More

Social Media

Light
Dark

বিশ্বকাপের ছক্কার রাজা

কখনো বল মাটি কামড়ানো শটে সীমানা দড়িতে গিয়ে সজোড়ে আঘাত হানছে, কখনো আবার হাওয়া ভেসে এগারো খানা ফিল্ডারের উপর দিয়ে বল গিয়ে পড়ছে সীমানার বাইরে। এটাই তো ছিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মূলমন্ত্র। সেই ২০০৭ সাল থেকে শুরু। এক ইঞ্চি পরিমাণও বদলায়নি এই ফরম্যাটের মূল উপজীব্য। বরং দিনকে দিন জৌলুশ বেড়েছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের। চার-ছক্কার ছড়াছড়ি এই ফরম্যাটটিকে করেছে তুমুল জনপ্রিয়।

এবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অষ্টম বারের মত বসেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসর। এই আসরেও চার-ছক্কার ফুলঝুরি ফুটছে। অস্ট্রেলিয়ার বিশাল বড় মাঠ ছাপিয়ে ছক্কাগুলো গিয়ে পড়ছে সীমানার বাইরে। দর্শকদের মাতিয়া রাখা ছক্কাগুলো রেকর্ডের বইয়েও জায়গা করে নেয়। বিশাল বিশাল সব ছক্কার গল্প গুলোই থাকছে আজ।

  • জুনায়েদ সিদ্দিকি (সংযুক্ত আরব আমিরাত)- ১০৯ মিটার

আরব আমিরাতে ডান-হাতি মিডিয়াম পেসার জুনায়েদ সিদ্দিকি। আইসিসির সহযোগী দেশটি এবার খেলেছে টুর্নামেন্টের প্রথম পর্ব। সেখানেই নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেই সবাইকে রীতিমত অবাক করে দেন জুনায়েদ। একজন বোলার হিসেবে ব্যাটটাও যে ঠিকঠাক চালাতে পারেন তিনি সেটাই যেন প্রমাণ করেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।

ads

বাঁচা-মরার লড়াইয়ে ১৫৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে বেগতিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় সংযুক্ত আরব আমিরাত। তবে স্বল্প রানের মাথায় উইকেটের নিয়মিত পতনে বাইশ গজে হাজির করে জুনায়েদকে। আর ১৭ তম ওভারের দ্বিতীয় বলেই জুনায়েদ তুলে মারেন। সেই বল ১০৯ মিটার দূরে গিয়ে আছড়ে পরে গ্যালারিতে।

  • মিসবাহ উল হক (পাকিস্তান)- ১১১ মিটার 

পাকিস্তানকে বলা হয় পেসারদের কারখানা। তবে তাই বলে যে সেখানে ব্যাটারদের কোন স্থান নেই তাও কিন্তু নয়। বহু কিংবদন্তি ব্যাটাররা পাকিস্তানের ক্রিকেটকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাদেরই একজন মিসবাহ-উল হক। তিনি অবশ্য একটু রয়েসয়ে খেলা ব্যাটার হিসেবেই ছিলেন প্রসিদ্ধ। তবুও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মঞ্চে হাকানো দূরবর্তী ছক্কার রেকর্ডে তাঁর নামটিও রয়েছে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে তিনি সে কীর্তি গড়েন। তাও আবার অস্ট্রেলিয়ার মত পরাশক্তির বিপক্ষে। টুর্নামেন্টের ১৮তম ম্যাচে দুই দল মুখোমুখি হয়। সেই ম্যাচে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন মিসবাহ। ৬৬ রানের ইনিংসটি তিনি সাজিয়েছিলেন আট চার ও এক ছক্কায়। সেই একমাত্র ছক্কার দূরত্ব ছিল ১১১ মিটার।

  • আন্দ্রে রাসেল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)- ১১১ মিটার

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আর পেশিশক্তি এই দুই শব্দের সাথে জড়িয়ে আছে আরও এক শব্দ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই ফরম্যাটের রেকর্ড দুই বারের চ্যাম্পিয়ন দলটি। তবে স্বর্ণালী সে দিন হয়েছে গত। তবুও রেকর্ড বই থেকে ক্যারবিয়ান খেলোয়াড়দের নাম মুছে ফেলা বড্ড দায়। তেমনই এক নাম আন্দ্রে রাসেল। তাঁকে বরং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা বলা যেতে পারে। মারকাটারি ব্যাটিং আর কার্য্যকর বোলিংয়ের জন্যে বেশ সুখ্যাতি রয়েছে তাঁর।

সেই সুখ্যাতির প্রতিফলন তিনি ঘটিয়েছিলেন ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সেবার সুপার টুয়েলভ রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে তিনি তাঁর পেশি শক্তির প্রমাণ রাখেন বিশ্বের সামনে। মিচেল স্টার্কের বলে তিনি রেকর্ড গড়া ছক্কাটি হাকান। প্রায় ১১১ মিটার দূরে গিয়ে পড়ে সেই বল। রাসেলের বিপক্ষে সেই ইনিংসে পর পর দুইটি ছক্কার প্রহার সহ্য করতে হয়েছিল স্টার্ককে।

  • লিয়াম লিভিংস্টোন (ইংল্যান্ড)- ১১২ মিটার

অনায়াসে ছক্কা হাকাতে পারেন বলে স্বল্প সময়েই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন ইংলিশ ব্যাটার লিয়াম লিভিংস্টোন। বেশ অবলীলায় তিনি বলকে মাঠ ছাড়া করতে পারেন। তাছাড়া একজন ব্যাটার হিসেবে তিনি ধুরন্ধর প্রকৃতির। প্রতিপক্ষের প্রতিটা দূর্বলতার ফায়দা তুলে নিতে তিনি বেশ পটু। ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তিনি রীতিমত তাণ্ডব চালিয়েছেন।

তেমনই এক তাণ্ডবের সামনে পড়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেস সেনসেশন কাগিসো রাবাদা। বিশ্বকাপের এক ম্যাচে লিভিংস্টোন দুই খানা ছক্কা হাকিয়েছিলেন রাবাদার বিপক্ষে। এর মধ্যে একটি স্কয়ার লেগের উপর দিয়ে সীমানা দড়ির বহু দূরে গিয়ে আছড়ে পড়ে। সে শট বল ১১২ মিটার পথ অতিক্রম করে। আর লিভিংস্টোন বনে যান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ দূরবর্তী ছক্কা হাকানো খেলোয়াড়দের দ্বিতীয় জন।

  • যুবরাজ সিং (ভারত)- ১১৯ মিটার

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পদযাত্রাকে ত্বরাণিত করেছিলেন যুবরাজ সিং। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাঁর ব্যাটিং উপভোগ করেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। ভারতকে প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন বানাতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকাটা ছিল তাঁর। সেই বিশ্বকাপেই এক ওভারে ছয় ছক্কা হাকানোর রেকর্ড গড়ে যুবরাজ সিং। তাছাড়া সেই বিশ্বকাপে আরও এক রেকর্ডে নিজের নামটি খোদাই করে লিখে ফেলেন তিনি।

সেবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে খেলতে নেমেছিলেন যুবরাজ সিং। অপর প্রান্ত থেকে তাঁকে বল ছুড়ছিলেন গতিদানব ব্রেট লি। ব্যাস! কোন রকম সাত-পাঁচ না ভেবে তিনি সজোরে ব্যাট চালান। স্কোয়ার লেগ অঞ্চল দিয়ে তিনি মাঠ ছাড়া করেন বল। ১১৯ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করা সেই ছক্কাই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। সেই রেকর্ডের কাছে এখন অবধি কেউ যেতে পারেননি। ছুঁয়ে দেখা কিংবা ভেঙে ফেলার সম্ভাবনাও অদূর ভবিষ্যতে ক্ষীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link