More

Social Media

Light
Dark

পাক-ভারত দ্বৈরথ: ছোট বিশ্বকাপের বড় ম্যাচ

ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ ক্রিকেট বিশ্ব ক্রিকেটের উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইগুলোর মধ্যে অন্যতম। ভৌগলিক কিংবা রাজনৈতিক বৈরিতার সুবাদে দুই দলের লড়াই পেয়েছে আলাদা মাত্রা।

দর্শকদের জন্যও এটা দারুণ উত্তেজনা আর রেষারেষির এক দ্বৈরথ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চেও সেই দ্বৈরথ দেখা গেছে বেশ কয়েকবার। সেসব ম্যাচ নিয়েই আমাদের এবারের আয়োজন।

  • গ্রুপপর্ব, ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ইডেন গার্ডেনস, কলকাতা

ঘরের মাঠে সেবারে ভারতের শুরুটা হয়েছিল জঘন্য। প্রথম ম্যাচে কিউইদের বিপক্ষে হেরেছিল ৪৭ রানে। পরের ম্যাচেই তারা মুখোমুখি হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের। তাদের বিপক্ষে হার ভারতকে ছিটকে দিত টুর্নামেন্ট থেকে।

ads

বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে আশিষ নেহরা এবং রবীন্দ্র জাদেজার বোলিং তোপে পড়ে পাকিস্তান। দুজনের চার ওভার বল করে মাত্র ২০ রান খরচায় নেন একটি করে উইকেট। নির্ধারিত ১৮ ওভার শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১১৮।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে মোহাম্মদ আমিরের তোপে ভয়াবহ ব্যাটিং ধ্বসে পড়ে ভারত। পাঁচ ওভারের মাঝেই হারিয়ে ফেলে টপ অর্ডারের তিন উইকেট। কিন্তু ক্রিজে অবিচল ছিলেন বিরাট কোহলি, অপরপ্রান্তের যাওয়া-আসার মিছিলের মাঝে ৩৭ বলে অপরাজিত ৫৫ রান করে দলকে জিতিয়েই ফেরেন তিনি।

ভারত ম্যাচটি জিতে নেয় ছয় উইকেটে। এ ম্যাচের পারফরম্যান্সের মাধ্যমে পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরষ্কার জেতেন কোহলি।

  • সুপার এইট, ২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, কলম্বো

সুপার এইটের প্রথম ম্যাচেই অজিদের বিপক্ষে বিশাল ব্যবধানে হার ভারতকে ঠেলে দেয় খাদের কিনারায়। ভারতের দেয়া ১৪১ রানের টার্গেট অজিরা পেরিয়ে যায় নয় উইকেট এবং প্রায় ৩২ বল হাতে রেখেই। ফলে রান রেটের হিসাবে অনেক পিছিয়ে পড়ে ধোনিবাহিনী। সুপার এইটে সেটা ছিল ভারতের টানা সপ্তম হার।

পাকিস্তানের বিপক্ষে পরের ম্যাচটা তাই ভারতের জন্য একইসাথে হারের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসার পাশাপাশি বিশ্ব আসরে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে অপরাজিত থাকার রেকর্ড ধরে রাখার। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান লক্ষ্মীপতি বালাজির তিন উইকেট আর অশ্বিন-যুবরাজের জোড়া শিকারে দুই বল বাকি থাকতেই অলআউট হয়ে যায় ১২৮ রানে।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই গৌতম গম্ভীর সাজঘরে ফিরলে চাপে পড়ে ভারত শিবির। কিন্তু বিরাট কোহলির ৬১ বলে অপরাজিত ৭৮ রানের সুবাদে আট উইকেটের বড় জয় পায় ভারত।

ব্যাট হাতে ৭৮ রানের পাশাপাশি বল হাতে এক উইকেট নেবার সুবাদে প্রথমবারের বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্বন্দীদের বিপক্ষে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরষ্কার জেতে বিরাট কোহলি।

  • গ্রুপপর্ব, ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ঢাকা

২০১৪ বিশ্বকাপে মুখোমুখি হবার সময় প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে ভারতের বিপক্ষে ফেবারিট ছিল পাকিস্তান।

ভক্ত থেকে শুরু করে ক্রিকেটবোদ্ধারা সবাই এগিয়ে রাখছিলেন আফ্রিদির পাকিস্তানকে। বিশ্বকাপের কয়েক মাস আগে অনুষ্ঠিত হওয়া এশিয়া কাপের ম্যাচেও জয় পেয়েছিল পাকিস্তানই। অশ্বিনের শেষ ওভারে টানা দুই ছয় হাঁকিয়ে স্মরণীয় এক জয় এনে দিয়েছিলেন আফ্রিদি।

অন্যদিকে ভারত ছিল চূড়ান্তরকমের বাজে ফর্মে, বিশ্বকাপের আগে দক্ষিণ আফ্রিকা এব নিউজিল্যান্ড সফরে সবগুলো ম্যাচেই তারা পরাজিত হয়। কিন্তু, পাকিস্তান আরো একবার চাপের মুখে ভেঙে পড়ে।

ঢাকার স্লো টার্নিং পিচে সেদিন অশ্বিন আর অমিত মিশ্র যেন হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিরোধ্য। তাদের বিপক্ষে একমাত্র শোয়েব মাকসুদই যা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। তার ১১ বলে ২১ রানের সুবাদেই ১৩০ রানের ভদ্রস্থ সংগ্রহ পায় পাকিস্তান।

জবাব দিতে নেমে রোহিত শর্মা এবং শিখর ধাওয়ানের উদ্বোধনী জুটিতেই ম্যাচ নিজেদের পকেটে পুরে নেয়। তাদের ৫৪ রানের জুটির পর বিরাট কোহলি এবং সুরেশ রায়না ৩৫ রানের জুটি গড়ে জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারেন। ভারত আবারো জয় পায় আট উইকেটের বড় ব্যবধানে।

  • গ্রুপপর্ব, ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ডারবান

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেবারই প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয় দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। প্রথম ব্যাট করতে নামা ভারত শুরুতেই দিশেহারা হয়ে পড়ে মোহাম্মদ আসিফের বোলিংয়ে, ৩৬ রানেই হারিয়ে ফেলে ৪ উইকেট।

তবে রবিন উথাপ্পা, ধোনি, ইরফান পাঠান, অজিত আগারকারদের ছোট কিন্তু কার্যকরী ইনিংসে ভর করে ভারত সংগ্রহ করে ১৪১ রান। জবাব দিতে নেমে পাকিস্তানও ভালো শুরু করতে পারেনি। নবম ওভারেই হারিয়ে ফেলে চার উইকেট অথচ তখনো রানের কোঠা পঞ্চাশেও পৌঁছোয়নি। শোয়েব মালিক এবং আফ্রিদি মাঝে আশা দেখালেও আউট হয়ে যান দ্রুতই।

শেষ ১৪ বলে প্রয়োজন ছিল ৩৯ রান। কিন্তু মিসবাহ উল হক হঠাৎ পাল্টা আক্রমণ শুরু করলে ম্যাচে ফেরে পাকিস্তান। হরভজন সিংয়ের শেষ দুই বলে চার-ছক্কা হাঁকানোর পাশাপাশি অজিত আগারকারের পরের ওভার থেকে তুলেন ১৭ রান।

শ্রীশান্তের শেষ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১১ রান। প্রথম চার বলেই দুই চার মেরে শেষ দুই বলে এক রানের সমীকরণে নিয়ে আসেন মিসবাহ। কিন্তু শেষ দুই বলে কোনো রান নিতে না পেরে আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান নামের স্বার্থকতা জানান দেন মিসবাহ।

সমতায় শেষ হলে খেলা গড়ায় ‘বোল আউটে’। সেখানে পাকিস্তানের হয়ে প্রথম তিনটি বলেই স্ট্যাম্প মিস করেন উমর গুল, ইয়াসির আরাফাত এবং শহিদ আফ্রিদি। অন্যদিকে ভারতের হয়ে তিনটি বলেই স্ট্যাম্প ভাঙেন বীরেন্দর শেওয়াগ, হরভজন সিং এবং রবিন উথাপ্পা। ফলশ্রুতিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপে নিজেদের অপরাজিত থাকার রেকর্ডটা আরো দীর্ঘায়িত করে ভারত।

  • ফাইনাল, ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, জোহানেসবার্গ

প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল। মুখোমুখি দুই চির প্রতিদ্বন্দী ভারত-পাকিস্তান। ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে বোধহয় এর চেয়ে উত্তেজনার কিছু হতে পারে না। সেদিনের সবকিছু যেন হয়েছিল ডারবানের গ্রুপপর্বের চিত্রনাট্য মেনে।

ভারতের টপঅর্ডারে বাকিরা দ্রুত ফিরলেও একপ্রান্তে অবিচল ছিলেন গৌতম গম্ভীর। তার অনবদ্য ৫১ বলে ৭৫ রানের পাশাপাশি তরুণ রোহিত শর্মার ১৬ বলে ৩০ রানের ঝড়ো ইনিংসে ১৫৭ রানের দারুণ সংগ্রহ পায় ভারত। জবাব দিতে নেমে ইমরান নাজিরের ১৪ বলে ৩৩ রানের ইনিংসে ম্যাচ থেকে একপ্রকার ছিটকে যায় ভারত। কিন্তু হার না মানা ভারতীয়রা ম্যাচে ফিরে আসে দারুণভাবে।

আরপি সিং এবং ইরফান পাঠান দুইজনেই তিনটি করে উইকেট নিয়ে ম্যাচের চিত্রনাট্য বদলে দেন, ৭৭ রানেই ছয় উইকেট হারিয়ে এবার ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় পাকিস্তান। কিন্তু এবারেও তাদের রক্ষাকর্তা মিসবাহ উল হক। শেষ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল তের রান অন্যদিকে ভারতের দরকার ছিল এক উইকেট।

হরভজন সিংকে না এনে ধোনি শেষ ওভারে বোলিংয়ে আনেন অখ্যাত যোগিন্দর শর্মাকে। দ্বিতীয় বলেই ছয় হজম করে ধোনির সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে ফিরলো কিনা সেই প্রশ্ন যখন ঘুরপাক খাচ্ছে ঠিক তখনি মিসবাহর সেই পাগলাটে স্কুপ। শর্ট ফাইন লেগে শ্রীশান্তের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে শিরোপাটাই যেন ভারতকে তুলে দিয়েছিলেন মিসবাহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link