More

Social Media

Light
Dark

শুভ্র রুপকথার নতুন পাতার নব অধ্যায় হোসেলু

রিয়াল মাদ্রিদের রুপকথার রাত যেন শেষ হবার নয়। নতুন নতুন পাতা যুক্ত হয়। সেই পাতায় লেখা হয় নতুন এক অধ্যায়। এবারের অধ্যায় লিখেছেন হোসেলু মাতো। ৩৪ বছরের এক সাদামাটা স্ট্রাইকার, ক্যারিয়ারের প্রায় শেষ বেলায় বনে গেলেন দুনিয়ার সেরা ক্লাবের জয়ের নায়ক। বুড়ো কার্লোর পেছনে থেকে তিনি প্রায় পুরো ম্যাচই দেখেছেন। সাইড বেঞ্চে বসে সম্ভবত নখ কামড়েছেন। সৃষ্টিকর্তার কাছে একটা সুযোগের আবদার করেছেন।

ম্যাচের যখন আর নির্ধারিত সময়ের নয় মিনিটের মত বাকি তখন হোসেলু এলেন মাঠে। ওই নয়টা মিনিট যে ছিল যথেষ্ট। ওই নয়টা মিনিট যে ছিল দীর্ঘতম। একেবারে সাদামাটা ক্যারিয়ার হোসেলুর। সেই ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বর্ণিল আলোর সময় সেই নয় মিনিট।

হোসেলু এই বছর রিয়ালে এসেছেন ধারে। ১১ বছর আগে এই সাদা জার্সির মায়া তাকে ত্যাগ করতে হয়েছিল। ঐ যে তিনি ছিলেন না বিশ্বমানের। রিয়ালের তারকায় ঠাসা দলে একটি ম্যাচই তিনি খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। এরপর ঘুরেছেন দেশ-বিদেশ। স্প্যানিশ লা লিগায় শেষ যে দু’টো দলে খেলেছেন, দুই দলই রেলিগেট হয়ে গেছে।

ads

এমন এক ভঙ্গুর আত্মবিশ্বাস নিয়ে তিনি রিয়ালে এলেন। তিনি জানতেন এখানে খেলার সুযোগ খুব একটা মিলবে না। তাকে স্রেফ একটা বিকল্প হিসেবেই হয়েছিল নেওয়া। তিনি কখনোই হবেন না ‘মেইন ম্যান’। তবুও তিনি এলেন। মূল স্ট্রাইকার তিনি হতে পারবেন না। কিন্তু কোন এক ম্যাচের নায়ক তো তিনি হতেই পারেন। সে ম্যাচটি যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল হিসেবেই বিধাতা তুলে রেখেছিলেন, সেটাও বা কে জানত!

৮১ মিনিটে নামলেন মাঠে। দল তখন পিছিয়ে ১-০ গোলে। বায়ার্ন মিউনিখ তখন তাদের রক্ষণকে করে ফেলেছে শক্তপোক্ত। তেমন রক্ষণ ভাঙা যে দায়। ওই ভিনিসিয়াস নামক ছেলেটা তছনছ করেছে রক্ষণের বা পাশটা। তবুও অতিমানবীয় এক দেয়াল ম্যানুয়েল ন্যুয়ারকে যায়নি টলানো। তবে হোসেলু জানতেন, কোন না কোন ভুল ন্যুয়ার করবেন।

জাত স্ট্রাইকারের মত তিনি ভুলের অপেক্ষা করলেন। একেবারে ন্যুয়ারের সামনে গিয়ে কয়েক পলকের অপেক্ষা। তবে এর আগে কতশত বিনিদ্র রাতের হিসেবটা তো নেই কারও কাছে। ন্যুয়ারের হাত ফসকে বল বেরিয়ে এল। আলতো টোকায় বল জালে জড়ালেন হোসেলু। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর শুভ্র সমুদ্র কোন এক জলোচ্ছ্বাসে পরিণত হল।

তবে সেখানেও যে শেষ হয় না কাজ। ম্যাচটা তো জেতা চাই। বার্নাব্যু দূর্গ তো অক্ষত রাখা চাই। মাত্র তিন মিনিটের মাথায় আবারও স্কোর শিটে নাম ওঠালেন সেই হোসেলু। ৮৭ মিনিটে পিছিয়ে থাকা দলটা ৯০ মিনিট পেড়িয়ে কিছু দূর এগোতেই ম্যাচ জয়ের দ্বারপ্রান্তে।

সবটা ওই ৩৪ বছর বয়সী ধারে খেলতে আসা এক স্ট্রাইকারের কল্যাণে। ম্যাচ শেষে হোসেলু মাটিতে মুখ গুজে দিলেন। তিনি বার্নাব্যুর ঘাসে নিজের চোখের জল দিয়ে লিখে গেলেন, ‘হোসেলু ওয়াজ হেয়ার’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link