More

Social Media

Light
Dark

এপিটাফ!

যদি বলি, এই শেষটা লেখা হয়েছিল বছর পাঁচেক আগে?

যদি বলি, ইয়োহান ক্রুইফ বুঝেছিলেন ধ্বংস নেমে আসছে ধীরে ধীরে। তখন কেউ কিছু বলেনি, ভাবেনি কিছুই। ২০১৫ সালে জেতা ট্রেবলের পর কাতালোনিয়ার উচ্ছ্বাস হয়েছে রঙিন চশমা চোখে দিয়ে। যদি একজন সোশিও ভাবতো বাস্তববাদীর মতো, এইদিন নাও আসতে পারতো।

বার্সেলোনার কিছু নেই। নেই অর্থ, নেই সাম্প্রতিক সাফল্য। ২০১৯ সালে মহামারী এসে ভীতও নাড়িয়ে দিয়ে গেল। দলের অবস্থা যাচ্ছেতাই, দরকার নতুন খেলোয়াড়। কিন্তু নতুন খেলোয়াড় তো দুরের কথা, দলে থাকা খেলোয়াড়দেরই বেতন দিতে ঘাম ছুটে যাচ্ছে। নতুন প্রেসিডেন্ট এলেন। আমি পরিস্কার দেখছে পাচ্ছি, দায়িত্ব বুঝে নিয়ে ক্লাবের অবস্থা দেখে বেশ জোরে করেই বললেন ‘খাইছে আমারে’।

ads

হাতে অর্থ নেই। মড়ার উপর খাড়ার ঘা হয়ে লা লিগা নানারকম সমস্যার ঝুলি নিয়ে হাজির। খেলোয়াড় বিক্রি না করে নতুন খেলোয়াড় কেনা যাবে না, যে খেলোয়াড় বিক্রি করা হলো, তার ট্রান্সফার ফি এর একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অঙ্ক ব্যবহার করতে হবে। আয় আর ব্যয়ের হিসাবে সাম্যতা আনতে হবে। বার্সেলোনার মাথায় হাত, আয় তো নেই, খালি ব্যয় আর ব্যয়। বার্সেলোনা কিনেছিল কৌতিনহো, গ্রিজমানকে, সাথে আছে দেমবেলে।

এদের উচ্চ অংকের বেতন দিয়ে পারা যায় না, তার উপরে উমতিতি ও পিয়ানিচের মত একাদশের বাইরের খেয়োয়াড়দের পেছনে ঢালতে হয় বস্তা বস্তা ইউরো। আবার এদিকে মেসির চুক্তি মেয়াদ শেষ। অনেক সমস্যার কারণে চুক্তি থাকতেই আবার নতুন চুক্তি করা গেলো না। মাঝে মেসির সাথেও হলো মনমালিন্য।

বার্সা ভাবল, নতুন মৌসুম আসুক, খেলোয়াড় বিক্রি করে ভারসাম্য এনে মেসির সাথে চুক্তি করা যাবেখন। মেসি নিজেও বেতন কমাতে রাজি। মনমালিন্য হয়েছিল বটে, কিন্তু যাদের জন্য হয়েছিল, তারা ক্লাব থেকে বিদায় নিয়েছে অনেক আগেই। আর ২১ বছরের সম্পর্ক, একটু তো ভাবতেই হয়।

কিন্তু ওমা, বার্সা তো খেলোয়াড় বিক্রিই করতে পারে না। উমতিতির বেতন ১২ মিলিয়ন ইউরো। এতো বেতন তাকে দেবেটা কে? আর সে নিজেও চায় না ক্লাব থেকে নড়তে। গ্রিজম্যানের বেতন চড়া, তাকে বিক্রি করলেও হতে পারে। কিন্তু করা গেলো না। গেলো না কৌতিনহোকেও, আর দেমবেলে তো ইনজুরি নিয়ে বসে আছেন, তাকে দল-বদলের টেবিলেই আনা যাবে না। এখন উপায়?

উপায় নিয়ে এলো খোদ লা লিগা, সিভিসি ইনভেসমেন্ট। এই করপোরেশন ১০% প্রফিটে স্প্যানিশ কম্পিটিশনে ২,৭০০ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করবে,। আর ক্লাবগুলো এই টাকা ফেরত দেবে ৪০ বছর ধরে, খুব কম সুদে। প্রস্তাব তেমন খারাপ না, অন্তত বর্তমান অবস্থার কথা ভাবলে লুফে নেবার মতো প্রস্তাব। তবে বেঁকে বসলো বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ।

এই দুই ক্লাব এই প্রস্তাবের নানা খুঁত বের করে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিল। কিন্তু ঘুরে ফিরে কথা অন্যখানেই। এখান থেকে অর্থ নিলে ভবিষতে সুপার লিগে যোগ দেওয়াতে গোলমাল লেগে যাবে। আর সেখানে থেকে যেমন অর্থ আসবে, তা চিন্তার বাইরে। কেনো এখন এই মামুলি সাহায্য নিয়ে হাত ময়লা করতে হবে?

এই অর্থের যোগান আসলে বার্সা এক নিমিষে মেসির সাথে আবার চুক্তি করতে পারতো। কথা এমনই ছিল। সামনে গাম্পার ট্রফির ম্যাচ, মেসি চুক্তি পাকা করেই সে ম্যাচে নামবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পাশার দান গেল উলটে। দুটো সুযোগ ছিল; হয় লিওনেল মেসি, নয়তো সুপার লিগ। বার্সা বেছে নিল সুপার লিগকেই।

মেসি অপেক্ষা করেছিলেন। ৩৪ বছরে এসে ক্যারিয়ার জীবনের হয়তো সেরা সময় কাটাচ্ছেন, চেয়েছিলেন নিজের ঘরে ফিরতে, ন্যু ক্যাম্পের ঘাসে আবার পা ফেলতে। কিন্তু ক্লাব পারলো না, হয়তো আর পারবেও না। তাই দল-বদলের চুক্তি শেষ হবার অনেক আগেই জানিয়ে দিলো, “মেসি যাচ্ছে, ঘরের ছেলে আর ঘরে ফিরবে না।”

যে গল্প বললাম, হয়ত সবটাই ভুল। বার্সার পছন্দ হয়নি তেবাসের এনে দেওয়া প্রস্তাব। পারেনি আয় আর ব্যয়ের হিসাবে সাম্যতা আনতে। হয়নি খেলোয়াড় বিক্রি, হাতে আসেনি অর্থ, তাই মেসিকে রাখা গেল না। কিন্তু তাতে কি? মেসি যে বিদায় নিচ্ছে, ২১ বছর ধরে চলা সুন্দর একটা স্বপ্ন এক সেকেন্ডে ভেঙে গেছে। ক্যাম্প ন্যুতে কুলেসরা এই মৌসুমেই ফিরবে। কিন্তু আর কখনও নত হয়ে, বিস্ময়ে, পূজনীয় কণ্ঠে চিৎকার করবে না, ‘মেসিই, মেসিই, মেসিই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link