More

Social Media

Light
Dark

ক্ষণিক আলোয় জ্বলন্ত নাসির

একটা সময় তাকে আদর করে ‘সুপারম্যান’ ডাকা হত। বাংলাদেশ ক্রিকেটে তিনি ছিলেন দুরন্ত ফিল্ডিংয়ের প্রতিমূর্তি। হাওয়ায় ভেসে ক্যাচ লুফে নিতে তার যেন জুড়ি মেলা ভার। শুধু ফিল্ডার নন, তিনি ছিলেন পুরোদস্তুর একজন অলরাউন্ডার। ব্যাটটাও তার চলত সমানতালে। সেই নাসির হোসেন যেন আজ বাংলাদেশ জাতীয় দল থেকে যোজন যোজন দূরে।

তবে এখনও তার ব্যাট হাসে। অনিয়মিত, তবুও মাঝে মধ্যে দলের জয়ে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এইতো প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলে ফেললেন অনবদ্য এক ইনিংস। তুলে নিলেন নিজের লিস্ট এ ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি। তবে এর আগে সময়টা কেটেছে রান খরায়।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে নাসির ছিলেন ঢাকা ডমিনেটর্সের অধিনায়ক। দলটা ছিল বেশ নড়বড়ে। সেই দল নিয়ে বহুদূর পথ পাড়ি দেওয়া হয়নি নাসিরের। তবে পুরো টূর্নামেন্ট জুড়েই তিনি চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। ব্যাট হাতে রান করেছেন। ছিলেন সেরা ছয়ে।

ads

সেখানে যেন প্রত্যাবর্তনের একটা আভাস দিয়ে রেখেছিলেন নাসির হোসেন। সবাই যেন ভাবতে চাইলো পেছনের সব গ্লানিকে ছুড়ে ফেলে আবারও নাসির ফিরবেন স্বরুপে। জাতীয় দলে যে এখনও একজন ফিনিশারের বড্ড অভাব।  তিনি হয়ত আবারও লাল-সবুজ জার্সিতে ম্যাচ জয়ের নায়ক হবেন। এমনটাই ছিল প্রত্যাশিত।

তবে প্রত্যাশার সকল আলো যেন নিজ হাতে নিভিয়ে দিয়েছিলেন নাসির। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে শুরু থেকে ছিলেন অফফর্মে। বিপিএলের ফর্ম কোথাও একটা মিলিয়ে গেল। কর্পূর হয়ে উবে গেল প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন। ক্যারিয়ারে নাসিরের পিছিয়ে পরার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি অধারাবাহিকতা।

সেটা যেমন মাঠের ক্রিকেটে, তেমনি ফিটনেস ইস্যুতে কিংবা ব্যক্তিগত নানাকারণে। তিনি কখনোই সমানতালে নিজের ক্যারিয়ারটা গুছিয়ে নিতে পারেননি। নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার তাড়না যেন ছিল সামান্যই। তবুও বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখনও খানিকটা মূল্যায়িত হচ্ছেন তিনি, সেটার কারণ কালেভদ্রের এই ম্যাচ জয়ী ইনিংসগুলো।

অগ্রণী ব্যাংকের দেওয়া ২৭৪ রানের লক্ষ্যমাত্রা টপকে যেতে প্রাইম ব্যাংককে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন নাসির। রান করেছেন ১১২। অথচ এর আগে এবারের ডিপিএলে তার একটিমাত্র পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস ছিল। এদিন একেবারে ম্যাচ শেষ করেই তবে মাঠ ছেড়েছেন নাসির।

অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমকে সাথে নিয়ে জয়ের ভীত মজবুত করতে থাকেন নাসির। এর আগে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে শাহাদাত হোসেন ও মোহাম্মদ মিথুনের জুটিতে জয়ের ভীত গড়া হয়ে যায় প্রাইম ব্যাংকের। মিথুন তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। এই মৌসুমে এটি তার দ্বিতীয়।

এই জুটির প্রস্থানের পর নাসির-মুশফিক মিলে প্রাইম ব্যাংককে জয়ের বন্দরের দিকে ধাবিত করেন। দুইজনের ১১১ রানের জুটি ভাঙে মুশফিকের বিদায়ে। টানা দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি করে ফিরে যান মুশফিকুর রহিম। তখনও জয়ের জন্যে বেশ খানিকটা পথ পাড়ি দিতে হতো প্রাইম ব্যাংককে।

সেখান থেকেই ম্যাচ জয়ের পুরো দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন নাসির হোসেন। ১৩ চার ও তিন ছক্কায় সাজানো ইনিংসে তিনি ৯৮টি বল খরচা করেন। তাতে ৩.২ ওভার বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব।

তিনি যে একেবারেই বিলীন হয়ে যাননি, সে প্রমাণই যেন আরও একবার রাখলেন নাসির হোসেন। তবে অধারাবিক জীবনে আরও একবার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানো দূর আকাশের কোন এক নক্ষত্র। তিনি বরং নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার একটা শেষ চেষ্টা করে দেখতেই পারেন। কে জানে হয়ত মিলে যেতে পারে সোনার হরিণ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link