More

Social Media

Light
Dark

সিরিজ জিতলেও মন ভরলো না

প্রথম ম্যাচের জয়ে স্বস্তি থাকলেও তৃপ্তি মেলেনি স্বাগতিকদের। প্রথম জয়টা অনায়াসে আসলেও দাপট ছিলো না সেখানে। বাংলাদেশের পারফর্মে ঘাটতি ছিলো অনেক। নিজেদের চেনা কন্ডিশনে বাংলাদেশের অপেক্ষা ছিলো মন ভরানো একটি জয়ের।

সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ও সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড পারফরমেন্সে দাপুটে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে, জয়ের ব্যবধানই বলছে আবারো শতভাগ মন ভরাতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। তবে, পারফরম্যান্সের গ্রাফে উন্নতি স্পষ্ট।

তবে, আশাব্যঞ্জক ব্যাপার হল এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়েছে স্বাগতিকদের। মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসানের সাথে এদিন ব্যাট হাতেও উজ্বল ছিলেন অধিনায়ক তামিম ইকবালও। বল হাতে আলো ছড়িয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমানও।

ads

বোলারদের সৌজন্যে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও মাত্র ১৪৯ রানের লক্ষ্য পেয়েছিলো বাংলাদেশ। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা সময় নিলেও জয়টা এসেছে খুব সহজেই। উদ্বোধনী জুটিতে তামিম ইকবাল ও লিটন দাস দুজনই ভালো শুরু করেন। তবে দারুণ শুরু করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি লিটন দাস। আকিল হোসেনের একটু জোরের ওপর করা লেংথ বল পেছনের পায়ে ফ্লিক করতে গিয়ে লাইন মিস করে বসেন এই ওপেনার। এলবিডব্লিউ হয়ে লিটন ফিরে যান ২৪ বলে ২২ রান করে।

লিটনের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত; জুটি বাঁধেন তামিমের সাথে। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তামিম-শান্ত যোগ করেন ৪৭ রান। ব্যাক্তিগত ১৪ রানে জীবন পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি শান্ত। যার বলে জীবন পেয়েছিলেন সেই জেসন মোহাম্মেদেরই নিরীহ এক শর্ট বলে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন শান্ত। শান্তর ব্যাট থেকে আসে ২৬ বলে ১৭ রান।

শান্তর বিদায়ের পর উইকেটে আসা সাকিবকে নিয়ে দেখে শুনে খেলতে থাকেন তামিম। আগের ম্যাচে ৪৪ রানে কাটা পড়লেও এবার অর্ধশতক তুলে নিতে ভুল করেননি তামিম ইকবাল। ৭৫ বলে ৩ টি চার ও ১ টি ছয়ের সাহায্যে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৮তম অর্ধশতক করেন তামিম। অধিনায়ক হিসেবে তামিমের প্রথম অর্ধশতক এটি। অর্ধশতক করার পরের বলেই বাঁহাতি পেসার রেইফারের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে কাট শট খেলতে গিয়ে উইকেটের পিছনে ধরা পড়েন তামিম।

এই ইনিংস খেলার পথে দারুণ এক মাইলফলক স্পর্শ করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডেতে হাজার রান ছুঁয়েছেন এই ওপেনার। জিম্বাবুয়ে ছাড়া এই প্রথম অন্য কোনো দলের বিপক্ষে হাজার রান করতে পারলেন কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৬০৪ রান তামিমের, ১৪০৪ রান সাকিবের ও মুশফিকের ঝুলিতে রয়েছে ১৩৬০ রান।

তামিমের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন মুশফিকুর রহিম। জুটি বাঁধেন সাকিবের সাথে। সাকিব মুশফিকের ৪৯ বলে ৪০ রানের জুটিতেই জয়ের বন্দরে পৌছে যায় বাংলাদেশ।  ৫০ বলে ৪৩ রান করে সাকিব ও ২৫ বলে ৯ রান করে মুশফিক অপরাজিত থাকেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আকিল হোসেন, জেসন মোহাম্মাদ ও রেইফার ১ টি উইকেট লাভ করেন।

এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে আগের ম্যাচের মতোই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলীয় ১০ রানে মোস্তাফিজের বলে ৬ রান করে ফিরে যান সুনিল অ্যামব্রোস। অভিষিক্ত আরেক ওপেনার কেজর্ন ওটলে দেখে শুনে খেললেও তাকে বেশী দূর যেতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। দলীয় ৩৬ রানে মিরাজের প্রথম শিকার হয়ে ফিরে যান কেজর্ন ওটলে (২৪)।

কেজর্ন ওটলে ফিরে যাওয়ার পরই ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পরে ক্যারিবিয়ানরা। একে সাজঘরে ফিরে যান জসুয়া ডা সিলভা (৫), আন্দ্রে ম্যাককার্থি (৩), কাইল মেয়ার্স (০)। জেসুয়া ডি সিলভার উইকেট শিকার করেন মিরাজ আর আন্দ্রে ম্যাককার্থিকে ফেরান গত ম্যাচের নায়ক সাকিব আল হাসান। এবং শান্ত ও মুশফিকের যৌথ প্রচেষ্টায় রান আউটের ফাঁদে পড়েন কাইল মেয়ার্স।

মাত্র ৪১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ ও এনক্রুমান বোনারের ব্যাটে বিপর্যে কাটিয়ে ওঠার চেস্টা করলেও এই জুটিকে থিতু হতে দেননি সাকিব আল হাসান। দলীয় ৬৭ রানে জেসন মোহাম্মদকে (১১) ফিরিয়ে দেন সাকিব। পরের ওভারেই হাসান মাহমুদের প্রথম শিকার হয়ে ফিরে যান এনক্রুমান বোনার (২০)

রেইমন রেফার (২) মিরাজের তৃতীয় শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরলে দলীয় ৮৮ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবিয়ানদের অলআউট হওয়া যখন মাত্র সময়ের ব্যপার তখনই জোসেফকে নিয়ে ইনিংসের সর্বোচ্চ জুটি গড়েন রোভমেন পাওয়েল। নবম উইকেট জুটিতে দুজন যোগ করেন ৩২ রান। আলজারি জোসেফকে (১৭) মোস্তাফিজ ফিরিয়ে দিলে ভাঙে এই জুটি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেষ উইকেট তুলে নিতেও অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশি বোলারদের। শেষ উইকেট জুটিতেও আকিল হোসেনকে সাথে নিয়ে ২৮ রান যোগ করেন পাওয়েল। ইনিংসের সর্বোচ্চ রান করে পাওয়েল (৪১) বিদায় নিলে শেষ হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস। আকিল হোসেন অপরাজিত থাকেন ১২ রান করে।

বাংলাদেশের পক্ষে মেহেদী হাসান মিরাজ ৯.৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ৪ টি উইকেট শিকার করেন। এছাড়া মোস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসান ২ টি করে উইকেট নেন। আগের ম্যাচে অভিষিক্ত হাসান মাহমুদও শিকার করেন ১ উইকেট।

  • সংক্ষিপ্ত স্কোর

টস: ওয়েস্ট ইন্ডিজ

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৪৮/১০ (৪৩.৪) আমব্রিস- ৬, ওটলি- ২৪, ডি সিলভা- ৫, ম্যাককার্থি- ৩, কাইল মেয়ার্স- ০, জেসন- ১১, পাওয়েল- ৪১, বোনার- ২০, রেইফার- ২, জোসেফ- ১৭, আকিল- ১২*; মিরাজ ৯.৪-০২৫-৪, মুস্তাফিজ ৭.৫-৩-১৫-২, সাকিব ১০-০-৩০-২, হাসান ৯-০-৫৪-১, রুবেল ৭.১-০-২৩-০।

বাংলাদেশ: ১৪৯/৩ (৩৩.২) তামিম- ৫০, লিটন- ২২, শান্ত- ১৭, সাকিব- ৪৩*, মুশফিক- ৯*; আকিল- ৯.২-০-৪৫-১, জেসন- ৭-০-২৯-১, রেইফার- ৫-০-১৮-১

ফলাফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী

ম্যাচ সেরা: মেহেদী হাসান মিরাজ (বাংলাদেশ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link