More

Social Media

Light
Dark

লিটন দাস, দ্য আর্টিস্ট

বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাস লিখতে বসে ‘লিটন দাস’ নামের আলাদা একটা অধ্যায় রাখার ভাবনা এলে তা মোটেই অমূলক নয়। নি:সন্দেহে তিনি দেশের ইতিহাসের অন্যতম নান্দনিক ব্যাটসম্যান। গুনমুগ্ধরা আরেকটু এগিয়ে তাঁকে বর্তমান বিশ্বেরই সবচেয়ে সুন্দরতম ব্যাটসম্যানের স্বীকৃতি দেন।

বিশেষণটা ভুল নয়। ২০১৯ বিশ্বকাপেই ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লিটনের ব্যাটিং দেখে বলেছিলেন, ‘আজ লিটন তাঁর ব্যাট দিয়ে মোনালিসার ছবি আঁকছেন।’

‘শিল্প’ লিটনের ব্যাটিংয়ের মূল দু’টি দিকের একটি। আরেকটি হল ‘ধারাবাহিকতার অভাব’। ‘ছন্দে যখন থাকেন, তখন তাঁর মত দৃষ্টিনন্দন ব্যাটসম্যান বর্তমান ক্রিকেটে আর নেই, কিন্তু সেই সময়টা আসে কালেভদ্রে’ – তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ অনেকদিনের।

ads

তবে, যত দিন যাচ্ছ, অধারাবাহিকতাকে ছাপিয়ে শিল্পী পরিচয়টাই মূখ্য হয়ে উঠছে লিটনের ব্যাটিংয়ে। ধারাবাহিকতার অভাবটা দিনকে দিন পূরণ করে ফেলছেন তিনি।

চলমান বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপেই তার প্রমাণ মিলছে। গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের হয়ে ডান হাতি এই ব্যাটসম্যান একদম গোড়া থেকেই পারফরম করে যাচ্ছেন নিয়মিত। চারটা ইনিংস খেলে এখন অবধি দু’টো হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন। যে দু’টো ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি নেই সেখানেও করেছেন যথাক্রমে ৩৪ ও ৩৫ রান। আর পঞ্চাশোর্ধ্ব দু’টো ইনিংসই অপরাজিত।

সর্বশেষ মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীর বিপক্ষে খেললেন ৭৮ রানের অপরাজিত ইনিংস। স্ট্রাইক রেট ১৫০’র কাছাকাছি। ৫৩ বলের ইনিংসে ছিল নয়টি চার ও একটি ছক্কা। ওপেনিংয়ে নেমে পুরো ২০ ওভার তিনি ছিলেন উইকেটে। টাইমিং, প্লেসমেন্ট, ফুটওয়ার্ক, আগ্রাসন – কোনো কিছুরই কমতি ছিল না তাতে।

আধুনিক ক্রিকেটটা নাকি ব্যাটসম্যানদের খেলা। যেকোনো মূল্যেই হোক, রান বের করতেই হবে। রান করার কোনো বিকল্প রাস্তা নেই।

যেকোনো মূল্যে রান বের করতে গিয়ে ব্যাটসম্যানদের গুটিকয়েকের মধ্যে কেবল সৌন্দর্য্য টিকে আছে। আজকালকার ধুন্ধুমার টি-টোয়েন্টি যুগে তাই মার্ক ওয়াহর মত কবজির মোচড় খুঁজে পাওয়া দুস্কর। তবে, সেই অভাব মিটিয়ে ফেলতে চলে এসেছেন লিটন দাস, দ্য আর্টিস্ট। তিনি একই সাথে নিখুঁত ব্যাটিং ও আগ্রাসী পাওয়ার হিটিংয়ে বিশ্বাসী।  তাঁর মত কেউ আগে কখনো আসেননি বাংলাদেশ ক্রিকেটে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শুরুর কয়েকটা বছর নড়বড়ে ছিল লিটনের। তবে, সেই বাজে সময়টা যে কাটিয়ে ওঠার আভাস তিনি ২০১৯-২০ মৌসুমে দিয়েছেন। এবার শুধু সেটা এগিয়ে নেওয়ার পালা। এই যাত্রা অব্যাহত থাকলে একটা সময় তাঁর ‘ধারাবাহিক না হতে পারার’ সাবেক গ্লানি মুছে যাবে। আর সেটা হলে বড় লাভ বাংলাদেশেরই হবে।

লিটনের ইনিংসটা বাকিদের জন্য একটা বার্তাও বটে। তিনি স্রেফ নিজের ‘রেগুলার’ কাজটা করে দেখিয়েছেন, যেকোনো উইকেটে, যেকোনো বোলিং অ্যাটাকের বিপক্ষে বড় কোনো ঝুঁকি না নিয়েও নির্বিঘ্নে ১৫০ স্ট্রাইক রেটে দিব্যি ব্যাট করা যায়। টি-টোয়েন্টিতে ‘অ্যাঙ্করিং’ এটাকেই বলে!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link