More

Social Media

Light
Dark

জ্বলে ওঠার শেষ অপেক্ষা

সাফ ফুটবলের আগে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার একটা প্রত্যাশা ছিল। সেটি পূরণ করতে ফিফা উইন্ডোতে কিরগিজস্তানে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম দুই ম্যাচে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর আজকে তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে মাঠে নামতে যাচ্ছে জামাল ভুইয়ার দল। ফিলিস্তিন ও কিরগিজস্তানের মতো শক্তিশালী দলের তুলনায় আজকে কিছুটা তরুণ আর কম শক্তিধর দল কিরগিজস্তান অনুর্ধ্ব-২৩ অলিম্পিক দলের মোকাবেলা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল।

তবুও যেন জয়ের প্রত্যাশার কথা বলতে পারছেন না কোচ, খেলোয়াড় কিংবা কর্মকর্তাদের কেউই। যদিও দুই দলের সর্বশেষ লড়াইয়ে জয়টা এসেছিল বাংলাদেশের। সে হিসেবে লাল সবুজ জার্সিধারীদের জেতা উচিত বলে মনে হলেও ’জয়’ শব্দটি মুখ ফুটে বলতে পারছেন না। ২০২০ সালের মার্চে নেপালে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে কিরগিজ অনুর্ধ্ব-২৩ দলের বিপক্ষে আত্মঘাতি গোলের জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ দল।

কিন্তু, চলতি টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সকে সাদামাটা বলতেই হচ্ছে। প্রথম ম্যাচে ফিলিস্তিনের কাছে ০-২ গোলে পরাজয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে কিরগিজস্তান জাতীয় দলের কাছে পরাজয়ের ব্যবধানে বেড়ে দাড়ায় ১-৪। সে কারণেই তেইশ না পেরুনো কিগজিদের বিপক্ষে জয় পাওয়া নিয়ে সংশয় কাজ করছে।

ads

নেপালে পাওয়া জয়ের সুখস্মৃতি মনে করেই নামবে সফরকারীরা। তবে নিজেদের মাঠে খেলা হওয়ায় পরিস্করাভাবেই এগিয়ে থাকবে কিরগিজের বয়সভিত্তিক দলটি। তাদের জয়ের সম্ভাবনা বেশি ধরে নিয়েই তাই দলে থাকা সব ফুটবলারদের এই আসরে খেলানোর যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সেটি আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছেন সহকারী কোচ মাসুদ পারভেজ কায়সার। শিক্ষা আর অভিজ্ঞতা গ্রহনের সফরের শেষ ম্যাচটাও পরীক্ষা নিরীক্ষার হবে বলেই জানিয়েছেন তিনি।

র‌্যাংকিংয়ে ৮৬ ও ৮৭ ধাপ এগিয়ে থাকা দল দুটির বিপক্ষে ভাল খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। র‌্যাংকিংয়ের পাশাপাশি স্কিল, শারিরিক শক্তিতে এগিয়ে থাকার ফলটা মাঠে হাতে নাতেই পাওয়া গেছে। ঘরোয়া আসরে কোটি আর অর্ধ কোটি টাকা পারিশ্রমিকের মাঝে থাকা বাংলাদেশী ফুটবলারদের যে আরও অনেক শিখতে হবে, সেটি পরিস্কারভাবেই প্রতীয়মান হয়েছে।

সে কারণেই সাফ চ্যাম্পিয়নশীপকে সামনে রেখে এই সফরটা দলের জন্য কতটা কাজে দেবে সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ গত চারটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপ পর্বের গন্ডি পার হতে পারেনি বাংলাদেশ। আগামী অক্টোবরের পয়লা তারিখ থেকে আরেকটি দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই শুরু হতে যাচ্ছে। মালদ্বীপের এই আসরে ব্যর্থতা ঘোচানোর মিশন হিসেবে নিয়েছে লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। সে কারণে প্রস্তুতিটা জোর কদমে হওয়া চাই ই চাই।
নিজেদের মান যাচাইয়ের লক্ষ্যে র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা দলের বিপক্ষে ম্যাচ খেলা এই আয়োজন।

ত্রিদেশীয় ফুটবল সিরিজের আয়োজক কিরগিজস্তানের ডাকে তাই সাড়া দিতে এতটুকু বিলম্ব করেনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। স্বাগতিকদের র‌্যাঙ্কিং যেখানে ১০১, সেখানে একধাপ পেছনে ১০২ এ রয়েছে ফিলিস্তিন। পূর্বানুমান করে বলে দেওয়া যায়, ফিলিস্তিন ও কিরগিজস্তানের কাছে হারটা স্বাভাবিক ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের ১৮৮তম স্থানে থাকা বাংলাদেশের। তিন ম্যাচের শেষটির আগে তাই বলাই যায়, সাফের প্রস্তুতি হিসেবে খেলা এই সিরিজে খুব বেশি প্রাপ্তি নেই বাংলাদেশ দলের।

তবে বারবরের মতোই হতাশ না হয়ে লাল-সবুজদের কোচ জেমি ডে এই সফলকে দেখছেন শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা হিসেবে। প্রথম দুই ম্যাচের শিক্ষাও নাকি এটি। প্রতিপক্ষ হিসেবে শেষ ম্যাচে জাতীয় দলের মতো অতটা শক্তিশালী নয় কিরগিজস্তান অলিম্পিক দল। আগামী অক্টোবরের শেষ দিকে এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে খেলবে বাংলাদেশ।

সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে রয়েছে সৌদি আরব, উজবেকিস্তান ও কুয়েত। আর সে কারণেই এশিয়া সেরা এই আসরের আগে অনূর্ধ্ব-২৩ বাছাইপর্বের জন্য কিরগিজ অলিম্পিক দলের বিপক্ষে ফুটবলারদের যাচাই করে দেখবেন জেমি। এই ম্যাচে সিনিয়র খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিতে এই ম্যাচে খেলার জোরালো সম্ভাবনা ফ্রান্সের পঞ্চম স্থরে খেলা মিডফিল্ডার তাহমিদ ইসলামের। গোলরক্ষক মিতুল মারমা ও ডিফেন্ডার আতিকুজ্জামানও খেলতে পারেন।

এই দুই তরুণ খেললে আজই অভিষেক হতে পারে তাদের। কিরগিজ জাতীয় দলের বিপক্ষে চার গোল হজম করলেও একটি গোল করতে পেরেছে বাংলাদেশ দল। মাহবুবুর রহমান সুফিলের গোল কিছুটা হলেও ক্ষত দুর করেছে। সে কারণেই বিশকেকে বড় ব্যবধানে হারের পর কোনো অজুহাত দাঁড় করাননি বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে, ‘শিক্ষনীয় এই সফরে আরও ভাল খেলতে পারত বাংলাদেশ। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে উজ্জীবিত ফুটবল খেললেও কিরগিজস্তানের বিপক্ষে সেটি করতে পারেনি। আমি চাই সাফের আগে দল পজিটিভ ফুটবল খেলুক। চার গোলে হারলেও এই ম্যাচে গতি বাড়িয়ে খেলেছে বাংলাদেশ দল। চার গোল হজম করাটা আমার জন্য বেশ কষ্টদায়ক ব্যপার।’

কিরগিজস্তানের বিপক্ষে খেলা আগের চার ম্যাচের সবকটিতে যদিও হেরেছে বাংলাদেশ। তবে কখনই ৪ গোল হজম করতে হয়নি। বেলারুশ, আজারবাইজান, কাজাখস্তান ও আর্মেনিয়ার ঘরোয়া লিগে খেলা ৭ ফুটবলার নিয়ে খেলতে নামা কিরগিজরা দাপট দেখিয়ে প্রথমার্ধেই দুই গোলে এগিয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে আরও দুটি গোল করে হালি পূরণ করে।
এবার শেষটা ভাল করে দেশের বিমানে উঠতে চায় বাংলাদেশ দল। দু’ম্যাচে ছয় গোল হজম করার বিপরিতে মাত্র একটি গোল করতে পেরেছে দল।

সাম্প্রতিক সময়ে খেলা অন্যান্য টুর্নামেন্টের মতো এই আসরেও ফরোয়ার্ড লাইন ও মিডফিল্ডের দৈন্যতা ফুটে উঠেছে প্রকটভাবে। দুই ম্যাচ থেকে ৯০ ধাপ এগিয়ে থাকা দুই প্রতিপক্ষের সামনে রক্ষণভাগকেও বেশ পরীক্ষা দিতে হয়েছে। তবে এত স্বল্প অবসরে ম্যাচ খেলার ধকলটা নিতে পারেনি বাংলাদেশ দল। হয়তো ড্র কিংবা জয় পেলে এই প্রশ্ন উঠতনা।

শেষ ম্যাচের টার্গেট সম্পর্কে প্রধান কোচ জেমি ডে বলেন, ‘প্রথম দুটি ম্যাচ মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে খেলতে হয়েছে, যেখানে প্রতিপক্ষের র‌্যাংকিং ৮৬/৮৭ ধাপএগিয়ে রয়েছে। সে হিসেবে শেষ ম্যাচে ভালো কিছুর আশা করার অবস্থায় আমরা রয়েছি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রস্তুতির জন্য কিরগিজস্তানে ৮-১০টা ট্রেনিং সেশন করে দুটি ম্যাচ খেলে ফেলেছি। আজকের ম্যাচে বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর দিকে আমাদের মনোযোগ থাকবে। এই ম্যাচে বাকিদের পরখ করতে পারি আমি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link