More

Social Media

Light
Dark

অস্ট্রেলিয়াকে হালকাভাবে নিয়ে ফেলাই কাল হল ভারতের

আমি ফেসবুকবিজ্ঞ নই। ক্রিকেট নিয়ে জ্ঞান যেটুকু, তা এই খেলাকে ভালোবেসে, কিছু পুরনো খেলা বারবার ইউটিউবে দেখ এবং অবশ্যই নিজে মাঠে নেমে খেলে কিছুটা অর্জন করা। আমাদের ট্রেনিং দিতেন অরুণলাল ও স্বর্গীয় দেবু বোস। মাঝে মাঝে আসতেন অশোক মুস্তাফি।

আমার ব্যক্তিগত কোচ ছিলেন শ্রীরামপুরের দীনেন ঘোষ। রাজ্যস্তরে যিনি মফসসল থেকে বহু ভালো খেলোয়াড় তুলে এনেছেন। ট্রেনিং পিরিয়ডে ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা ও আবেগের বাইরে যুক্তি ও অঙ্ক শিখিয়েছিলেন তাঁরা। যেটুকু শিখেছি, তা থেকেই কয়েকটা কথা বলি। এসবই আমার ব্যক্তিগত অবজারভেশন। আপনার ও আমার মতপার্থক্য থাকলেও আমি নাচার।

১.

ads

ফাইনালে আমি ট্রাভিস হেড-এর চেয়েও এগিয়ে রাখব মার্নাস লাবুশেন-এর খেলা ইনিংস। প্রয়োজনীয় সময়ে ৯৯ বলে ৫৫ রান। ভারতের মুশকিল এমন একটি ইনিংস খেলে দেওয়ার লোক মিডল অর্ডারে প্রায় নেই। শ্রেয়াস বা সুরিয়ার স্ট্যাট দেখিয়ে লাভ নেই। যে কোনও খেলা প্রতি ম্যাচ ০ থেকে শুরু করার লড়াই। ওখানে আগের স্ট্যাট ধুয়ে জল খাওয়ার অবকাশ নেই।

আমি আগেও বলেছি, শত আক্রমণ সত্ত্বেও বলেছি ভারতের মিডল অর্ডার ভালো নেই। দুটো তিনটে ম্যাচে রান করে যাওয়া দিয়ে ফর্ম বিচার হয়। জাত নয়। ধোনি বা যুবরাজের মতো নির্ভরযোগ্য জাত প্লেয়ার দরকার মিডল অর্ডারে যারা সেঞ্চুরি না করলেও দলের রানে বাড়তি অক্সিজেন জোগাবেন।

দরকারে জুটি বাঁধবেন টপ অর্ডারেই সঙ্গে। সবসময় রোহিত আর বিরাট খেলে দেবে তা হয় না। বরং কে এল রাহুল কাল প্রশংসার দাবি রাখেন। বড় মঞ্চে নার্ভ ফেল না করে যেভাবে তিনি খেললেন তাঁকে নিয়ে পরবর্তী কোচ ও বিসিসিআই-এর বিশেষ পরিকল্পনা থাকা দরকার। কেউ কেউ এখানে শ্রেয়াসের কথা বলবেন।

আমি শ্রেয়াসকে এখনও বিশ্বকাপের চূড়ান্ত প্রফেশনাল ক্রিকেটার হিসেবে ভাবি না। হারিয়ে যাওয়া ফর্ম নিয়ে খেলতে এসে হঠাৎ বিশ্বকাপের কয়েকটা ম্যাচ পরে ফর্ম ফিরে পাওয়া খেলোয়াড় মানসিকতায় ও দৌড়ে ওই পারফরম্যান্স করার জন্য ভরসার কাঁধ নয়। লাবুসেন গোটা টুর্নামেন্ট ফ্লপ। জ্বলে উঠলেন বড় ম্যাচে। খেলা এটাই। ভরসার সংজ্ঞাও অনেকটা এমন।

কেন পাচ্ছি না আমরা এমন খেলোয়াড়? এর অন্যতম কারণ বিদেশের মাটিতে টেস্ট ম্যাচ কম খেলা খেলোয়াড় দিয়ে দল।সাজানো। সম্প্রতি কামিন্স তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছেন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলবেন বলে আইপিএল খেলেননি। আসলে টেস্ট ম্যাচ খেলা খেলোয়াড়ে জোর না দিলে বিপদের দিনে উইকেট আঁকড়ে পড়ে থেকে ম্যাচ জেতানোর অনুশীলন শেখা যায় না।

ওয়ানডে মানে ধূমধরাক্কা মার সবসময় নয়। যেমন কাল কে এল রাহুল সেটা করতে গেলে বিপদে পড়তেন। টেস্ট খেলার অনীহা যত তৈরি হবে তত ফাটকা খেলোয়াড় তৈরি হবে। যারা দারুণ খেলবে। আমরা মাথায় তুলব। কিন্তু ফর্ম ছাপিয়ে জাত তৈরি হবে না। তাই এক পায়ে খেলে ২০০ বা একটা ১৩৭ করে দেওয়া খেলোয়াড় আমরা কম পাচ্ছি। পেলেও সংখ্যায় খুব কম। এমন প্লেয়ার চাই যে বলকে মাটি কামড়ে মারতে জানবে। আমাদের কোচ বলতেন, বল মাটিতে রেখে খেলো, শিশিরে ভেজাও। এটা জরুরি। খুব জরুরি।

২.

ভারত নেদারল্যান্ডের ম্যাচ থেকেই বাজে ফিল্ডিং ও বাজে বল শুরু করেছিল। নেহাত রান অনেক হচ্ছিল ও শামি সফল হচ্ছিলেন বলে আমরা সেদিকে খেয়াল করছিলাম না। নইলে সেমি ফাইনালে ৩১৫/৩২০-র মতো বড় স্কোর করলেও ভারত হেরে যেত। কারণ নিউজিল্যান্ড ৩২৫ তুলে ফেলেছিল।

সেদিন ৩৯৭ না থাকলে ফাইনাল খেলার কথা ছিল না। আমরা ধরে নিচ্ছিলাম কেউ একজন খেলে দেবে। সেই ধরে নেওয়ায় ভুল নেই। সবাই এভাবেই দল করে। তবে আমাদেরও বিকল্প ভাবা উচিত ছিল যদি সেদিন না পারে সে-ও তাহলে বিকল্প কী রইল? আর কালকের স্পিন নিয়ে বেশি কথা না হওয়াই ভালো। সাউথ আফ্রিকার স্পিনাররা যে অসুবিধায় ফেলেছিল দলটাকে ভারত তার সিকিভাগ-ও পারেনি। নির্বিষ বল।

৩.

মরণ-বাঁচন ম্যাচ খেলার মানসিকতা নিয়ে দলের মেন্টর, সাইকোলজিস্টদের আরও অনেক ঘষামাজা করতে হবে। কুল থাকা আর ক্যাজুয়াল থাকা যে এক নয় তা বুঝতে হবে।

একটা লিগ ম্যাচে ভারতের কাছে হেরে ও অপ্রতিরোধ্য ভারতকে দেখে অস্ট্রেলিয়া উড়িয়ে এনেছিল তাদের দলের সাইকো অ্যানালিস্টকে। পেশাদার একেই বলে। ভারতও পেশাদার। তবে অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডের সমগোত্রীয় এখনও নয়। আরও সামান্য মেরামতি দরকার।

৪.

হারলেও ভারতের এই দল মোটের উপর শক্তপোক্ত। তা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। মুশকিল হল কিলার ইনস্টিংক্ট। এটা কেউ শিখিয়ে দিতে পারে না। নিয়ে জন্মাতে হয়। বিরাটের মধ্যে ভরপুর আছে। রোহিতেরও আছে বেশ কিছুটা। তবে বাকি দলে কারও দুর্ধর্ষ ব্যাক্তিত্বের মধ্যেও এটা খুব একটা নেই।

বডি ল্যাঙ্গুয়েজে যে ইস্পাতকঠিন জিল সেটার অভাব আছে। আমি জানি না বোর্ড এটা কিভাবে সামলাবে। তবে এই বস্তু আয়ত্তে না আনতে পারলে যে কোনও বড় টুর্নামেন্টের বড় ম্যাচে আবার দল কোলাপ্স করতে পারে।

৫.

কেউ কেউ বলবেন একটা ম্যাচ খারাপ হতে পারে। নিশ্চয় পারে। তবে সেটা ফাইনাল হলে হাত কামড়ানো ছাড়া আর উপায় নেই। যেটা কাল হল। যে অস্ট্রেলিয়া লিগ দুটো হারল তারা চ্যাম্পিয়ন হয়ে বেরিয়ে গেল। বড় মাঠে পারফর্ম করা একটা অনুশীলন।

বড় ম্যাচে ভালো পারফর্ম করা প্লেয়ারদের নিয়ে তাই আলাদা করে ট্রেনিং শুরু করেছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট। তার ফলে পরপর দু’বার দলটা প্রথম চারে উঠে আসছে। অস্ট্রেলিয়ায় এই ব্যবস্থা প্রথম থেকেই ছিল। তাই ওয়ার্নার বড় কিছু করতে পারবেন কি না এই সন্দেহ থাকলেও দল তাকে নিয়েছে। আর তার ফল বাউন্ডারি থেকে শরীর ছুড়ে ফেলে ৪০ রান আরও বাঁচিয়ে দেওয়া।

৬.

হোম ওয়ার্ক হোম ওয়ার্ক এবং হোম ওয়ার্ক। লিগে যে অস্ট্রেলিয়াকে ভারত পেয়েছে ফাইনালে তারা বিধ্বংসী হবেই। এটা ধরে যে হোম ওয়ার্ক দরকার ছিল ভারত তা করেনি। ভেবেছে লিগে হারিয়েছি। পরেও পারব।

এই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস, কিছুটা হালকাভাবে নিয়ে ফেলা কাল হল। হেরে অস্ট্রেলিয়া আলাদা আলাদা করে প্লেয়ার ধরে ধরে হোম ওয়ার্ক করল।

৭.

ভারত লড়াই করে হারেনি যে ভাগ্যের দোহাই দেব। অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে মাত্র। আর হ্যাঁ, পিচ খারাপ, আম্পায়ার অপয়া, স্টেডিয়াম খারাপ, দর্শক খারাপ এসব কোনও যুক্তি হতেই পারে না। প্লিজ গ্রো আপ!

– ফেসবুক থেকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link