More

Social Media

Light
Dark

ইশ! যদি মানে থাকতেন!

ম্যাচ শেষ হতে সময় বাকি মোটে বিশ মিনিট। ওয়ের্ডার ব্রেমেনের বিপক্ষে ৬-১ গোলে এগিয়ে থাকা অবস্থায় বায়ার্ন শিবিরে খানিকটা উৎকণ্ঠা, খানিকটা খুঁড়িয়ে মাঠ ছাড়ছেন আফ্রিকার সেরা খেলোয়াড় সেনেগালিজ তারকা সাদিও মানে। আপাতদৃষ্টিতে চোট গুরুতর মনে না হলেও সেদিনের আঘাত মানেকে ছিটকে দিয়েছে বিশ্বকাপ থেকে। ধূলিসাৎ করে দিয়েছে লক্ষাধিক সেনেগাল সমর্থকের স্বপ্ন।

বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই মানের অভাব প্রবলভাবে অনুভব করেছে সেনেগাল। আফ্রিকান কাপ অফ নেশন্স জিতে বিশ্বকাপে আসা দলটা প্রথম ম্যাচেই প্রায় রুখে দিয়েছিল তিন বারের রানার্সআপ নেদারল্যান্ডসকে। প্রথমার্ধে অনবদ্য খেললেও দ্বিতীয়ার্ধে চাপটা ধরে রাখতে পারেনি। ইসমাইলা সার- ইদ্রিসা গুইয়েরা চেষ্টা করে গেছেন, কিন্তু মানের অভাব কি আর পূরণ করা যায়! প্রতিবার বক্সের সামনে এসে খেই হারিয়েছে সেনেগাল, আর গ্যালারিতে আফসোসের ঝড় উঠেছে। ইশ! মানে যদি আজ থাকতেন। হয়তো ঠিকই ম্যাচটা বের করে নিতেন একা হাতে। 

এবারের বিশ্বকাপ শুরুর আগেই মানের নেতৃত্বে সেনেগালকে ভাবা হতো টুর্নামেন্টের ডার্কহর্স । মাত্র কয়েক মাস আগেই দলকে জিতিয়েছেন আফ্রিকান লিগ অফ নেশন্সের শিরোপা। দারিদ্র্য-ক্ষুধার জ্বালা ভুলে সেদিন ডাকারে উৎসব হয়েছিল, সেনেগালিজ সমর্থকরা সেদিন আনন্দে মেতেছিলেন।

ads

টাইব্রেকারে চাপের মুখে শেষ শটটা জালে জড়িয়ে সেদিন আনন্দের উপলক্ষ এনে দিয়েছিলেন মানে। ম্যাচটা তাঁর জন্য ছিল শাপমোচনের, ২০১৭ সালে তাঁর মিসেই যে আফকন থেকে বাদ পড়েছিল সেনেগাল। মাসখানেক পর আবারো তাঁর গোলেই মোহাম্মদ সালাহর মিশরকে হারিয়ে বিশ্বকাপের টিকিট কাটে সেনেগাল। 

আর দশটা আফ্রিকান বালকের মতই ভয়াবহ দারিদ্রতার মাঝে বেড়ে উঠা মানের। তিনবেলা খাবার জোগাড় করাই যেখানে কষ্টের, ফুটবল খেলা তো সেখানে বিলাসিতা। মানের পরিবার তাই চাইতেন না তিনি ফুটবল খেলুক। তাই তো একদিন ফুটবলের প্রেমে পড়ে বাড়ি থেকে পালালেন। নিজের গ্রাম বাম্বালি ছেড়ে আশ্রয় নিলেন সেনেগালের রাজধানী ডাকারে। শুরুটা কষ্টের হলেও নিজের প্রতিভা আর পরিশ্রম দিয়ে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে শুরু করেন। অস্ট্রিয়ান ক্লাব সালজবুর্গে সুযোগ পাবার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, সাউদাম্পটন – লিভারপুল হয়ে বর্তমানে খেলছেন বায়ার্ন মিউনিখে। সেনেগালের বিশ্বকাপ যাত্রার স্বপ্নসারথী তো তিনিই। 

বিশ্বকাপকে ঘিরে গত কয়েক মাসে আলাদা করে প্রস্তুতি নিয়েছেন। আগের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ডের খুব কাছে গিয়েও বাদ পড়তে হয়েছে। একারণেই এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে উচ্চ আশা ছিল মানের। কিন্তু বিশ্বকাপের বাজে শিডিউল আর পর্যাপ্ত অনুশীলনের সময় না পাওয়া নিয়ে আক্ষেপ ছিল তাঁর।

শেষ পর্যন্ত সময়ই কাল হল তাঁর জন্য, হয়তো আর একমাস পর হলেই বিশ্বকাপে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারতেন দলকে। ক্লাবে একজনের অভাব খুব সহজেই পুষিয়ে নেয়া যায়, কিংবা দরকার হলে অন্য ক্লাব থেকেও খেলোয়াড় আনা যায়। কিন্তু জাতীয় দলের ব্যাপারটা ভিন্ন, তাছাড়া মানের মাপের ফুটবলারের বিকল্প গোটা বিশ্বেই বিরল। 

সেনেগালের কোচ অ্যালিউ সিসেও স্বীকার করে নিয়েছেন সেটা। তিনি বলেন, ‘মানেকে ছাড়া বিশ্বকাপ কল্পনা করা কঠিন। স্বাভাবিকভাবেই আপনি আপনার সেরা ফুটবলারকে কেন্দ্র করেই দল সাজাবেন, সেনেগালও তাঁর ব্যতিক্রম নয়। তাঁর বিকল্প খুঁজে বের করা দু:সাধ্য।’

মাঠের খেলাতেও তাঁর প্রমাণ পাওয়া গেছে, ম্যাচের প্রতিটা মূহুর্তে মানের অভাববোধ করেছেন সবাই। কুলিবালির লম্বা বাড়ানো বলগুলো ক্ষিপ্র গতিতে রিসিভ করার মানে এদিন ছিলেন না, ছিলেন না দুরূহ কোণ থেকে বল জালে জড়ানো মানে। বারবার আক্রমণে উঠলেও ডাচ গোলরক্ষকের শক্ত পরীক্ষা নিতে পারেনি তাঁরা। হয়তো মানে থাকলে ফলাফলটা ভিন্ন হতেও পারতো। মানে ছাড়া সেনেগাল যেন নখদন্তহীন সিংহ।

এবারের বিশ্বকাপে দলের নেতা এবং প্রধান তারকা হিসেবে খেলার কথা ছিল মানের। অথচ কাতারের বদলে তিনি একাকী অনুশীলন করবেন মিউনিখে। অথচ নিজেদের ইতিহাসে ভাল করার সবচেয়ে সেরা সুযোগ এবারই ছিল সেনেগালের কাছে। কিন্তু ফুটবল মাঝেমধ্যে বড্ড নিষ্ঠুর, এক নিমিষে ধুলোয় মিশিয়ে দেয় বহুদিনের স্বপ্ন। সাদিও মানে তাই সেনেগালের দুঃখ আর আফসোসের নাম হয়েই থাকবেন এবারের বিশ্বকাপ।  

  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link