More

Social Media

Light
Dark

মধুর এক প্রতিশোধের মঞ্চায়ন

প্রকৃতি বড়ই অদ্ভুত! প্রতিশোধটা কোন না কোন ভাবে আদায় করিয়ে ছাড়ে। এই যে যেমন ভারতের এশিয়া কাপে জয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে হাড্ডাহাড্ডি একটা লড়াই শেষে দুর্দান্ত এক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে রোহিতের দল। চিরপ্রতিদ্বন্দীদের হারানোর মধ্যে একটা আলাদা আনন্দ নিশ্চয়ই কাজ করে। আর যদি হয় তা প্রতিশোধের জয় তবে যেন সে আনন্দ ছুঁয়ে দেখে নীলাম্বর।

স্থান আর পাত্র এক, দুবাই ও ভারত-পাকিস্তান। বদলেছে শুধু কাল আর কিছু খেলোয়াড়। সেই সাথে বদলেছে খেলোয়াড়দের মানসিকতা। অথবা ইনজুরির ভয়াল থাবা লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে পরিকল্পনার সবকিছু। তাইতো পাকিস্তানের দাপুটে জয়ের জবাবটা দিতেও বেশ কষ্ট করতেই হয়েছে ভারতকে।

দৃশ্যপট ২০২১ বিশ্বকাপের। তখন আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থেকেই পাকিস্তান গিয়ে হাজির হয়েছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে। সে আত্মবিশ্বাসটা চক্রবৃদ্ধি হারেই যেন বেড়েছে ভারতকে রীতিমত উড়িয়ে দিয়ে। শাহীন শাহ আফ্রিদি সে ম্যাচে পাকিস্তানের পক্ষে মোমেন্টামটা নিজেদের করে নিয়েছিল। আর বাকি কাজটা ব্যাট হাতে সামলে নেন অধিনায়ক বাবর আজম ও অভিজ্ঞ ব্যাটার রিজওয়ান আহমেদ।

ads

আরব আমিরাতের দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে সেদিন দশ উইকেটের পরাজয় বরণ করেছিল ভারত। লজ্জাজনক সে হারে আর টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল অবধি পৌঁছানো হয়নি ভারতের। খেলোয়াড়দের মধ্যে নিশ্চয়ই একটা চাপা জেদ কাজ করছিল। সে জেদটা ক্রমশ আরও তীব্র হয়েছে। কেননা এর মধ্যে তো আর দুই দলের দেখা হওয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ ছিল না। সুযোগটা এলো এশিয়া কাপের চাদর মুড়িয়ে।

প্রায় দশ মাস চারদিন পরে এই দুই দল আবারও মুখোমুখি। জেদটা ততদিনে তো মাত্রা ছাড়িয়েছে নিশ্চয়ই। এর মধ্যে অবশ্য ভারত দলে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। পক্ষান্তরে পাকিস্তান দল হয়েছে আরও স্থিতিশীল। একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে তাঁরা সেটা তো স্পষ্ট। তবে পরিবর্তন আর জেদের মিশেলে বোমাটা আবার ফাঁটল সেই দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে।

দুই দলই তাঁদের প্রধান দুই অস্ত্রের অভাব অনুভব করেছে বেশ। পাকিস্তান দলে ইনজুরির জন্য ছিলেন না শাহীন শাহ আফ্রিদি। অপরদিকে ঠিক একই কারণে ভারত দলে অনুপস্থিত ছিলেন জাসপ্রিত বুমরাহ। তবে পাকিস্তান দলে আফ্রিদির অভাবটা বেশ প্রকট ছিল। বিশ্বকাপের ম্যাচে তো ভারতের টপ অর্ডারে আঘাত করা শুরুই করেছিলেন আফ্রিদি। এশিয়া কাপের ম্যাচেও শুরুতে আঘাত হানেন পাকিস্তানের তরুণ বোলার নাসিম শাহ। অভিষেক ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই চিরপ্রতিদ্বন্দী দলের অন্যতম সেরা ব্যাটারের স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলেন নাসিম শাহ।

বিশ্বকাপের চিত্রনাট্যই যেন আবার মঞ্চায়নের অপেক্ষায় ছিল। তবে এর আগে পাকিস্তানি ব্যাটারদের খুব একটা হাতখুলে খেলার সুযোগটাই দেয়নি ভারতীয় বোলাররা। ভুবনেশ্বর কুমারের আঘাতটাই সহ্য করতে পারেনি পাকিস্তানি বোলাররা। সেই সাথে হার্দিক পান্ডিয়া তো রয়েছেন এক অন্যরকম ফর্মে। তাঁর ফর্মে থাকা যে দলের জন্য কতটা বড় আশির্বাদ সেটাই আবার প্রমাণিত হল এশিয়া কাপের দ্বিতীয় ম্যাচে।

পাকিস্তান মিডল অর্ডারটাকে একটুখানি ছাড়ও যেন দিতে চাননি হার্দিক। তিন খানা উইকেট পুরেছিলেন তিনি। আবার নিজদের ব্যাটিং ইনিংসটা তিনি শেষ করেই তবে ফিরেছিলেন সাজঘরে। পাকিস্তানের পেসার শাহনেওয়াজ ধানির শেষের দিকে ঝড়ো ব্যাটিং একটা লড়াকু টার্গেট দেয় ভারতকে। তবে প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে থাকা ভারতের খেলোয়াড়দের কাছে সে টার্গেটটা বিশাল কোন এক পাহাড় ছিল না।

কিন্তু পাকিস্তানের বোলারদের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং ম্যাচটাকে নিয়ে যায় শেষ ওভার অবধি। ভারতের হয়ে খেলা প্রতিটা খেলোয়াড়কে কোন না কোন ভাবে মহেন্দ্র সিং ধোনি বেশ প্রেরণা দেয়। তিনি যেন প্রতিটা খেলোয়াড় থেকে দর্শকদের স্মৃতিতে আজীবন বসবাস করবেন। ২০১১ বিশ্বকাপের নুয়ান কুলাসেকারাকে মারা ছক্কাটা তো আজও বেশ বর্ণিল। আর তেমন করে ম্যাচ শেষ করার খায়েশ তো সবার মধ্যেই থাকে।

সে ইচ্ছে, আর অটল আত্মবিশ্বাসী হার্দিক পান্ডিয়ার হাত ধরেই জয়ের দেখা পায় ‘টিম ইন্ডিয়া’। সময়ের পরিক্রমায় বদলেছে বহু কিছু। হারিয়ে যাওয়ার পালে গা এলিয়ে দেওয়া থেকে ফিরে এসে ঠিক কি করে একটা প্রতিশোধের ম্যাচে সেরা পারফর্মার হওয়া যায় তাই আবার দেখিয়ে দেন হার্দিক পান্ডিয়া। মাঝে রবীন্দ্র জাদেজাও একটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। মোক্ষম সময়ে দলের হালটা ধরেছিলেন।

অতীতের সব হিসেবে বাদ দিয়ে যদি এক বছরের হিসেবে করা হয় তবে পরিসংখ্যানটা এখন ১-১। এবারের এশিয়া কাপেই অন্তত আরও একবার মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ থাকছে এই দুই দলের সামনে। ভারত-পাকিস্তানের লড়াইয়ের উত্তাপকে হার নিশ্চয়ই মানাবে স্বাস্থ্যকর এক প্রতিশোধের আগুন। এমন আগুনে ধ্বংস হয় না, আনন্দের এক মহাসমুদ্র ছড়িয়ে যায় বিশ্বজুড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link