More

Social Media

Light
Dark

‘ক্রিকেটে ইগো যোগ করতে হবে’

সেই টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার সময় থেকেই বাংলাদেশের প্রথম শ্রেনীর কাঠামো নিয়ে কথা হচ্ছে। অনেকরকম সুপারিশ করা হয়েছে; অনেক সভা-সেমিনার হয়েছে। আজও পর্যন্ত সমাধাণ হয়নি।

এবার আমরা এই সমস্যার গোড়ার কারণ ও সমাধাণ নিয়ে মুখোমুখি হয়েছিলাম মোস্তফা মামুনের।

বাংলাদেশের শীর্ষ ক্রীড়া সাংবাদিকদের একজন মোস্তফা মামুন। দেশে ও দেশের বাইরে কাভার করেছেন অজস্র ম্যাচ। তৃনমূল ক্রিকেট থেকে সর্বাধুনিক আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটের সাথে পরিচিত তিনি। মাঠে ও মাঠের বাইরে নানাভাবে ক্রিকেট দেখেছেন। ক্রিকেট বিশ্লেষন করে অভ্যস্থ। কালের কণ্ঠের এই উপ সম্পাদক আমাদের ক্রিকেটের সাম্প্রতিক সমস্যা, সমাধাণ ও পথ নিয়ে আলোচনা করলেন।

ads

আপনার মতে টেস্টে বাংলাদেশের ব্যর্থতার কারণ কী, মামুন ভাই?

বাংলাদেশ পারে না, আমাদের সামর্থ্য কম- এটা হলো এক নম্বর পয়েন্ট। দ্বিতীয় পয়েন্ট হলো আমরা যে পারি না, আমাদের যে সামর্থ্য কম; সেটা আমরা মানছি না। আমরা মনে করছি, আমরা আসলে ভালো দল। আমরা মাঝে মাঝে বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করি; মাঠের ক্রিকেট বাদ দিয়ে আমরা অন্য অনেক কিছু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। এটা হয়তো সরাসরি প্রভাব ফেলছে না। কিন্তু এটা আমাদের ক্রিকেটচিন্তায় ঢুকে গেছে এবং একটা মানসিক ভাবনা সৃষ্টি করেছে যে, আমরা তো এই সব কারণে পারি না।

সাধারণ মানুষের এসব চিন্তা কী মাঠের ক্রিকেটকে প্রভাবিত করে?

সরাসরি মাঠের পারফরম্যান্সকে প্রভাবিত না করলেও এটা আমাদের এডমিন্টিস্ট্রেটরদের জন্য একটা এস্কেপ গেট হিসেবে কাজ করে। ফলে তারা মাঠের পারফরম্যান্স বাড়ানোর জন্য যা করা দরকার, তা আর করেন না। এই যে ব্যর্থতাকে ব্যর্থতা হিসেবে না দেখা, এই চিন্তা আমাদের সাধারণ মানুষ পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে তারা আর ব্যর্থতাকে ব্যর্থতা হিসেবে দেখে না। তারা মনে করে, অবচেতনেই মনে করে যে আমরা পারি, কিন্তু আমরা যাতে না পারি এ জন্য সারা দুনিয়া আমাদের বিরুদ্ধে আছে। ফলে আমাদের যে কোনো ব্যর্থতাকে আমরা একটা আড়াল দেই। সাধারণ মানুষ ব্যর্থতাকে ব্যর্থতা হিসেবে দেখে না। ছোট সাফল্যকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখে। আমাদের কর্মকর্তা পর্যায়ের লোক, তাদের জন্য এটা চমৎকার ব্যাপার এবং সাধারণ মানুষ যেভাবে চায়, তারা সেভাবেই করার চেষ্টা করেন।

সাধারণ লোকে তো কেবল দলের ব্যর্থতায় কিছু খেলোয়াড় বদলেই সন্তুষ্ট হয়।

হ্যা, সাধারণ মানুষ হয়তো একজনের জায়গায় আরেকজনকে চাচ্ছে; প্রশাসন তাই করছে। অ্ন্যজনকে খেলিয়ে দিচ্ছে। অন্যজন না পারলে দায় সাধারণ মানুষের। তার ফলে প্রশাসনের উপর কোনো দায় বর্তায় না। ফলে আমাদের যে মৌলিক সমস্যা— আমাদের যে সামর্থ্যের সমস্যা, তা আমরা মানছি না। এটা একটা অসুখের মতো। এই অসুখের চিকিৎসার জন্য ডাক্তার কাছে না গেলে চিকিৎসা হবে না। এটাই হচ্ছে। দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে আমাদের যে সমস্যা, তা আমরা মানছি না। ফলে আমাদের সমস্যা সারছে না। শাক দিয়ে মাছ ঢাকি। কখনো উইকেটের দোষ দেই। অমুককে দোষ দেই। কখনো স্টার প্লেয়ারদের দোষ দেই।

খেলোয়াড়রা টিম হয়ে কী পারফরম করতে পারছেন?

এখানেও একটা মানসিক সমস্যা তৈরি হয়েছে— সেটা হলো সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে। আমরা, সমর্থকরা কী দলের পারফরম্যান্স চাই? নাকি স্টারদের, আমাদের প্রিয় খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স চাই? আমার মনে হয়েছে আমরা দ্বিতীয় দিকে যাচ্ছি। আমাদের ক্রিকেট সংস্কৃতি দ্বিতীয় দিকে ধাবিত হচ্ছে। আমরা প্রত্যেকেই কিন্তু, বিভিন্ন খেলোয়াড়দের ভক্ত। আগে ফেসবুক ছিলো না। আমরা মুন্নার ফ্যান ছিলাম, সাব্বিরের ফ্যান ছিলাম। কিন্তু সেটা মাঠেই ছিলো। কিন্তু এখন ফেসবুকে কার গ্রুপে সদস্য বেশি, কার কম; এ সব নিয়ে তর্ক হয়, লড়াই হয়, উত্তেজনা ছড়ায়। এটার ফলে— আমাদের কাছে আমাদের প্লেয়ারদের সাফল্যই বড় হয়ে দাঁড়ায়। কর্পোরেট পৃথিবী এটাকে অনুসরণ করে এবং তারাও একটাকে ফুলিয়ে দেয়, কাজে লাগে। ফলে আমাদের দলটা দল না হয়ে এগারজন আলাদা মানুষের দল হয়ে গেছে।

আপনি কি মনে করেন এটা খেলোয়াড়দেরও প্রভাবিত করছে? তারাও এই জনগনের চিন্তার মতো করে আলাদা আলাদা খেলোয়াড় হয়ে যাচ্ছেন?

খেলোয়াড়দের অবশ্যই প্রভাবিত করছে। আমি আসছি। ধরি একজন সাকিবের সমর্থক হয়ে তামিমের তীব্র সমালোচনা করছে। যখনই কেউ এই তর্ক বিতর্কে লাগছে, এই তর্কে জেতার জন্য একজন চাচ্ছে তামিম খারাপ করুক। তামিম খারাপ করলে সে তর্কে জিতে যাবে। একই সঙ্গে মুশফিকের গ্রুপ, মুশফিকিয়ান, তারাও চাচ্ছে সাকিবের বেয়াদবি প্রমাণিত হোক। তার মানে একজন সমর্থক একই সাথে বাংলাদেশের দুজন তারকার সাফল্য চাচ্ছে না। তার মানে সে আর বাংলাদেশে সমর্থক থাকছে না। তার মানে বাংলাদেশ দলও বাংলাদেশের মানুষ দ্বারা সমর্থিত হচ্ছে না। এটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকে। ফলে দলের প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসা নাই। আজকের দিনে অবশ্যই এই ব্যাপারগুলো খেলোয়াড় পর্যন্ত পৌছে যায়। ফলে তারা যে এতে প্রভাবিত হন না, এটা বলা যায় না।

আপনি বলছিলেন, স্টারদের কম্ফোর্ট জোনে রাখাটাও একটা বিপদের কারণ হয়েছে?

হ্যা। আমাদের এডমিনিস্ট্রেশন চায় যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুশি থাকুক। এই খুশি রাখতে গিয়ে আমরা যে কাজ করা দরকার তা করি না। প্রশাসকরা মনে করছে টিম ভালো; কিন্তু পারে নাই। মানুষ এটা মেনে নিচ্ছে, আমরাও মেনে নেই। আমাদের তো এটাই কমফোর্ট জোন। এর কারণে আমরা হাথুরুসিংহেকে আমরা জাতীয় ভিলেনে পরিণত করেছি। উনি টিম-গেমকে গুরুত্ব দিয়ে স্টার ক্রিকেটারদের কমফোর্ট জোনটা ভেঙে দিয়েছিলেন। এটা ভেঙে দেওয়ার কারণে প্লেয়ার-পূজক সমর্থক গোষ্ঠীর কাছে সে অপ্রিয় হয়ে গেছে। আমরা তাই হাথুরিসংহের ক্রিকেট চিন্তা নিয়ে ভাবি নাই; বরং তার অন্যান্য বিষয়ে দেখেছি। এক ইন্টারভিউতে সে আমাকে বলেছিলো, বাংলাদেশের মতো দেশে স্বল্প সময়ের সাফল্য লাগবে। এখানে তাই স্বল্প সময়ে সাফল্য লাগবে এবং পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদের জন্য কাজ করতে হবে। আমি যদি পাঁচ বছরের পরিকল্পনা নেই এবং এই পাঁচ বছর যদি বাংলাদেশ হারতে থাকে, তাহলে তো হবে না। হাথুরুসিংহের সময়ে আমরা এই টেস্টগুলো (আফগানিস্তান বা ওয়েস্ট ইন্ডিজ) জিততাম। এখন সেগুলোই হারছি। দেশের মাটিতে তার সময়েই টেস্ট জিততে শুরু করেছিলাম। ওয়ানডেতেও আমরা ভারত, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা; তার সময়েই জিতেছি।

হাথুরুসিংহে তো আমাদের প্রতিষ্ঠিত তারকাদের নড়বড়ে করে দিচ্ছিলো।

সেটা কী খুব ভুল ছিলো? আমরা আমাদের সিনিয়র খেলোয়াড়রদের নিয়ে বেশি প্রোটেক্টিভ। যে পঞ্চপাণ্ডব— তারা আমাদের অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে, কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এর পরের লেভেলে নেওয়ার ক্ষমতা মনে হয় তাদের নাই।

এখন এই চক্র থেকে বের হওয়ার উপায় কী?

আমাদের প্রথম কথা হলো আমাদের সামর্থ্য কম, এটা মানতে হবে। দ্বিতীয় হলো, আমরা অমুকের জায়গায় অমুক, তার জায়গায় অমুক (এ রকম করা) দলের সামগ্রিক মান উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখে না। অমুক থাকলেই পারতাম; এই চিন্তার মানে হলো, আমরা ঠিকই আছি। আরো একটা ঘটনা ঘটে, আমরা জিতলে কোনো কিছু রিভিউ করি না। জিতলে সব ভালো। হারলে সব গেলো। আমরা শেষ ম্যাচে মিরাজের ব্যাটে জিতে পারতাম। তখন কিন্তু মুশফিকের আউট হওয়া, মিরাজের আউট হওয়া— এগুলা কিন্তু আর আলাপ করতাম না। আমরা আগে জিতলেও ব্যর্থতার কথা ভাবি নাই।

হাথুরুসিংহে অলআউট স্পিন আক্রমণ সাজিয়ে সাফল্য পাওয়ার রেসিপি শুরু করে গেছেন। সেটাকে কীভাবে দেখেন?

আমরা একটা স্পিন-নির্ভর দেশ, অথচ বল টার্ন করাতে পারে, এ রকম স্পিনার আমাদের নাই। স্পিনারদের প্রধান গুণ হলো টার্ন। সাকিবের ব্যাপারটা আলাদা। তার ব্যাটসম্যানদের পড়ার আলাদা গুণ আছে এবং নিজের লেন্থ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আছে। কিন্তু বাকি যারা, ধরো মেহেদি, ওর টার্ন কিন্তু উইকেট নির্ভর; এবং সেটাও স্পিন উইকেট না, বরং অপ্রস্তুত উইকেট, লো উইকেট, স্লো উইকেট। এটা দিয়ে কিন্তু হবে না। ভালো টার্নার হলে দক্ষিণ আফ্রিকায় বা অস্ট্রেলিয়ায়ও পারব না। শেন ওয়ার্ন অস্ট্রেলিয়ায় উইকেট পায়নি? শুধু সিডনি নয়; অন্যান্য জায়গায় পায়নি? ইমরান তাহির কি ডারবানে উইকেট পাচ্ছে না? সুতরাং কেউ যদি টার্নার হয়, তাহলে সব জায়গায় টার্ন করাতে পারে। হাথুরুসিংহের সময়ে আধা-প্রস্তুত উইকেট বানানো হতো। সে ধরনের উইকেটে তার বোলার ছিলো মেহেদি। আমাদের জয়ের সময়ে আমরা ব্যর্থতার জায়গাগুলো রিভিউ করি না। ফলে আমাদের উন্নত জায়গা তৈরি হয়নি। ফলে সাকিব অসাধারণ কিছু না করলে আমাদের আসল অবস্থা বেরিয়ে পড়ছে।

আমাদের খেলোয়াড়দের অল্পে সন্তুষ্ট না হওয়ার কথা বলছিলেন।

হ্যা। চট্টগ্রামে মেয়ার্স যে ইনিংস খেললো বিরুদ্ধ কন্ডিশনে, কেপটাউনে বাংলাদেশের কোনো অভিষিক্ত— মনে করি রাবাদার বলে দুইশ রানের ইনিংস খেলতেছে, জিনিসটা কিন্তু একই রকম। সে দুইশ করতে পারছে কেনো— সে জানে সেই এ রকম কিছু না করলে তাকে কেউ মনে রাখবে না। বাংলাদেশের খেলোয়াড় ৮০ করলে মনে করে, আর কেউ তো পারে নাই, সে তো ৮০ করছে। তাতেই হবে। সামান্য সাফল্যে এতো খুশি হলে, বড় সাফল্যের ক্ষুধাটা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে আমাদের যা করা উচিত, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের ধাক্কা দেওয়া উচিত। যেমন তুমি বাংলাদেশ দলে খেলতেছো, তোমাকে ভালো খেলতে হবে। সেটা না পারলে তুমি যদিও মেধাবী হও না কেনো, যদিও অভিজ্ঞ বা বয়সী হও না কেনো, কাজে দেবে না।

যাদের আমরা চোখের সামনে দেখছি, সেই তারকারা তো মেয়ার্সের মতো পারছেন না। তাহলে উপায়?

আমাদের কিছু তরুণ খেলোয়াড়কে প্রোমোট করতে হবে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কিছু খেলোয়াড়দের মধ্যে আমি সেই সাহসটুকু দেখতে পাই। বিপিএলেও দেখেছি। তাদের মধ্যে একটা ভয়হীন ব্যাপার আছে। আসলে এভাবে পরের ধাপে তো যেতেই হবে। ভারতের ক্রিকেট যে অবস্থায় আছে— সৌরভ একটা জায়গায় এনেছে। তারপর ধোনি এগিয়ে নিয়েছে, এরপর কোহলি। এখন এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে, কোহলিকে ছাড়াও ভারত নিশ্চিন্তে টেস্ট জিতে আসতেছে। এটার কারণ হলো ভারতের আইপিএল জেনারেশন। যেমন রিশাব পান্ত, শ্রেয়াস আয়ার। ভারতীয় বোর্ড বা দর্শক কিন্তু প্রোটেক্টিভ হয়নি। তারা যদি সৌরভে আটকে থাকতো, তাহলে ধোনি আসতো না; ধোনিতে আটকে থাকলে কোহলি আসতো না। ২০১২ সালে শচিনকেও এক রকম সারেন্ডার করতে হয়েছে। এটা আধুনিক প্রযুক্তির মতো। নতুন একটা ফোন ছয় মাস বা এক বছর বদলে যায়। ক্রিকেট ওই জায়গায় নেই যে, এক চিন্তা দিয়ে ১০ বছর একটা চিন্তা দিয়ে হবে। আমাদের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ওই মানসিকতা দেখি। জাতীয় দলে সাকিবের মতো চিন্তা কিন্তু সবার মধ্যে নেই।

স্পেশালি আমরা বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচে পারছি না কেনো?

বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচ খেলোয়াড় খেলতে চায় না। বোর্ড চায় না। স্পন্সর চায় না। আমরা কাভার করতে চাই না। চাওয়ার জায়গায় নিতে হবে। যে ফরম্যাটে বাংলাদেশ চার দিনের ক্রিকেট হয়, তাতে প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা নাই। নিয়মরক্ষার ম্যাচ দিয়ে হবে না।

এই চাওয়ানোর জন্য করনীয় কী?

এটাকে আরো চাপের জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। জিতলে এমন প্রাপ্তি হবে, হারলে এমন ক্ষতি হবে; এমন একটা জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। আমাদের খেলোয়াড়দের একটা সমস্যা কি, তাদের নার্ভ শক্ত হয় না। তারা বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে খেলে না। বিপক্ষ সমর্থকদের সামনে, প্রতিকূল উইকেটে আমরা তেমন খেলি না। ফলে আমাদের খেলোয়াড়দের নার্ভ শক্ত হয় না। আমাদের খেলোয়াড়রা ইংল্যান্ডে বা অস্ট্রেলিয়াতে খেললে, তাদের চেয়ে আমাদের দর্শক বেশি হয়। এ কারণে আমি মনে করি আমাদের বেশি বেশি ভারত সফর করা উচিত। ভারত একমাত্র দেশ, যেখানে আমাদের চেয়ে ওদের দর্শক বেশি হয়। বাংলাদেশ প্রায়ই ভারতের সাথে একচেটিয়াভাবে হারে। আমি ভেবে দেখেছি— ভারতের সাথে তাদের দর্শক বেশি থাকে। তখনই বাংলাদেশ ভেঙে পড়ছে। আমাদের মানসিক শক্তি তৈরি হচ্ছে না।

বিরুদ্ধ-কন্ডিশনে আমরা অভ্যস্ত না। এই অভ্যস্থ আমরা কীভাবে হতে পারি? আমাদের কাঠামোতে কী পরিবর্তন আনা দরকার?

আমার কাছে মনে হয় এটা ভাবা উচিত। যেমন এক সময় আবাহনী-মোহামেডান ছিলো। আমাদের ক্লাব ক্রিকেটের সেই দিন আর নেই। এখন আমাদের তাকাতে হবে বিপিএলের দিকে। আমাদের এমনভাবে দলের বানাতে হবে, সেখানে ইগো আনতে হবে।

তারমানে কী প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটও আপনি ফ্রাঞ্চাজিভিত্তিক করার সুপারিশ করছেন?

হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ফ্রাঞ্চাচাইজিভিত্তিক হতে পারে। দেখুন, বাকী টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর হুবহু অনুসরণ করলেই চলবে না। অন্য দেশের কাছে প্রথম খেলা ছিলো টেস্ট ক্রিকেট। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়েকে বাদ দিলে অন্য টেস্টখেলুড়ে দেশের কাছে টেস্টই ছিলো প্রথম খেলা। ১৯৭১ সালে ওয়ানডে এলো। কিন্তু তাদের বেসিক ক্রিকেট টেস্ট কিন্তু আক্রান্ত হয়নি। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে ওয়ানডে আমাদের মূল ক্রিকেট। কারণ, ওটা দিয়েই শুরু করেছি আমরা। এটার কারণে আমাদের টেস্ট প্রভাবিত হয়েছি। টি-টোয়েন্টি এসে যেটা করেছে, আমাদের আগ্রহ আরও অন্য দিকে গেছে। অন্যান্য দলের কাছে টেস্টই প্রথম পছন্দের ক্রিকেট। সেখানে যারা ভালো খেলে, তারা টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতেও ভালো করেছে।

কিন্তু এ অবস্থা থেকে বেরিয়েও তো টেস্ট খেলতে হবে।

আমাদের দুটি জিনিস করতে হবে, আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ইগো যোগ করতে হবে। সেটা করা গেলে খেলোয়াড়রাও আরো সিরিয়াস হবে। এটা ভাবা যেতে পারে। একই সাথে উইকেট বানাতে হবে প্রোপার উইকেট। টেকনিক্যাল দিক থেকে সেটা টেস্টের মতোই হতে হবে। আমাদের টপ খেলোয়াড়দের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলা নিশ্চিত করতে হবে।

খেলোয়াড়রা বলেন যে, প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে টাকা বাড়ালেই টপ খেলোয়াড়দের এই আগ্রহটা নিশ্চিত হবে। আসলেও কী তাই?

এটা তো আরেকটা সমস্যা। টাকা বাড়ালেই সেই টাকা বোর্ডকে দিতে হয়। বোর্ড এভাবে কতকাল এবং কত বেশী ভর্তুকি দেবে? এভাবে তো হয় না আসলে। আইপিএলে একজন খেলোয়াড়কে ১০-২০ কোটি টাকা দিচ্ছে। ওখানে বোর্ডের হাত নেই। বাড়ির বাবা যাদি বাজার করে এনে বাচ্চাদের দেয়, তাহলে তো ওই বাচ্চার নিজের আয় করার আগ্রহ তৈরি হবে না। সে যখন জানবে যে, আমি যা আয় করবো, তাই পাবো; তখন সে আয় করতে আগ্রহী হবে। চার দিনের ক্রিকেটেও এই প্রতিযোগিতা তৈরি করতে হবে। সেটা আঞ্চলিকভিত্তিতে হতে পারে। অন্যান্য দেশ তাই করে।

আমাদের দেশে তো আঞ্চলিক যে দলের প্রতি টান, সেটাই তৈরী করা যাচ্ছে না। ঢাকা থেকে আমরা একটা একটা দল বানিয়ে দিচ্ছি। ফলে তারা বেড়াতে যাওয়ার মত খেলতে যাচ্ছে। 

হ্যা। আমাদের এখানে অঞ্চলভিত্তিক ক্রিকেট কার্যকর হবে না। অন্যান্য দেশে অঞ্চলগুলো আলাদাভাবে স্বায়ত্বশাসিত। তাদের ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনও আলাদা। সেখানে লোকাল লিগ হয়। কিন্তু আমাদের খেলোয়াড়রা ঢাকাকেন্দ্রিক। বিপিএলে অঞ্চলভিত্তিক সামান্য সাফল্য এসেছে। আমি মনে করি, সেখানে আসলে অঞ্চলের নামের বিশেষ কোনো গুরুত্ব নেই। অঞ্চলভিত্তিক না করে যে কোনো নামে ছয়টা দল করলেও হয়। বসন্ধুরা টিম করেছে, অমুক করেছে, তমুক করেছে; এভাবে করলে প্রতিযোগিতা বাড়তে পারে। এজন্য অনেক গবেষণা প্রয়োজন। শ্রীলঙ্কায় ক্লাবকেন্দ্রিক প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট আছে। পাকিস্তানে ব্যাংক বা করপোরেট প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক ক্রিকেট আছে। প্রথম শ্রেণি মানেই যে অঞ্চলভিত্তিক হবে, তা নয়। অবশ্য ভারতে তাই হয়। বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন যখন মুম্বাইয়ের সাথে খেলে, তখন কিন্তু প্রতিযোগিতা চলেই আসে। ওই সব দেশে এর বাইরে উপায় ছিলো না। আমাদের তো ছোট দেশ। এই সমস্যাটুকু আছে। আমাদের অন্য একটা প্রক্রিয়া লাগবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link