিঃসঙ্গ লড়াইগুলো সিংহভাগ সময়ে একটা ট্র্যাজেডিরই জন্ম দেয়। ভারত-নিউজিল্যান্ড ফাইনাল ওঠার মহাযজ্ঞে সেই ট্র্যাজিক হিরো হচ্ছেন ড্যারিল মিশেল।

ভারতের দেওয়া ৩৯৮ রানের লক্ষ্য। নিউজিল্যান্ড কেন, যেকোনো দলের জন্য যেন এক সুদীর্ঘ লক্ষ্য। তার উপর বিশ্বকাপে কখনোই এমন লক্ষ্য টপকে ম্যাচ জেতার ইতিহাস নেই। এমন শূন্য ইতিহাস যেন ম্যাচের শুরুতেই জীর্ণ করে তুলেছিল নিউজিল্যান্ড শিবিরকে। তাই তো, বড় রান তাড়ার চাপে শুরুতেই ৩৯ রানের মাঝে দুই উইকেট হারিয়ে ফেলে কিউইরা।

এবারের বিশ্বকাপে সিংহভাগ ম্যাচেই ভারত আধিপত্য বিস্তার করে জিতেছে। সেই আধিপত্য কতটা, তার প্রমাণ মেলে দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষকে ১০০ রানের মাঝেই বেঁধে ফেলার ঘটনা। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকেও সেই মরণ কামড় দেবে কিনা ভারতীয় বোলাররা, এমন সম্ভাব্যতায় যখন ওয়াংখেড়ের গ্যালারির চোখ, ঠিক তখন থেকেই খাদের কিনারায় থাকা দলকে টেনে তোলার দায়িত্ব নেন মিশেল।

ads

আস্তে আস্তে ভারতীয় বোলারদের উপর চড়াও হচ্ছিলেন। তাতে করে স্কোরবোর্ডে রানও যোগ হচ্ছিল দ্রুতই। তবে তা লক্ষ্য থেকে অনেকটা দূরেরই পথ ছিল। কিন্তু সেই দূর পথ অতিক্রম করার কঠিন সব বাঁধাকে একে একে নিজের নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলছিলেন ড্যারিল মিশেল। সঙ্গী ছিল কিউই কাপ্তান কেন উইলিয়ামসন। দুজনে মিলে ৫০ পেরিয়ে শতরান পর্যন্ত নিয়ে গেলেন জুটি।

আর সেই মিশেল-উইলিয়ামসন জুটিতেই আস্তে আস্তে নিস্তব্ধতায় আচ্ছন্ন হতে শুরু করে মুম্বাইয়ের গ্যালারি। একের পর এক বল বাউন্ডারির ওপারে আছড়ে ফেলতে শুরু করেন ড্যারিল মিশেল। ইনিংসের ২৭ তম ওভারে জাদেজার একটি বল তো ১০০ মিটার ছাড়া করেছিলেন এই কিউই ব্যাটার। তখন পর্যন্ত তাঁর ৪ ছক্কার তিনটিই হজম করেছেন জাদেজা।

আবার সেই তিনটি ছক্কার মধ্যে আবার রয়েছে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় ছক্কাটিও। লং অন প্রান্তে বল তুলে ১০৭ মিটার লম্বা ছক্কা হাঁকান মিশেল। জাদেজার বিপক্ষে ছক্কামানব হয়ে ওঠার আগেই অবশ্য পেরিয়েছিলেন ফিফটি। তবে ফিফটি পূরণের পর যেন আরো আগ্রাসী হয়ে ওঠেন এ ব্যাটার। মিশেলের অতিমানবীয় রূপকে থামানোর জন্য ভারতীয় অধিনায়ক জাসপ্রিত বুমরাহ আবারো ফিরিয়ে এনেছিলেন বোলিং প্রান্তে।

কিন্তু রোহিতের সেই চেষ্টাও বৃথা যায়। ড্যারিল মিশেল এবার ছক্কা হাঁকান লং অফের ওপর দিয়ে! আর সেই শটে ২০০ পেরোয় নিউজিল্যান্ড। মিশেলও পৌঁছে যান শতকের দ্বারপ্রান্তে। ধর্মশালায় গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন মিশেল। এবারও সেই একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে প্রায় অসম্ভব এক লক্ষ্যের পিছনে ছুটে তুলে নেন সেঞ্চুরি।

কিন্তু তাঁর সেঞ্চুরির পরই ছন্দপতন ঘটে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে। না। তিনি আউট হননি। তিনি একাই চোখ রেখেছিলেন জয়ের পথে। কিন্তু কেন উইলিয়ামসন হঠাত আউট হয়ে ফেরার পর আর কেউ তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেনি। তবে পুরো ইনিংসে একটা কাজ তিনি অব্যাহতই রেখেছিলেন, পাল্টা আক্রমণ। এমনকি ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া শামির উপরও চড়াও হন তিনি।

তবে এই নিঃসঙ্গ লড়াই আর জয়ের মুখ দেখাতে পারেনি। ড্যারিল মিশেল এক প্রান্তে খেললেও, অন্য প্রান্তে ছিল অন্তসারশূন্য ব্যাটিং। ফলত, একক প্রচেষ্টার পথে একসময় থামতে হয় মিশেলকেও। শামিকে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেতে ধরা পড়েন এ ব্যাটার। ৯ চার আর ৭ ছক্কায় সাজানো ১১৯ বলে ১৩৪ রানের ইনিংসতার সমাপ্তি ঘটে সেখানেই। একই সাথে নিউজিল্যান্ডও অনানুষ্ঠানিকভাবে ম্যাচটি হেরে যায় মিশেলের উইকেটেই।

৩৯৮ রানের লক্ষ্যে নিউজিল্যান্ডকে অসম্ভব এক আশা দিয়েছিলেন ড্যারিল মিশেল। কিন্তু সেই লম্বা দৌড় থেকে কিছুটা আগেই ছিটকে যান তিনি। জয়ের ফিনিশিং লাইন আর ছোঁয়া হয়নি তাঁর। তাই দুর্দান্ত ইনিংস খেলেও তৃপ্ত হতে পারেননি ড্যারিল মিশেল। কারণ দল যে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলে এ ম্যাচ দিয়েই। আবারো নিউজিল্যান্ডের স্বপ্নভঙ্গ। আর সেই স্বপ্নভঙ্গের অধ্যায়ে যেন ট্র্যাজিক হিরো বনে গেলেন ড্যারিল মিশেল।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link