More

Social Media

Light
Dark

মারভান ‘মারভেলাস’ আতাপাত্তু

নয় ইনিংসে ছয়টি ডাকে শুরু, এরপর ছয়টি ডাবল সেঞ্চুরি!- অনেকেই অভিযোগের সুরেই বলেন, ওকে আর কত সুযোগ দেবেন? ওর কী এমন আছে যে ওকে এত সুযোগ দেয়া হয়!

এই ঘটনার কিছু চমকপ্রদ উদাহরণ আছে যা শুনলে আপনার মনে হবে, ক্রিকেট মাঠে যেসব থিংকট্যাংক আছে তাদের কিছুটা হলেও জ্ঞান আপনার আমার থেকে বেশি।

সাংবাদিকরা যে ভাল তাকে ভাল বলতে পারেন, যে খারাপ তাঁকে খারাপ বলতে পারেন, যে মাঝারি তাকে মাঝারিও বলতে পারেন। কিন্তু ক্রিকেটারের ভবিষ্যৎ বলে দেয়া, সেটা মুশকিল (ঝড়ে বক মরা)।

ads

আবার শুধু প্রতিভার মূল্যায়ন করলে, মেসি আর রোনালদোকে পাশাপাশি দাঁড় করালে রোনালদোকে অনেক কোচ বাতিলই করে দেবেন। সাকিবকেও তাই। সাকিবের ক্রিকেটিং ব্রেন ভাল তার মানে এই না যে সাকিবের প্রতিভা আছে, সাকিবের যেটা আছে সেটা হল সময়ের কাজ সময়ে করার বিচক্ষণতা। কাজকে কাজ হিসেবে দেখার বাস্তবিক চিন্তাধারা।

এদিক থেকে ভাবলে অনেকের ক্যারিয়ারই আসলে ব্লুম করার কথা না। শুধু পারফরম্যান্স বিবেচনা করলে, মেরিট না দেখলে।

আজকে চলুন একটা গল্প বলি!

‘ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান আফসোস করে বলেন যে আমার গড়টা ৪০ থেকে গেল কিছু বাজে ইনিংসের কারণে। এখন দেখেন বড় ব্যাটসম্যানরা ৫০ এর নিচে গড়ে ব্যাটই করে না। ভাগ্যিস আমার কিছু ডাবল সেঞ্চুরি ছিল।’

(ক্রিকেট মান্থলি, ২০২০)

‘সর্বোচ্চ স্তরের ক্রিকেটে চাপ থাকে! থাকবেই। সংবাদ মাধ্যম, একাদশে আছি কি না, ক্রিকেট বোর্ড আমাকে নিয়ে কী ভাবছে!’

(ক্রিকেটমান্থলি, ২০২০)

এসব কথাই বলেন, ক্রিকেটের অন্যতম সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান।

মারভেলাস আতাপাত্তু! আমি যখন ক্রিকেট মন দিয়ে দেখা শুরু করি প্রতিটা ম্যাচ। বল বাই বল, তখনকার প্রিয় তিনজন টেস্ট ব্যাটসম্যানদের একজন, বাকি দুজন বোয়েটা ডিপেনার ও ইউসুফ।

আতাপাত্তু ছিলেন খানিকটা অন্য ঘরানার। ইন্ট্রোভার্ট। সামাজিক তো মোটেই না। এমনকি তার বর্তমান জীবন সম্পর্কে জানলেই টের পাবেন কী পরিমাণ ঘরকুনো এই লোক।

ক্রিকেট মান্থলিকে তিনি বলেন, তাঁর বর্তমান জীবনের পুরোটা জুড়ে তার স্ত্রী ও কন্যা।

লেখার শুরু থেকে মাঝের পথে এই আতাপাত্তু নিয়ে গল্পের কারণ হচ্ছে নাজমুল হোসেন শান্তর ৩০০+ বল খেলা। শান্ত সেঞ্চুরি করেছেন, হ্যাঁ সেটা পরিসংখ্যানের খাতায় তার অর্জন। কিন্তু আমার চোখে বড় অর্জন শান্ত উইকেটে আছেন। আজ সকালেও ধৈর্য্যের সাথে ডিফেন্স করছেন। বাজে বলে রান বের করছেন। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের মাত্র সপ্তম ব্যাটসম্যান তিনি যিনি এক ইনিংসে তিনশো বল খেলেছেন।

এই প্রসঙ্গে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক ক্যারেকটার যে মারভান আতাপাত্তু সেটা আমাকে মনে করিয়ে দেন তুহিন সাইফুল ভাই। গতকালই ফোন দিয়ে বলেন, শান্ত-সাদমান-সাইফ এই ঘরানার ক্রিকেটারদের মানসিক একটা ব্যাকিং প্রয়োজন হয়।

আমারও তাই মনে হয়, এক হচ্ছে এরা গ্ল্যামারাস না, এদের সহজেই টার্গেট করা যায় কারণ এদের প্যাশনেট ভক্ত গোষ্ঠী নেই তাই বাঙ্গালি মধ্যবিত্ত তার যাবতীয় ব্যক্তি জীবনের ফ্রাস্ট্রেশন এদের দেখে বা সাকিব আল হাসানের পানি টানা নিয়ে টিটকারি মেরে কাটানোর চেষ্টা করে থাকেন।

আতাপাত্তুও ছিলেন এমন এক ব্যাটসম্যান। যিনি ক্যারিয়ারের প্রথম নয় ইনিংসে মেরেছেন ৬টি ডাক! এই নয় ইনিংসে তার ব্যাটে আসে ৪৮ রান!

কিন্তু তিনি দমেননি! বাদ পড়েছেন বটে। আবার ফিরেছেন। এই ফেরাতেই তার বোর্ডের কৃতিত্ব। যে তাকে ফেরানোর সাহস বোর্ডের ছিল। পরের বারে সে প্রতিদানও দিয়েছেন।

আতাপাত্তু পরের দিকে শ্রীলঙ্কার অধিনায়কত্বও করেন! সফলই বলা যায়, ৬৩ ওয়ানডেতে ৩৫ জয়। আর ১৮ টেস্টের ৮টিতে জয়।

ক্যারিয়ারজুড়েই আতাপাত্তু ছিলেন বিদেশের মাটিতে স্পেশাল! হারারে, বুলাওয়েওতে সেই জিম্বাবুয়ের সাথে খেলা সহজ কাজ ছিল না, সেখানে আছে তার ২৪৯, ২১৬!

লর্ডসে আছে ১৮৫! গ্রস আইলেটে ১১৮। কিন্তু ১৯৯০ সালে অভিষিক্ত মারভানের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি পেতে লেগেছে সাত বছর!

এর মাঝেও ৯২-তে তাঁকে একবার ডাকা হয়, এরপর ৯৪তে ডাকা হয়! শেষ পর্যন্ত ৯৭-তে মোহালিতে সেঞ্চুরির পর তিনি হাফ ছেড়ে বাঁচেন! এবার বোধহয় আমাকে বিশ্বাস করবে লোকে যে আমি ব্যাটিং পারি!

আতাপাত্তু আবার ব্যর্থও হয়েছেন দুটো ডাবল সেঞ্চুরির ফাঁকে! ১৯৯৮ সালের সাত জানুয়ারি করা ২২৩ ও ১৯৯৯ সালের ১৮ নভেম্বর করা ২১৬* এর মাঝে কোনো সেঞ্চুরি নেই তার!

কিন্তু আতাপাত্তু ফিরে আসার পর তাকে বিশ্বের অনেক শক্তিশালী বোলিং লাইন আপও দমাতে পারেনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০৭*। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১*। অস্ট্রেলিয়ার কেয়ার্নসে ১৩৩। নিউজিল্যান্ডের নেপিয়ারে ১২৭! আতাপাত্তুর জীবনের শেষ টেস্ট ইনিংসটি ছিল হোবার্টে ৮০ রানের।

‘এই যুগে! আমি হতাম খুব বোরিং কেউ।’

(ক্রিকেটমান্থলি, ২০২০)

মনে হয় না আতাপাত্তু! এই যুগেও টেস্ট ক্রিকেটেই মহানায়কেরা জন্ম নেন, ভিন্ন নামে হয়তো, কারও নাম পুজারা, কারও স্টিভ স্মিথ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link