More

Social Media

Light
Dark

ফাইনাল ১৯৫৪, বার্নের মিরাকল

যেদিন ফেরেঙ্ক পুসকাসের হাঙ্গেরীর ম্যাজিকাল ম্যাগিয়ার্সের মৃত্যু গটিয়ে নতুন রুপকথা রচনা করেন ফিরিটজ ওয়াল্টারের পশ্চিম জার্মানি। সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে? এই প্রশ্নে এখন যেমন পেলে, ম্যারাডোনা, ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, ইয়োহান ক্রুইফ, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো কিংবা লিওনেল মেসিদের নাম উচ্চারিত হয়।

যদি সেদিন বার্ন মিরাকলের শিকার না হতেন, তাহলে হয়তো পুসকাসের নামটা সবার আগে আসতো। ১৯৫৪ বিশ্বকাপে পুসকাসের হাঙ্গেরি এতটা অপ্রতিরোধ্য ছিলো, সেই বিশ্বাকাপের হাঙ্গেরি মোট গোল করে ২৭ টি, যা এখনও এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। অপরাজিত হয়ে ফাইনালে পৌঁছে যায় পুসকাসের দল। ফাইনালে প্রতিপক্ষ পশ্চিম জার্মানি। যে দলকে গ্রুপপর্বে ৮-৩ গোলে হারিয়ে দেয় হাঙ্গেরি।

বার্ণের ওয়ানকড্রপ স্টেডিয়ামে ৬২৫০০ দর্শক উপস্হিত হয়েছিলো হয়তো হাঙ্গেরির শিরোপা জয়ের সাক্ষী হতে। শক্তিমত্তায় যোজন যোজন পিছিয়ে জার্মানি। কিন্ত ফিরিটজ ওয়াল্টারের দল যে হার মানতে শিখেনি সেটা বার্নে সেদিন ৬২৫০০ দর্শককে করে দেখালো। অধিনায়ক ওয়াল্টার দলের সবাইকে বলছেন, আমরা এই দলটার সাথে গ্রুপপর্বে খেলেছি এটা ভুলে, এই দলকে নতুন প্রতিপক্ষ ভেবে লড়াই করতে হবে।

ads

এই মনোবল নিয়ে মাঠে নামলেন, কিন্তু মাঠে নামার পর হলো উল্টো। ম্যাচের ৮ মিনিটে জার্মান গোলরক্ষক টনি তুরাক যখন গোলপোস্টের ভিতর থেকে বল কুড়িয়ে আনলেন ততক্ষণে পুসকাস,জিজোবরের গোলে ২-০ তে এগিয়ে যায় হাঙ্গেরী। ফুটবল অনিশ্চয়তার খেলা, নাটকীয়তার কত রূপ ভাগ্যের কত রকম ফের, জ্বলে ওঠার জন্য ফাইনাল ম্যাচকেই বেছে নিলেন হেলমুট রান।

২ মিনিট পর ১০ মিনিটের মাথায় ম্যাক্স মোরালক্স ব্যাবধান কমালেন, ১৮ মিনিটে হেলমুট রান গোল করে সমতায় ফিরান দলকে। যে গোলটি বিশ্বকাপের ফাইনালের অন্যতম সেরা গোল। ডি-বক্সের বাইরে থেকে বুলেট গতির শট আশ্রয় নেয় হাঙ্গেরির জালে, তাতে কী? গ্রুপপর্বে ৮-৩ গোলে হারা ম্যাচেও তো এক গোলে পিছিয়ে সমতায় পিরে জার্মানি এরপরতো আর দাড়াতে পারেনি সেদিন স্যান্ডর ককসিসের সামনে।

তাই সবাই ভেবেছে ফাইনালে এমন কিছু হবে, কিন্তু না ফুটবল বিধাতা যে সেদিন ফিরিটজ ওয়াল্টেরের দলের পক্ষে ছিলো। এরপর আক্রমণের বৃষ্টি বর্ষণ হলো জার্মান রক্ষণে। কখনও পুসকাস, কখনও ককসিস, কখনও আবার জিজোবর কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না, বাঁধা হয়ে কখনও গেলবার কখনও জার্মান রক্ষণ, তবে জার্মান গোলকিপার টনি টুরাক সেদিন মোট ১৩ টি সেভ দিয়েছে, যা ১৪ বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের গোলরক্ষকের ১৫ টি সেভের আগ পর্যন্ত রেকর্ড ছিলো, হাঙ্গেরি মোট গোলপোস্টে ২৬ টি শট নেয় যার ১৭ টি অনটার্গেট।

যেখানে জার্মানির হাঙ্গেরির পোস্টে মোট শট ১০ টি। ৮৪ মিনিটে শ্রোতের বিপরীতে অধিনায়ক ওয়াল্টারের কর্নার কিক থেকে আলতো টোকায় হাঙ্গেরির জালে বল পাঠান ফাইনাল হিরো হেলমুট রান। ৮৬ মিনিটে পুসকাস সেই গোল ফেরত দেন, কিন্তু ভাগ্যদেবী যে পুসকাসকে বিশ্বকাপ জিততে দেবে না, সেটায় হয়তো কারণ ছিলো, অফসাইডে গোল বাতিল।

তবুও থেমে থাকেনি ৮৮ থেকে ৯০ মিনিট যে ঝড়টা গেলো জার্মান রক্ষণে, ককসিসের শট বারে, পুসকাসের পাওয়ার শট রুখে দেন টনি তুরাক, রেফারির শেষ বাঁশি বাজার সাথে আনন্দে আত্মহারা জার্মানবাসী, ৫০ বিশ্বকাপে নিষিদ্ধ থাকায় খেলতে না পারার ক্ষোভটা হয়তো এভাবেই জেড়ে দিলেন, আর ফুটবলের অভাগা হয়ে রইলেন পুসকাস।

আর জার্মান নৈপথ্যের প্রথম মহানায়ক বনে যান ফিরিটজ ওয়াল্টার। প্রথম কোনোকিছুই ভোলা যায়না, আর প্রথম বিশ্বজয়ের মুহূর্ত কী ভোলা সম্বব? ১৯৫৪ বিশ্বকাপ জার্মান ফুটবলে আজীবন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link