More

Social Media

Light
Dark

মিরাজ সর্বত্র সমান

কোন ঐশ্বরিক শক্তি মিরাজের মধ্যে নেই। বাংলাদেশের তরুণ অলরাউন্ডার মিরাজের বিশেষ কোন বোলিং অস্ত্রও নেই। আবার ব্যাট হাতেও তিনি বেশ সাদামাটা গোছের একজন ক্রিকেটার। তবুও পরিশ্রম আর একটা স্পৃহা যেন মিরাজকে আর বাকি পাঁচটা তরুণ খেলোয়াড় থেকে আলাদা করে। কিছু একটা করে দেখানোর মানসিকতাই যেন মিরাজকে ক্রমশ ভরসার প্রতীক করে তুলছে। বিদেশের মাটিতে তো তিনি যেন আঁধার দিনের আলো।

মেহেদী হাসান মিরাজের টেস্ট অভিষেক হয় ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। অভিষেক টেস্টে ৫ উইকেট নেন তিনি। হয়ত এজন্যই সবাই তাঁকে অলরাউন্ডার কম বোলার হিসেবে ধরে নিয়েছিল। অথচ মিরাজের নেতৃত্বেই ২০১৬ সালে প্রথমবারের মত অনুর্ধ্ব১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। তখন আমরা মিরাজকে জানতাম ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে।

সেবার অসাধারণ ‘অল রাউন্ড’ নৈপুণ্য প্রদর্শনের সুবাদে মিরাজ ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টও নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু জাতীয় দলে আসার পর থেকে তাঁর সেই পরিচয়টা যেন খানিক বদলে যায়।ব্যাটসম্যান মিরাজকে বাংলাদেশ সেভাবে কখনো ব্যবহারই করেনি। গত কয়েকবছরে মিরাজ মূলত বনে গিয়েছিলেন একজন স্পিনার।

ads

টেস্ট ও ওয়ানডে ঘরানায় বাংলাদেশ দলের বোলিংয়ের অপরিহার্য অংশ। তবুও টেস্টে আট নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড আছে মেহেদী হাসান মিরাজের। মিরাজ চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন ব্যাটার হিসেবেও নিজের সামর্থ্য প্রমাণের। কিন্তু অন্যদিকে জাতীয় দলে বোলার হিসেবে প্রত্যাশার চাপ সেই ব্যাপারে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল।

২০২১ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ মিরাজের  বদলে যাওয়ার গল্প জানান দেয়। সেখানে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে সাদা পোশাকে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান মিরাজ। ব্যাট হাতে এরপর খেলেছেন বেশ কিছু ভাল ইনিংস। বড় ইনিংস না খেলতে পারলেও শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে প্রমাণ করেছেন নিজের সামর্থ্যের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও মোটামুটি ভালো খেলেছিলেন। কিন্তু মিরাজের ব্যাটার হিসেবে জায়গাটা লোয়ার অর্ডারে নির্ধারিত রয়ে গিয়েছে। ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে।

সদ্য শুরু হওয়া অ্যান্টিগা টেস্টে বাংলাদেশের অবস্থান এখনো সুবিধাজনক নয়। ব্যাটিং ভরাডুবির স্রোতে গা ভাসিয়েছেন মিরাজও। সেখানটায় তিনি ব্যর্থ। তবে না একেবারেই ব্যর্থতার চাদরে নিজেকে মুড়িয়ে ক্ষান্ত হবার পাত্র নন মিরাজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটারদের কুপোকাত করতে তিনি পিছপা হননি। বরং দলের ঠিক প্রয়োজনের সময়ই তিনি জ্বলে উঠে আদায় করে নিয়েছেন উইকেট।

আহামরি কিছু করার চেষ্টা মিরাজের মধ্যে কোন কালেই ছিল না। বরং তিনি ভরসা রাখেন নিজের সীমিত বোলিং সামর্থ্যে আর ধারাবাহিকতায়। এর ফল তিনি পেলেন ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। সমালোচনার হাত থেকে যেন পুরো দলকে বাঁচালেন চারখানা উইকেট নিয়ে। কাইল মায়ার্স ও জার্মেই ব্ল্যাকউডের মত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটারদের তিনি দেখিয়েছেন সাজঘরের পথ।

বলা হতো দেশের মাটিতে ভালো বোলিং করলেও, ভিনদেশের মাটিতে মিরাজের বোলিং খুব বেশি কার্য্যকর নয়। কিন্তু সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করে মিরাজ ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে দেখালেন দেশের বাহিরেও তিনি দুর্দান্ত বোলিং করতে সক্ষম। এই কাজটা যেন তিনি নিকট অতীতে করে যাচ্ছেন নিয়ম করে। বোলিং আর ব্যাটিং উভয়ক্ষেত্রেই তিনি নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখছেন দেশ-বিদেশে। তিনি যেন বলতে চাইছেন তিনি হবেন বাংলাদেশের কাণ্ডারি।

তবে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ব্যাট হাতে ষোল আনাই ব্যর্থ মিরাজ। দুই ইনিংসেই তিনি কেবল দুই করে মোট চার রান করেছেন। কিন্তু ঐ যে মিরাজের বোলার সত্ত্বা নিশ্চয়ই এই ব্যর্থতা পুষিয়ে দেবে চতুর্থ ইনিংসে। সে জন্য অবশ্য বাকি ব্যাটারদের রান করা চাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link