More

Social Media

Light
Dark

আইপিএলের ‘ট্রাম্প কার্ড’ যারা

কোনো সন্দেহ ছাড়াই বলা যায় বিশ্বের অন্যতম জমজমাট ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। আইপিএল যেমন নতুনদের নিজেকে খুঁজে পাওয়ার, তেমনি পুরনোদেরও নিজেদের নতুন করে উপলব্ধি করার মঞ্চ। ২০২০ সালের আইপিএলের এমন কয়েকজনকে দেখা গেছে, যারা সত্যিকারের রাজার মত পার্থক্য গড়ে দিচ্ছেন। তারাই এবারের ‘ট্রাম্প কার্ড’।

  • সূর্যকুমার যাদব (মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স)

তিনি মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ২০১৮ থেকেই। গত দুই বছর ধরেই ১৩০+ স্ট্রাইক রেটে রান তুলছিলেন তিনি। যাদবের ভূমিকা ছিল ইনিংসটাকে গড়ে তোলা। এই বছরে এসে তিনি যেন নিজেকেই ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র ৪০.২২ গড়েই রান তুলছেন না, স্ট্রাইক রেটও ১৫৫+। পাওয়ার প্লেতে আক্রমণ করার পাশাপাশি ডেথ ওভারেও ক্যারিশমা দেখাচ্ছেন যাদব।

ads

এই মৌসুমে ১৭ থেকে ২০ ওভারের মধ্যে রান তুলেছেন ২৩৫ স্ট্রাইক রেটে। স্ট্রাইক রেটের ক্ষেত্রে হার্দিক পান্ডিয়া থেকে এগিয়ে থাকলেও পোলার্ডের চেয়ে সামান্য পিছিয়ে আছেন। পোলার্ড এই সিজনে ডেথ ওভারে ২৪১+ স্ট্রাইক রেটে রান তুলেছেন এবার। যাদবের প্রায় সকল টেক্সটবুক শটই আছে, অফ সাইডে প্রচুর রান করেছেন। প্রায় অর্ধেক রান করেছেন উইকেটের পিছনে।

  • শিখর ধাওয়ান (দিল্লী ক্যাপিটালস)

কে এল রাহুলের ধামাকাদার পারফরম্যান্সের পাশাপাশি প্রতি আইপিএলে মায়াঙ্ক আগরওয়াল, পৃথ্বী শ এবং সাঞ্জু স্যামসনের দুর্ধর্ষ পারফরম্যান্সের ফলে শিখর ধাওয়ান প্রায় সবসময়েই চাপে থাকেন, ভারতীয় টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা হারানোর। ২০১৬ থেকে প্রতি আইপিএলেই শিখর ৩৫০+ রান করেছেন, প্রতি সিজনেই রান তোলার গতি ১৩০+। এই বছরের প্রথম ৬ খেলা শেষেও তার স্ট্রাইক রেট ১২২-এর ওপর।

তারপরের যখন ঘোড়া ছুটতে শুরু করল, দুটো করে হাফ সেঞ্চুরি এবং সেঞ্চুরি হয়ে গেল পরের চার খেলায়, তার স্ট্রাইক রেট গিয়ে পৌঁছল ১৪৭.৬৪ তে। আইপিএলে এটাই তার সেরা পারফরম্যান্স। দিল্লি ক্যাপিটালসের সপ্তম খেলা পর্যন্ত তিনি পাওয়ারপ্লেতে ১৫৪.৯২ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন।

  • মোহাম্মদ শামি (কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব)

দিল্লী ক্যাপিটালসে থাকার সময়টায় শামি জায়গা খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন একাদশে। টেস্ট এবং ওয়ানডে স্পেশালিস্ট হিসেবে সবাই চিনত তাকে। সেখান থেকে অবস্থা পুরোপুরি পরিবর্তন হয় গত বছরে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবে যোগ দেয়ার পরে। গত বছরে ১৯ উইকেট পাওয়ার পরে এই বছরের প্রথম ১৩ খেলাতেই তিনি ২০ উইকেটের মাইলফলক পার করে ফেলেন।

অবাক করা বিষয়, ডেথ ওভারে বোলিংয়ের ব্যাপারে শামি বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠছেন। ২০১৯ আইপিএলে, এমনকি এই বছরের শুরুর দিকেও ডেথ ওভার বোলিং-এ প্রচুর রান দিতেন তিনি। মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে করা একটি সুপার ওভার তাকে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দেয়। যেখানে তিনি মাত্র পাঁচ রানকে নিরাপদ রাখার জন্যে টানা ছয়টি ইয়র্কার দেন। সেই থেকে শামির দিনবদলের শুরু।

  • ক্রিস গেইল (কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব)

যিনি নিজেই নিজেকে ইউনিভার্স বস বলে পরিচয় দেন, তাকে নিয়ে এই পরিসরে খুব বেশি কিছু বলার যৌক্তিকতা আছে বলে মনে হয় না। যদিও গত কয়েক বছরে গেইল ধীরগতির হয়ে পড়ছিলেন। একসময় যত দ্রুত রান তুলতে পারতেন, সেই ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছিল।

পাশাপাশি তাঁর দুর্বল ফিল্ডিং এবং রানিং বিটুইন দ্য উইকেটও ভোগাচ্ছিল খুব। ২০১৮ সালে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব নিলামে তাকে ডেকে নেয় তৃতীয় বারে। ২০১৮ এবং ২০১৯ আইপিএলে গেইল রান করেছে ৪০ গড়ে, সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার গত আইপিএলের পর থেকে এই আইপিএলের মাঝামাঝি সময়ে গেইলের গড় ২৪.৪০ এবং স্ট্রাইক রেট ১৩৭.৪৬।

পাশাপাশি কেএল রাহুল এবং মায়াঙ্ক আগারওয়ালের দুর্দান্ত ওপেনিং জুটির কারণে গেইল বাধ্য হন ওয়ান ডাউনে খেলতে। তারপর বাকিটা ইতিহাস। এই আইপিএলেই গেইল প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ১০০০ টি ছক্কার রেকর্ড করেছেন।

  • বেন স্টোকস (রাজস্থান রয়্যালস)

২০১৮ আইপিএলের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড় স্টোকস ২০১৮ এবং ২০১৯ এই দুই আইপিএলেই যেন নিভে ছিলেন। গড় ২০ এর নিচে, কোন হাফ সেঞ্চুরির ব্যাপার নেই। এই বছরে রাজস্থান রয়্যালস  স্টোকসকে নিয়ে একটা জুয়া খেলে ওপেনিং-এ নামিয়ে।

স্টোকসকে সাদা বলের খেলায় ফিনিশার মনে করা হত। কিন্তু সেই স্টোকসের ভূমিকায় পালটে যায় এই আইপিএলের দু’টি ম্যাচজয়ী ইনিংসে। মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে ৬০ বলে ১০৭ আর কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে ২৬ বলে খেলা ৫০ রানের ইনিংসদুটো স্টোকসও সম্ভবত ভুলতে পারবে না।

  • জাসপ্রিত বুমরাহ (মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স)

সময়ের অন্যতম সেরা পেসারদের একজন তিনি। চলতি আইপিএলের পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ম্যাচে প্রায় দু’টি করে উইকেট নিয়েছেন তিনি। গোটা টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের আট ভাগের এক ভাগ উইকেট পেয়েছেন তিনি চলতি আসরে। ডান হাতি এই পেসার মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বড় তারকা, বড় ভরসার নাম। রানের গতি কমানো কিংবা ব্রেক থ্রু এনে দেওয়া – সব ভূমিকাতেই তিনি অনন্য।

  • জেসন হোল্ডার (সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ)

স্রেফ কপাল ভাল ছিল বলেই, এবারের আইপিএলটা খেলতে পারছেন হোল্ডার, ক্যারিবিয়ান টেস্ট অধিনায়ক। চলতি আইপিএলের আগে নিলামে ছিল না তাঁর নাম। মাঝপথেই সানরাইজার্স দলে ইনজুরির মিছিল শুরু না হলে হয়তো তাঁর ডাকও আসতো না। তারপরও অনেক অপেক্ষার পর একাদশে ঠাঁই পেয়েছেন। আর জায়গা পাওয়া মাত্রই নিজেকে মেলে ধরছেন পেস বোলিং এই অলরাউন্ডার। রোজই তিনি বল হাতে উইকেট পাচ্ছেন, কখনো জ্বলে উঠছে তাঁর ব্যাটও। সব মিলিয়ে এবারের আইপিএলের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি এই হোল্ডারকেই বলা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link