More

Social Media

Light
Dark

কুলদ্বীপ যাদব ২.০

ভারতীয় ক্রিকেটে ধূমকেতুর মতই আবির্ভাব তাঁর। একটা সময় স্পিনের রহস্যে গোটা ক্রিকেট বিশ্বকে বুঁদ করে রেখেছিলেন। কিন্তু, হঠাৎই যেন ছন্দপতন হল। আঙুলের জারিজুরি একটু একটু করে ফাঁস হতে যেতে লাগলো। জাতীয় দলে জায়গা হারালেন। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও যেন আগের সেই রংটা থাকছিল না কুলদ্বীপ যাদবের।

গত বছর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন ইনজুরির কারণে। এরপর স্ক্যান করে জানা গিয়েছিল কুলদীপ যাদব তাঁর ডান হাটুতে বিশাল এক ইনজুরি বাধিয়ে ফেলেছেন। সেজন্য পরে অপারেশনও করার কথা বলা হয়েছিল তাঁকে।

এছাড়া গতবার কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়েও মূল স্পিনার ছিলেন না তিনি। কেননা কলকাতায় ছিলেন ভারতের আরেকি স্পিনার বরুণ চক্রবর্তীও। ফলে কলকাতার স্পিন আক্রমণকে নেতৃত্ব দিতেন বরুণই। সাথে বিদেশিদের মধ্যে সুনীল নারাইন আর সাকিব আল হাসান তো ছিলেনই। ফলে, কুলদ্বীপকে দরকার পড়েনি কলকাতার। এছাড়া ভারত দলেও সাদা বলের ক্রিকেটে কুলদ্বীপ একটা জায়গায় পিছিয়ে গিয়েছিলেন।

ads

কুয়লদীপের বোলিংয়ের একটা জিনিস নিয়েই প্রশ্ন উঠেছিল। সেটা হচ্ছে সাদা বলের ক্রিকেটে তাঁর বলের গতিটা কম। এছাড়া ইনজুরিও তাঁর ক্যারিয়ার জুড়েই একটা বড় হুমকি ছিল। ফলে বল করার সময় কুলদীপ চাপটা দিতেন মূলত তাঁর পায়ের উপরে। যার কারণেই তাঁর এই হাটুর গুরুতর ইনজুরি।

ফলের গতির এই প্রতিযোগিতায় নিজের জ্বালানিটাই হারিয়ে ফেলেছিলেন কুলদীপ। হঠাতই তাঁর চাকা বন্ধ হয়ে আসছিল। ফলে কুলদ্বীপকে আবার ঠিক রাস্তায় ফিরিয়ে আনার দায়িত্বটা নেন ফিজিও আশিষ কৌশিক।

এই ফিজিও বলেন, ‘ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নটার মুখোমুখি হতে হয়েছিল আমাদের। একজন ক্রিকেটারের কার্যকারিতা ঠিক রেখে কী কিছু করা যায়? আমরা পুরো ব্যাপারটাকে দুটো ভাগ করি। প্রথমটা হচ্ছে তাঁর শরীর যেন স্বাভাবিক অবস্থায় আসে। অর্থাৎ এটা ছিল রিহ্যাবের অংশ।’

অনেক বছরের তথ্য অভিজ্ঞতা দিয়ে খুজে বের করা হলো কুলদ্বীপের জন্য আসলে কোনটি স্বাভাবিক পজিশন। আশিষ বলেন, ‘দ্বিতীয় অংশটা হচ্ছে বায়োমেকানিক্যালি পুরো অংশটা জুড়ে দেয়া। সেটা আমরা করেছি তাঁর বোলিং অ্যাকশন নিয়ে যথেষ্ট গবেষণা করেই। এছাড়া কুলদ্বীপ ও তাঁর কোচদের সাথেও বসেছি আমরা।’

এই কাজগুলো আশিষ তখন করেছেন যখন একটা তত্ব ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠা পেয়ে গিয়েছে। সেটা হচ্ছে কুলদীপ তাঁর বোলিং অ্যাকশনের কারণেই বছরের পর বছর এই ইনজুরিটা বাধিয়েছেন।

আশিষ বলেন, ‘আসলে তাঁর মূল সমস্যাটা ছিল পিভটে যেটা তাঁর হাটুর উপর অনেক চাপ দেয়ার কারণে হতো। এটাই তাঁর ইনজুরির মূল কারণ ছিল। তবে এখন সেটা থেকে কুলদীপ অনেক সরে এসেছে।’

এসব করে সাফল্যটাও পাচ্ছেন কুলদ্বীপ যাদব। এবছর আইপিএলে দিল্লী ক্যাপিটালসের মূল স্পিনার হিসেবে খেলছেন তিনি। এরপর রিকি পন্টিং ও বলেছেন যে আইপিএলের সবগুলো ম্যাচই খেলবে কুলদ্বীপ। কুলদ্বীপ তাঁর এই বিশ্বাসের প্রতিদান দিতেও শুরু করেছেন। চার ম্যাচে ১০ উইকেট পেয়ে নিজের ওপর লাইম লাইটটা ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন। এ যেন কুলদ্বীপের হারিয়ে যেতে বসা ক্যারিয়ারেই নতুন এক অধ্যায়।

প্রথম ম্যাচে হয়েছিলেন প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ। এছাড়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের চাহিদা মিটিয়ে নিজের বলের গতিও অনেকটা বাড়াতে পেরেছেন। এর মধ্যেই নিজেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলের নজরেও নিয়ে এসেছেন। এবার পুরো ব্যাপারটা ব্যাটে-বলে হলেই ফের দেখা মিলবে কুলদ্বীপের হারানো রহস্য।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link