More

Social Media

Light
Dark

নিজেকে ব্যাটসম্যান ভাবতেন না

বয়স ভিত্তিক পর্যায়ে মেহেদী হাসান মিরাজের পরিচয় ছিলো একজন খাটি ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসাবে। অনূর্ধ্ব -১৯ বিশ্বকাপেও খেলেছেন স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসাবেই। বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে সফলও ছিলেন মিরাজ। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার আগে ও পরে তাকে অলরাউন্ডার হিসাবেই গণ্য করতো সবাই। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মিলিয়ে যেতে থাকে তাঁর অলরাউন্ডার পরিচয়।

আজকের সেঞ্চুরি যেনো সেই পরিচয়টা আবার ফিরিয়ে দিলো মিরাজকে। কিন্তু মিরাজ নিজে দিনের খেলাশেষে বলেছেন, তিনি ব্যাটসম্যান হিসেবে জাতীয় দলে সুযোগ পেতেন না।

মিরাজ জাতীয় দলে আসার পর পুরোপুরি পাল্টে যান। মিরাজ পাল্টে যান; নাকি তাকে পাল্টানো হয়েছে এটা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু সব তর্ক বিতর্ক ছাপিয়ে মিরাজ হয়ে ওঠেন এমন একজন ক্রিকেটার, যে বল হাতে দুর্দান্ত ও সহজাত প্রতিভা এবং দলের প্রয়োজন ব্যাটিং করতে পারেন টুকটাক।

ads

তবে টাইমিং, প্লেসমেন্ট ও ফ্লিক শটে কবজির মোচড়, লেগ স্ট্যাম্প থেকে সুইপ, অফ স্ট্যাম্প থেকে সুইপে আজ ব্যাট হাতে দেখা মিলেছে ভিন্ন এক মিরাজের। ব্যাটসম্যান মিরাজকে নিয়ে শুরুতে মানুষের যে আগ্রহ ছিলো সেটা আবার জাগিয়ে দিয়ে তুলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম শতক।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ২২ টেস্টে ১৭.৭২ গড়ে করেছেন ৬৩৮ রান। হাফসেঞ্চুরি ২ টি এবং সেঞ্চুরি ১ টি। ৪৪ ওয়ানডেতে ১ হাফসেঞ্চুরির সাহায্যে ১৭.৮৬ গড়ে করেছেন ৩৯৩ রান। আর ১৩ টি-টোয়েন্টিতে মিরাজের ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ৯৩ রান। নিজের পরিসংখ্যান দেখে মিরাজের অভিযোগ থাকতে পারে; থাকতে পারে হতাশাও। মিরাজ নিজের ব্যাটিং পরিসংখ্যানের দিকে তাকিয়ে বলতেও পারেন ইশ যদি আরো একটু উপরে সুযোগ পেতাম।

তবে ম্যাচ শেষে মিরাজ জানিয়েছেন আগের ব্যাটিং পরিসংখ্যান নিয়ে তাঁর কোন হতাশা নেই। বরং মিরাজ মনে করেন সে যদি ব্যাটসম্যান হিসাবে খেলতো তবে জাতীয় দলে সুযোগই পেতো না।

তিনি বলেন, ‘আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি ব্যাটিংটাও করতে পারি। আমি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি ভালো ব্যাটিং করতে।  ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট আমি বোলার হিসেবে শুরু করেছি। আমি যদি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতাম তবে জাতীয় দলে খেলতে পারতাম না। স্টিল নাউ আমি এখনো বলতেছি ব্যাটসম্যান হিসেবে আমি এখনো বাংলাদেশ দলে খেলতে পারতাম না।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকেই বল হাতে আলো ছড়িয়ে আলোচনায় এসেছিলেন মিরাজ। তাঁর স্পিনে পরাস্ত হয়েই বাংলাদেশের সাথে টেস্ট হেরেছিলো ইংল্যান্ড। মিরাজ জানিয়েছেন অফ স্পিনার ও ব্যাটসম্যান হিসাবে খেললেই তাকে মূল্যায়ন করবে সবাই।

মিরাজ বলেন, ‘দেখেন বাংলাদেশ দলে প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড় অনেক। আমার জন্য সবচেয়ে গুড অপশন আমার জন্য অফ স্পিনার বোলার ব্যাটসম্যান হিসেবে যদি আমি খেলি তাহলে টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচ  এবং অন্য সবাই আমাকে চিন্তা করবে যে বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংটাও সে ভালো করে। কিন্তু ব্যাটিং থেকে বোলিং এটা আমার জন্য ডিফিকাল্ট। আমি সবসময় চেষ্টা করি বোলিংটা ভালো করার জন্য।  বোলিং আমার অস্ত্র, আর ব্যাটিং হল আনাকে কনফিডেন্ট দেয়, বোলিংটাকে সাহায্য করে। আমি চেষ্টা করি দুটোর সমন্বয়ে যতটা ভালো করা যায়।’

ব্যাটিংয়ের কারণে মিরাজের অলরাউন্ডার পরিচয় ভুলে যেতে বসেছিলো সবাই। মিরাজের ব্যাটিং সত্ত্বা ভুলে বোলার হিসাবেই তাকে দেখেছে সবাই। এই ইনিংসটি আবারো অলরাউন্ডার হিসাবে আলোচনায় আনবে তাকে। মিরাজও মনে করেন পরিশ্রম করলে অলরাউন্ডার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব।

তিনি বলেন, ‘আমার নিজের জন্য অনেক বড় একটা পাওয়া। আমি নিজে খুব একটা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম না। কিন্তু এখন আমার মধ্যে বিশ্বাস জন্মেছে যে যদি আমি ব্যাটিং নিয়ে আরো পরিশ্রম করি, কাজ করি তাহলে অবশ্যই ভালো অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব। আমার কথা হল যেহেতু আমার সুযোগ আছে তাহলে কেন আমি সেই সুযোগ কাজে লাগাব না।’

মিরাজ জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো করতে হলে পরিশ্রমও করতে হবে অনেক; শিখতে হবে অভিজ্ঞদের কাছে থেকে। যারা পরিশ্রম করে আত্নবিশ্বাস পান তাদের দেখে।

মিরাজ বলেন, ‘আসলে পরিশ্রম অনেক করতে হবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। যারা অভিজ্ঞ হয়েছে তারা কিন্তু একদিনে হয়নি। এখনও তারা পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আমাদের জুনিয়রদের অভিজ্ঞদের দেখে শেখা উচিত। আমি নিজেও শিখি। ভালো খেলার জন্য তারা যে কষ্ট করেছে আমি তাদের দেখে পরিশ্রম করার আত্মবিশ্বাসটা পাই। আমি মুশফিক ভাইয়ের সঙ্গে ব্যাটিং, ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছি। তার কাছ থেকে অনেক টিপস নিচ্ছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link